ডেস্ক রির্পোট:- সরকার তার কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। কিন্তু প্রশিক্ষণ সম্পন্ন না করে সম্মানী-ভাতা উত্তোলন, স্বাক্ষর জাল করে প্রশিক্ষণের অর্থ গ্রহণ, বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে অর্থ লোপাট, বেশি প্রশিক্ষণার্থীর অংশগ্রহণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের মতো অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়ে।
সরকার তার কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। কিন্তু প্রশিক্ষণ সম্পন্ন না করে সম্মানী-ভাতা উত্তোলন, স্বাক্ষর জাল করে প্রশিক্ষণের অর্থ গ্রহণ, বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে অর্থ লোপাট, বেশি প্রশিক্ষণার্থীর অংশগ্রহণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের মতো অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে বিভিন্ন সময়ে। অর্থ বিভাগের তথ্য বলছে, গত এক দশকে সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণে বাজেট থেকে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রশিক্ষণে জন্য বিপুল অংকের এ অর্থ ব্যয়ের সুফল দৃশ্যমান নয়।
অর্থ বিভাগের তথ্যানুসারে, ২০১৬-১৭ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণে ১৯ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ হাজার ৩৮৩ কোটি, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৯৩ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২ হাজার ৬৫৬ কোটি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৩২৬ কোটি, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৮৬ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ৯৬৯ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৬৬ কোটি ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে প্রশিক্ষণ বাবদ ৩ হাজার ৬২৫ কোটি টাকার বরাদ্দ ছিল। আলোচ্য অর্থবছরে সরকারের খাতভিত্তিক ব্যয়ের তথ্য এখনো প্রকাশ করা না হলেও প্রশিক্ষণ বাবদ এ সময়ে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হতে পারে বলে জানা গেছে। আর চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে প্রশিক্ষণ ব্যয় বাবদ ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত এক দশকে সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণে অন্তত ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিকে ঘিরে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক ও নিরীক্ষকের (সিএজি) কার্যালয়ের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) আওতাধীন পরিচালক সিভিল এভিয়েশন একাডেমির ঢাকা কার্যালয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে বাস্তবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা না করা সত্ত্বেও প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের সম্মানী ও ভাতা বাবদ ব্যয় দেখানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রশিক্ষণের নামে সরকারের অর্থ অপচয়ের কারণে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা ও তার কমিশনের সদস্যসহ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
কর্মচারীদের প্রশিক্ষণে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এক জনমত জরিপেও বিষয়টি উঠে এসেছে। জরিপে দেড় লাখ মানুষের কাছ থেকে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা, পুলিশ, ভূমি, আয়কর অফিস, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল ও স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত বিষয়ে মতামত নেয়া হয়। প্রাপ্ত মতামত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সরকারি এসব সেবা নিয়ে মানুষের অনেক অভিযোগ রয়েছে। জরিপ অনুসারে, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে শতভাগ সেবাগ্রহীতা অসন্তুষ্ট। ৫০ শতাংশ মানুষের মতে, ঘুস-দুর্নীতি ছাড়া পুলিশের সেবা পাওয়া যায় না। ৮৪ শতাংশ মানুষ জনপ্রশাসন সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন। ৮০ শতাংশ মানুষ মনে করেন দেশের বিদ্যমান প্রশাসন ব্যবস্থা জনবান্ধব নয়। ৬৬ দশমিক ৪ শতাংশ অংশগ্রহণকারী বলেন, সরকারি কর্মচারীরা নাগরিকদের সঙ্গে শাসকের মতো আচরণ করেন। ৯৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে এবং ৪২ শতাংশ মানুষের মতে, বিদ্যমান সব সমস্যার মূলে রয়েছে দুর্নীতি। সরকারি কর্মচারীদের সেবা নিয়ে জনসাধারণের এত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে দেয়া প্রশিক্ষণে কতটা সুফল মিলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে যে সেবা পাওয়া যায় তা দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়। একটি হচ্ছে নিয়মিত কিছু সেবা—যেমন পাসপোর্ট অফিস, বিআরটিএ, রাস্তাঘাট, আদালতে আইনি সেবা, বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স গ্রহণসংক্রান্ত সেবা—যেগুলোর মাধ্যমে জনসাধারণের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের প্রত্যক্ষ সংযোগ ঘটে। এসব সেবার ক্ষেত্রে আমরা প্রতি পদে হয়রানির পাশাপাশি দুর্নীতির চিত্র দেখতে পাই। প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে উন্নয়ন খাতে যে সেবা পাওয়া যায় সেটির ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির কথা বাদ দিয়ে সবচেয়ে ভালো প্রকল্পের ক্ষেত্রেও সময়মতো বাস্তবায়ন না হওয়া এবং বাড়তি অর্থ ব্যয়ের মতো ঘটনা দেখা যায়। ফলে সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ছাপ এ দুই খাতের সেবা প্রাপ্তিতে দৃশ্যমান নয়।’
শুধু প্রশিক্ষণ নয়, সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে কোনো কর্মশালা ও কমিটির সভায় অংশগ্রহণ করলেও সম্মানী প্রদানের রীতি রয়েছে উল্লেখ করে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পরে যে ধরনের সংস্কার ও পরিবর্তনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে সেখানে বেতন-ভাতার বাইরে এ ধরনের খাতে অর্থ ব্যয় পর্যালোচনার দাবি রাখে। এসব প্রশিক্ষণে কর্মচারীদের দক্ষতা কতটা বেড়েছে এবং রাষ্ট্র ও জনগণ কী সুফল পেয়েছে তা পর্যালোচনা করে এ ধরনের প্রশিক্ষণ আগের মতো চলবে নাকি আরো পারফরম্যান্স-ভিত্তিক হবে সেটি বাস্তবায়নের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে।’
সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আরেকটি দুর্বল দিক হচ্ছে তারা যখন যে মন্ত্রণালয়, বিভাগ কিংবা সংস্থায় চাকরিরত থাকেন তখন সে-সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। কিন্তু দেখা যায় প্রশিক্ষণ নেয়ার কিছুদিন পর তারা অন্য মন্ত্রণালয়, দপ্তর কিংবা বিভাগে বদলি হয়ে যাচ্ছেন। এর ফলে প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান তারা কাজে লাগানোর সুযোগ পান না। এ কারণে প্রশিক্ষণের সুফল সেভাবে পাওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতার ঘাটতি ও বদলির প্রবণতার বিষয়টি উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিবেদনেও। ২০২৩ সালে সংস্থাটির একটি কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তাদের দক্ষতার ঘাটতির বিষয়ে এবং বদলির প্রবণতা কমানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের ৯-১০ লাখ কর্মচারী রয়েছে। সে হিসাবে পরিমাণটা (অর্থের) খুব বড় না। দক্ষতার কতটুকু উন্নয়ন হয়েছে সেটা বলতে পারব না। তবে প্রশিক্ষণ না হলে যে আরো খারাপ অবস্থা হতো এটুকু বলতে পারি। অ্যাক্টিভিটি কিংবা প্রোগ্রাম করা না হলে এবং মৌলিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে সরকারি কর্মচারীদের কেউ বুঝতে পারবে না কীভাবে কাজ করতে হয়।’
প্রশিক্ষণ নেয়ার কিছুদিন পরই সরকারি কর্মচারীদের দপ্তর বদল হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণের মূল্য নেই সেটা ঠিক বলা যাবে না। প্রশিক্ষণ নিয়ে কেউ একটি জায়গায় বেশি দিন না থাকলেও তার দক্ষতাটা থেকে যায়। ক্রস কাটিং অনেক অ্যাক্টিভিটি রয়েছে, সেখানে কাজে লাগে। তার পরেও প্রশিক্ষণ নেয়ার পর সংশ্লিষ্ট জায়গায় থাকতে পারলে ভালো।’
বিদেশে প্রশিক্ষণের নামে অর্থ লোপাট, স্বাক্ষর জাল করে প্রশিক্ষণ ভাতা উত্তোলনসহ করোনাকালে লকডাউনের মধ্যে প্রশিক্ষণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনার উদাহরণ রয়েছে। তাছাড়া অবসর গ্রহণের কিছুদিন আগে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের ঘটনাও দেখা যায়। বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকারকে শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে রিফ্রেশার কোর্সে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য ৩০ জন জ্যেষ্ঠ সচিব ও সচিবকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকজন সচিব সে সময় এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে না পেরে পরের অর্থবছরে প্রশিক্ষণের জন্য মনোনীত হন। যদিও তাদের কয়েকজনের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ গ্রহণের আগের ও পরের মাসে অবসর গ্রহণের কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে সমালোচনার মুখে তখন নয়জন সচিবের বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণের আদেশটি বাতিল করা হয়।
যেনতেনভাবে বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সাম্প্রতিক একটি উদাহরণ হচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তিন কর্মকর্তার আসন্ন চীন সফর। এ তিন কর্মকর্তা পাঁচটি নতুন মোবাইল টয়লেট (ভিআইপি) সরবরাহের বিপরীতে এগুলোর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে চীন যাচ্ছেন। আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর কিংবা ছুটি শুরুর তারিখ থেকে সাতদিনের জন্য তারা এ সফর করবেন। অবশ্য এ সফরে সরকারের কোষাগার থেকে কোনো অর্থ ব্যয় হবে না, বরং সব ব্যয় বহন করবে উৎপাদক প্রতিষ্ঠান শ্যাংডং কিউয়ানবাই ইন্টেলিজেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। যদিও ঠিকাদার ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ পরিহারে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিক হাসান বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের চাকরির অংশ প্রশিক্ষণ। এটা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়েই হয়। তবে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশের বাইরে প্রশিক্ষণে আগ্রহী বেশি থাকেন। সেখানে তারা কী করেন, প্রশিক্ষণ শেষে কীভাবে এর প্রয়োগ করেন সেটি আমরা জানতে পারি না। কোনো বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ওই দপ্তরে এর প্রয়োগ করতে না পারলে পুরো প্রশিক্ষণই জলে যায়।’
এ অধ্যাপক আরো বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নেয়ার পর চাকরি থেকে অবসর নিলে সেটি কখনই দেশের কাজে লাগে না। এ ধরনের প্রশিক্ষণে অর্জিত জ্ঞান রাষ্ট্রের কাজে না লাগলেও ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধার হয়। এ ধরনের প্রশিক্ষণ যিনি নিতে যান বিষয়টি সম্পর্কে তিনি নিজেও অবগত থাকেন, আবার যিনি প্রশিক্ষণের অনুমতি দেন তিনিও অবগত থাকেন। অর্থাৎ অনুমতি যিনি দেন তিনিও এ ধরনের কার্যক্রমের দায় এড়াতে পারেন না।’
সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির বিষয়ে বেশকিছু মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তারা কেউ নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে প্রশিক্ষণের বিষয়ে তারা বেশকিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তাদের মতে অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে কোনো রকমে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে প্রশিক্ষকের চেয়ে প্রশিক্ষণার্থী যারা রয়েছেন তাদের যোগ্যতা বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এ রকম প্রশিক্ষণ থেকে কী ধরনের ফল আসবে সেটি সহজেই অনুমেয়। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির চেয়ে সম্মানী ও ভাতা বাবদ আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির বিষয়টিই কর্মচারীদের কাছে প্রাধান্য পায়।
এদিকে সম্প্রতি অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারি কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ভাতা ও সম্মানীর পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। ফলে এ বাবদ সরকারের ব্যয় আরো বাড়বে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগের জারি করা এক পরিপত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীন সব সরকারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আয়োজিত প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারী প্রশিক্ষণার্থীদের দৈনিক প্রশিক্ষণ ভাতা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে গত ১৪ আগস্ট জারি করা অর্থ বিভাগের আরেক পরিপত্রের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণের বক্তাদের সম্মানী ও প্রশিক্ষণ ভাতার হার পুনর্নির্ধারণ করা হয়। এখন থেকে বিষয়ভিত্তিক অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণে যুগ্ম সচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মচারীরা ১ ঘণ্টা ক্লাস নিলে ভাতা পাবেন ৩ হাজার ৬০০ টাকা, যা এতদিন ছিল ২ হাজার ৫০০ টাকা। আর চতুর্থ ও পঞ্চম গ্রেড বা উপসচিব এবং তার নিম্নপর্যায়ের কর্মচারীরা এতদিন পেতেন ২ হাজার টাকা, এখন থেকে পাবেন ৩ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণে এতদিন গ্রেড-৯ থেকে তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মচারীরা প্রতিদিন প্রশিক্ষণ ভাতা পেতেন ৬০০ টাকা। এটিকে বাড়িয়ে ১ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। গ্রেড-১০ থেকে তার নিম্নপর্যায়ের কর্মচারীর প্রতিদিন প্রশিক্ষণ ভাতা ছিল ৫০০ টাকা। সেটিকে এখন বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। একইভাবে কোর্স পরিচালকের সম্মানী প্রতিদিনের জন্য ১ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা, কোর্স সমন্বয়কের সম্মানী ১ হাজার ২০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং সাপোর্ট স্টাফদের সম্মানী ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে।বণিক বার্তা