শিরোনাম
বান্দরবানে ৫ বন্ধু মিলে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণ, আটক-৩ ১৬ বছর পর হারানো ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী নাইজেরিয়ায় ফজরের নামাজের সময় ভয়াবহ হামলায় নিহত অন্তত ২৭ দিল্লিতে শেখ হাসিনার জন্য রাজনৈতিক কার্যালয় গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা ৬২ হাজার ছাড়াল, ১৯ হাজারই শিশু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ১০ লেন করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত,৬২ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোট বাঁধতে পারে যেসব ইসলামী দল খাগড়াছড়িতে কাগজের কার্টুনে নবজাতকের মরদেহ রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বিপদসীমায়: ফের খুলে দেওয়া হচ্ছে জলকপাট রাঙ্গামাটিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠবার্ষিকীতে বর্ণাঢ্য আয়োজন

২৫৪ কোটি টাকার প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদনই জাল

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ আগস্ট, ২০২৫
  • ৭৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মিরপুর-২ ও ৩-এ আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন নকল বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেদনে যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সই ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে, তাও নকল বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এই প্রকল্পে ১৮১টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করার কথা। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ২৫৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করার কথা।

গৃহায়ন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মিরপুর-২-এ কর্মচারীদের জন্য ‘গৃহায়ন কৃষ্ণচূড়া’ প্রকল্পে এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সই ও সিল নকল করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। একইভাবে মিরপুরের সেকশন-৩-এ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন নকল। গত ১৮ মে প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় এ অনিয়ম ধরা পড়ে। গত ২৪ জুন গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাজমুল আলমকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজের টাকায় নিজের জমিতে এই ফ্ল্যাট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে নিজের মতো ফ্ল্যাটের কাজ ও ভাগ করতে নকল সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, গত ১৭ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে এ অনিয়মের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তা চিহ্নিত করা যায়নি। কারণ, প্রকল্প দুটির সমীক্ষা প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে ২০২৩ সালের জুনে। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে ২০২৩ সালের নথিপত্র দেখে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সুপারিশ করা হয়েছে, এখন থেকে গৃহায়নের যে কোনো প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদনের সঙ্গে চেয়ারম্যানকে একটি অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। আরও তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল বাসির বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে কীভাবে সমীক্ষা প্রতিবেদন হলো, সেটা তদন্ত করে দেখছি। তবে গৃহায়নের কর্মচারীরা বলেছেন, সব দপ্তরে বিশেষ সুবিধা আছে, আমরা কেন পাব না? ফলে তাদের জন্য এই ফ্ল্যাট প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে এভাবে আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছিল। তিনি বলেন, এখন কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প না করে কোয়ার্টার প্রকল্প করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া মিরপুর সেকশন-৩-এ প্রকল্পটি নতুনভাবে সমীক্ষা করা হবে।

নকল সমীক্ষা প্রতিবেদনে অভিযুক্ত যারা
২০২৩ সালের নকল সমীক্ষা প্রতিবেদনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন প্রকৌশল ও সমন্বয়, পরিকল্পনা, নকশা ও বিশেষ প্রকল্প উইং এবং ঢাকা ডিভিশন-১-এর কর্মকর্তারা। তৎকালীন গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা, নকশা ও বিশেষ প্রকল্প) ছিলেন বিজয় কুমার মণ্ডল, পরিকল্পনা ও নকশা উইংয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) হারিজুর রহমান, ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সিভিল) মুহাম্মদ জাকির হোসেন এবং ঢাকা ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী তাবিতউন নবী।

অভিযুক্তরা জানান, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। হারিজুর রহমান বর্তমানে ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা ডিভিশন-১ থেকে কিছু না পাঠালে আমরা কিছু করতে পারি না।’ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সুনাম নষ্ট হবে– এ কারণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নাম বলব না।’

তবে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে সাইখ বলেন, ডিভিশন-১ থেকে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি।

তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, নামকরা এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সই ও সিল নকল করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হবে, এ জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির নাম উল্লেখ করা হয়নি।

পরিকল্পনা ও নকশা উইংয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আবু হোরায়রা বলেন, ২০২৩ সালের সমীক্ষা প্রতিবেদন তারা এবার পাঠিয়েছিলেন।

সব কর্মকর্তা কোটায় ফ্ল্যাট পেয়েছেন
গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে লালমাটিয়াতে ৫৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে শুধু কর্মচারীদের জন্য। এরপর মিরপুর-২ নম্বরে কর্মচারীদের ফ্ল্যাট নির্মাণের প্রকল্প করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সিবিএ নেতা ও উচ্চমান সহকারী দেলোয়ার হোসেন দুর্নীতির অভিযোগে ২০২৩ সালের আগস্ট গ্রেপ্তার হন। তারপর এই প্রকল্প আর এগোয়নি। গত বছরের আগস্টের পর কর্মচারীরা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য গত ১৮ মে প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় পাঠানো হয়।

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এ কে এম সামসুদ্দোহা পাটোয়ারী বলেন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রায় সব কর্মকর্তা বিভিন্ন কোটায় ফ্ল্যাট পেয়েছেন। কিন্তু কর্মচারীদের ফ্ল্যাট প্রকল্প কৌশলে আটকে দেওয়া হয়েছে।

১৭ ভাগ ফ্ল্যাট পেয়েছেন গণপূর্তমন্ত্রী
সংস্থাটির গত ১০ বছরে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সব ফ্ল্যাট প্রকল্পে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা কোটা ছিল। প্রকল্প অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগ, বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি), পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত কাঠামো বিভাগের কর্মকর্তারা কোটায় ফ্ল্যাট পেয়েছেন।

নজিরবিহীনভাবে দেওয়া হয় ‘সচিব কোটা’ ও ‘চেয়ারম্যান কোটা’। গণপূর্তমন্ত্রীর জন্য বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৭ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করা হয়। একইভাবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনেক কর্মকর্তা নিয়ম ভেঙে পেয়েছেন একাধিক ফ্ল্যাট। প্রভাবশালী কর্মকর্তারা আত্মীয়স্বজনের নামেও নিয়েছেন ফ্ল্যাট। এজন্য কর্মচারীরা ব্যক্তিগত ফ্ল্যাটের দাবি করেন।

অডিট আপত্তি ৮৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গত জুলাই মাসের এক সভা সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ বছরে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অডিট আপত্তির সংখ্যা ৩৬৫। টাকার পরিমাণ ৮৩ হাজার ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ছয় হাজার টাকা।

অডিট-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে এত টাকার অডিট আপত্তি অবিশ্বাস্য ঘটনা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এই অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।

গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্লট-ফ্ল্যাট হস্তান্তর বা বরাদ্দসহ আয়-ব্যয়ের হিসাব-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমের নিরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত ১২ মে নিরীক্ষা করার এ নির্দেশ দিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা পরিদপ্তরের পরিচালককে চিঠি পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব (প্লট/ফ্ল্যাট হস্তান্তর/বরাদ্দ ইত্যাদিসহ) নিরীক্ষা করতে হবে। তিন মাসের মধ্যে এ নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে বলা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান।

কোটার ফ্ল্যাট বাতিল দাবি
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নাম ভাঙিয়ে নিজেদের কল্যাণে ফ্ল্যাট নিয়েছেন। এ নিয়ম ব্যত্যয়ের জন্য তাদের শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে কোটায় বরাদ্দ সব ফ্ল্যাট বাতিল করে উন্মুক্ত বাজারে ছেড়ে দিতে হবে। এতে কিছু হলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি সরকারের সহযোগিতা পাবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে তারা স্থায়ী চাকরি করতে আসেননি। তাই যেখানে কাজ করবেন কোয়ার্টার পাবেন, ফ্ল্যাট নয়।সমকাল

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions