জীবনরক্ষাকারী ৭৩৯ ওষুধের মূল্য ঠিক করবে সরকার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫
  • ৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- এখন থেকে জীবনরক্ষাকারী ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করবে সরকার। হাইকোর্ট ১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি জারিকৃত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সার্কুলারকে অবৈধ ঘোষণা করে ১৯৯৩ সালের সরকারি গেজেট পুনর্বহাল করেছে। যে সার্কুলারে ৭৩৯টি ওষুধের দাম নির্ধারণ করে সরকার গেজেট জারি করেছিলো। উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, এসব ওষুধের দাম সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে এবং সেটি গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে।
রিটের শুনানি শেষে গতকাল সোমবার বিচারপতি মো: রেজাউল হাসান এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের ডিভিশন বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। রিটের শুনানি করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)র প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
আদেশের বিষয়ে সিনিয়র এ আইনজীবী জানান, ১৯৮২ সালের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশের ১১ ধারা অনুযায়ী ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে ন্যস্ত ছিলো। উক্ত ধারার ভিত্তিতে ১৯৯৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ৭৩৯টি জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু পরের বছর ১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি সার্কুলার জারি করে। সেখানে বলা হয়, মাত্র ১১৭টি ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে। বাকি ওষুধগুলোর দাম নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়া হবে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের হাতে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জন্য জরুরি ওষুধ অনেক ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক দামে বিক্রি শুরু হয়।
এ প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে জনস্বার্থে রিট দায়ের করে সার্কুলার চ্যালেঞ্জ করে এইচআরপিবি। এর আগে প্রাথমিক শুনানিতে বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন এবং বিচারপতি মো: ইকবাল কবিরের তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই রুল জারি করেন।
রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো: রেজাউল হাসান এবং বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের আদালতে তারিখ নির্ধারণ হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে গতকাল উক্ত সার্কুলারকে অবৈধ ঘোষণা করেন।
রিটে বলা হয়, জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সরাসরি নাগরিকদের জীবনের অধিকার ও স্বাস্থ্যসুরক্ষার মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত। সরকার এই নিয়ন্ত্রণ সীমিত করায় উৎপাদনকারীরা ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে সাধারণ মানুষকে শোষণ ও বঞ্চিত করেছে। শুনানিতে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ১৯৮২ সালের অধ্যাদেশে সরকারের হাতে এই ক্ষমতা দেয়া হলেও ১৯৯৪ সালের সার্কুরার সেটি খর্ব করেছে। যা সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
বিবাদী পক্ষ, অর্থাৎ ওষুধ মালিক সমিতির পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এস. কে. মোরশেদ। তারা যুক্তি দেন, এইচআরপিবি এ ধরনের রিট করার বৈধতা রাখে না। তবে বাদীপক্ষ থেকে জবাবে বলা হয়, পূর্বে জনস্বার্থে স্বাস্থ্য খাত সম্পর্কিত একাধিক রিট দায়ের করে রায় পাওয়া গেছে, তাই এই রিটও বৈধ। সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ এজাজ কবির।
আদালত সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জীবনরক্ষাকারী ওষুধের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের ওপর বর্তায়। তাই সরকারের ক্ষমতা সীমিত করার ১৯৯৪ সালের সার্কুলারটি অবৈধ। আদালত নির্দেশ দেন এখন থেকে জীবনরক্ষাকারী সব ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করবে। দাম নির্ধারণের পর তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গেজেট আকারে প্রকাশ করতে হবে। এমনকি স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ওষুধ মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
রিট পিটিশনার ছিলেন এইচআরপিবির পক্ষে অ্যাডভোকেট মো: ছারওয়ার আহাদ চৌধুরী। রিট শুনানিতে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মÐল। স্বাস্থ্য সচিব, ডিজি হেলথ, ডিজি ড্রাগ, ওষুধ মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ জনকে রিটটিতে বিবাদী করা হয়।
উল্লেখ্য, এরই মধ্যে গত ১৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার জীবনরক্ষাকারী ওষুধের নতুন তালিকা প্রণয়নের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। হাইকোর্ট তার রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই নতুন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সব ওষুধের দামও সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions