
ডেস্ক রির্পোট:- ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তে চট্টগ্রামে শুনানি করেছেন সরকার গঠিত জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশনের সদস্যরা। চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার দুদিনব্যাপী এ শুনানি চলে। শুনানিতে প্রার্থী, রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট এবং পুলিশ সদস্যসহ মোট ৬০ জন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যের বক্তব্য নেয় তদন্ত কমিশন। শুনানিতে দায়িত্ব পালনকারী অফিসাররা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী) আসনের ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের শুনানি গ্রহণ করা হয়। শুনানিতে ২০২৪ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী) আসনের দায়িত্ব পালনকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ওই সময়ের চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ হাজির হন।
এক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, তদন্ত কমিশনের সদস্যরা সাবেক বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদের কাছে ২০২৪ সালের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কী দায়িত্ব পালন করেছেন তা জানতে চান এবং ভোটের নানা অনিয়ম, কারচুপি বিষয়ে জানতে চান। এ সময় তোফায়েল আহমেদ তার দায়িত্ব তিনি সঠিকভাবে পালন করেছেন বলে জানান। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কোনো ধরনের অনিয়মের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন না বলেও জানান।
শুনানিতে ওই আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম মশিউজ্জামান, ওই আসনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা পাঁচলাইশ থানার সাবেক নির্বাচন কর্মকর্তা জসীম উদ্দিনও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট এবং পুলিশ সদস্যসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য গ্রহণ করেন তদন্ত কমিশনের সদস্যরা। এ সময় গত নির্বাচনগুলোতে দায়িত্ব পালনকারী রিটার্নিং অফিসাররা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন।
তদন্ত কমিশনের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাবেক বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ চলে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, তদন্ত কমিশন আপনার কাছে কী জানতে চেয়েছেন? উত্তরে তিনি বলেন, উনারা (তদন্ত কমিশন) অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করেছেন। যেমন রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কী দায়িত্ব পালন করেছি? ওই সময়ে সরকারের কোনো ধরনের চাপ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০২৪ সালে আমাদের ওপর কোনো ধরনের চাপ ছিল না। আমরা কোনো ধরনের চাপ দেখিনি। ভোট বাড়িয়ে দেয়া বা ব্যালট বঙে ভোট ঢুকিয়ে দেয়ার কোনো চাপ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য কোথাও কি হয়েছে সেটা আমি বলতে পারব না। আমারটা আমি বলতে পারব। আমার আসনে কোথাও কোনো ধরনের ভোট কারচুপি হয়নি। জোর করে কারোর ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল না। আমাকে তো কেউ বলেনি যে ভোট মেরে বঙে ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য। তাহলে আমি সেটা কেন বলব? আমার আসনে তো মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে।
শুনানিতে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থী, দায়িত্ব পালনকারী রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট এবং পুলিশ সদস্যসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশনের সদস্য (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদা) তাজরিয়ান আকরাম হোসেন ও ড. মো. আব্দুল আলীম। তদন্ত কমিশনের আইন ও গবেষণা কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসাইন ও মো. সোয়েবুর রহমান এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আব্দুল মোমিন সরকার শুনানিতে অংশ নেন। দুদিনব্যাপী শুনানিতে তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালকারী কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য, প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং, পোলিং এবং প্রার্থীসহ মোট ৬০ জন ব্যক্তির বক্তব্য নেয় তদন্ত কমিশন।
চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহমেদ বলেন, তদন্ত কমিশনের আজকের শুনানিতে চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী) আসনে ২০২৪ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছেন কমিশনের সদস্যরা। শুনানিতে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তদন্ত কমিশন।
এর আগে তদন্ত কমিশন গত শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রাম–৫ (হাটহাজারী) আসনে ২০১৪ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের শুনানি করেন। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ রফিকুল আলম ছাড়া বাকি কোনো প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন না। তিনি কমিশনের কাছে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ওইদিন দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের নিয়ে শুনানি হয়। শুরুতে রিটার্নিং ও পরে দ্বিতীয় দফায় পুলিশ কর্মকর্তাদের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। দুপুরের শুনানিতে চট্টগ্রাম–১১ (বন্দর–পতেঙ্গা) আসনে দায়িত্ব পালন করা তখনকার পুলিশ কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। দুদিনের শুনানিতে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।