পাকিস্তানের সঙ্গে স্থগিত, বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন চুক্তি চায় ভারত

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৫৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে ২০২৬ সালে। এর আগেই চুক্তিটির শর্তাবলী পর্যালোচনা ও ভারতের স্বার্থ অনুযায়ী নতুন কাঠামোতে চুক্তি নবায়নের পরিকল্পনা করছে নয়াদিল্লি।

শুক্রবার (২৭ জুন) ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু নদীর পানি চুক্তি বাতিলের পর এবার বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান গঙ্গা চুক্তিতে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে ভারত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, ১৯৯৬ সালের পুরোনো চুক্তির কাঠামো বর্তমান সময়ের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি সম্প্রসারণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও নদীবন্দর ব্যবস্থাপনার মতো নানা কারণে শুষ্ক মৌসুমে ভারতের পানির চাহিদা বহুগুণে বেড়েছে। ফলে, আগের চুক্তির আওতায় নির্ধারিত পানি সরবরাহ দেশটির প্রয়োজন পূরণ করতে পারছে না।

ভারতের পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রতি বছর মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত তারা ফারাক্কা ব্যারাজ থেকে আরও অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি নিতে চায়। তাদের দাবি, বর্তমান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এই বাড়তি পানির প্রাপ্যতা জরুরি।

ফারাক্কা বাঁধ পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলায় অবস্থিত হওয়ায় এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এই নতুন চুক্তির পক্ষে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও একমত। তাদের মতে, এখন যে পরিমাণ পানি দরকার, তা বর্তমান চুক্তির আওতায় পাওয়া সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে ১৯৯৬ সালে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের ডিসেম্বরে চুক্তিটি কার্যকর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে ফারাক্কা ব্যারাজে গঙ্গার পানির প্রবাহ দুই দেশের মধ্যে ভাগাভাগি হবে নির্দিষ্ট সূত্রে।

বিশেষ করে প্রতি বছরের ১১ মার্চ থেকে ১১ মে পর্যন্ত সময়ে দুই দেশ পর্যায়ক্রমে প্রতি ১০ দিন অন্তর অন্তর ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পেয়ে থাকে। তবে ভারত এখন এই সময়কালেই তাদের প্রাপ্যতার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে চায়।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালে ভারত ফারাক্কা ব্যারাজ চালু করে। এর মাধ্যমে গঙ্গা থেকে পানি হুগলি নদীতে সরিয়ে নেওয়া হয়, যাতে কলকাতা বন্দর সচল রাখা যায়। বাংলাদেশের অভিযোগ, এই বাঁধের কারণে পদ্মা নদীতে পানিপ্রবাহ কমে গিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মরুকরণের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। চাষাবাদ, মৎস্য খামার ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ১৯৬০ সালের ইন্দুস চুক্তি কার্যত বাতিল করে দেওয়ার পর ভারতের এই সিদ্ধান্ত দক্ষিণ এশিয়ার পানি কূটনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। বাংলাদেশের মতো ভাটির দেশের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। নতুন চুক্তি হলে সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে কি না, তা নিয়েই এখন আলোচনা।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে দুই দেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) ভবিষ্যৎ বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions