ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে দু’পক্ষই, ক্ষোভ প্রকাশ ট্রাম্পের :: ‘মিনতি’ করেছিলেন ট্রাম্প : ইরান :: কাতারের আমিরের সঙ্গে ফোনালাপ ইরানের প্রেসিডেন্টের :: যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দেয়ার হুঁশিয়ারি ইরানের :: ১২ দিনে অন্তত ৬০৬ ইরানী নিহত :: মোসাদের ৬ গুপ্তচর গ্রেফতার
ডেস্ক রির্পোট:- ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা ও তাতে যুক্তরাষ্ট্রের যোগদানের কারণে গত ১২ দিন ধরে উত্তপ্ত হয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। অবশেষে গতকাল য্দ্ধুবিরতিতে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ। এর মাধ্যমে আরও একবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কা থেকে ফিরে আসল বিশ্ব।
যুদ্ধবিরতির কথা প্রথমে ঘোষণা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল তিনি নিজের ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে দেয়া এক বার্তায় বলেন, ইসরাইল ও ইরান একটি ‘সম্পূর্ণ ও সর্বাত্মক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এ যুদ্ধকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলে নাম দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের ঘোষণায় ধীরে ধীরে উভয় দেশের বৈরিতার অবসানের কথা বলা হয়েছে। তবে তিনি বলেছেন, ‘২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হলে’ এই যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বলে বিবেচিত হবে। পরে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতির কথা জানিয়েছে ইসরাইল সরকার। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হলে ইসরাইল এর কঠোর জবাব দেবে।’ ইসরাইল সরকার জানিয়েছে, ইরানের চালানো হামলায় তাদের লক্ষ্য অর্জিত হওয়ায় তারা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরাইল ‘ইরানের সামরিক নেতৃত্বের ওপর গুরুতর আঘাত হেনেছে এবং ইরানের কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তত কয়েক ডজন লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেছে।’
লঙ্ঘন করেছে দু’পক্ষই, ক্ষোভ প্রকাশ ট্রাম্পের : ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ‘কার্যকর’ আছে বলে জোর দিয়ে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এয়ার ফোর্স ওয়ান-এ রওনা হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করে জানিয়েছেন যে ‘যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে’। ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরাইল ইরানে হামলা করবে না। সব বিমান ঘুরিয়ে তারা দেশের দিকে রওনা হবে এবং ইরানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ ‘প্লেন ওয়েভ’ করবে।’ ‘কেউ আঘাত পাবেন না, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে! এই বিষয়ে মনোযোগের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ!’
যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হওয়ার পর ইরান ও ইসরাইল তা লঙ্ঘন করায় অখুশি ছিলেন তিনি। ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, ইরান ও ইসরাইল দুপক্ষই ঘোষিত যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। তার কথায়, ‘আমি নিশ্চিত নই যে তারা এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে। আজ সকালে ইসরাইল পদক্ষেপ আমার মোটেও ভালো লাগেনি। আমি দেখছি আমি তা বন্ধ করতে পারি কি না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ইরান কখনোই তার পরমাণু সক্ষমতা পুনর্নির্মাণ করবে না।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন তিনি ‘ইরানের ব্যাপারেও খুশি নন।’
‘মিনতি’ করেছিলেন ট্রাম্প : ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন নিউজ চ্যানেল আইআরআইএনএন জানিয়েছে, কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ‘সফল’ হামলার পর এই যুদ্ধবিরতি ইসরাইলের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইরানের হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির জন্য ‘মিনতি’ করেছিলেন এবং এই বিবৃতিটি উপস্থাপক পড়ে শোনান। বিবৃতিতে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বা আইআরজিসি সেনাবাহিনীর প্রশংসা করা হয় এবং ইরানিদের প্রতিরোধকে সম্মানও জানান হয়েছে। কাতারের আমিরের সঙ্গে ফোনালাপ ইরানের প্রেসিডেন্টের : কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বলেছেন যে, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ানের কাছ থেকে একটি ফোন পেয়েছেন যেখানে তারা আল উদেইদে ইরানের আক্রমণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন যে, আমির জোর দিয়ে বলেছেন যে কাতার সর্বদা ‘ভালো প্রতিবেশীর নীতি গ্রহণ করে’ এবং ইরানের কাছ থেকে ‘এ জাতীয় শত্রুতাপূর্ণ আচরণ আশা করেননি’।
তিনি বলেন যে, আমির সম্ভাব্য কূটনৈতিক এবং আইনি প্রতিক্রিয়ার কথা বলেছেন তবে শেখ মোহাম্মদের মতে ‘বিষয়টি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা উচিত এবং আমাদের পিছনে ফেলে দেওয়া উচিত’ বলে জোর দিয়েছেন। তিনি এই অঞ্চলে শত্রুতাকে ‘গাজায় ক্রমবর্ধমান ইসরাইলি আগ্রাসন এবং যুদ্ধাপরাধের চূড়ান্ত প্রতিফলন’ হিসাবেও অভিহিত করেছেন, যা কাতার সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করার জন্য কাজ করছে। ‘এই অঞ্চলে ইসরাইলের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকা- বন্ধ করার জন্য সমগ্র বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে,’ শেখ মোহাম্মদ বলেছেন।
ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা কাউন্সিলের হুঁশিয়ারি : ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, ‘পরবর্তী যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরান একটি সিদ্ধান্তমূলক, দৃঢ় এবং সময়োপযোগী প্রতিক্রিয়া দেখাবে’। বিবৃতিতে কাউন্সিল ইরানি জনগণের ‘সচেতনতা, স্থিতিস্থাপকতা এবং ঐক্য’র প্রশংসা করে বলেছে যে ‘শত্রুদের পরাজয়’ ইরানিদের ‘দৃঢ় সংকল্প, কৌশলগত ধৈর্য এবং অপমান বা একতরফা আপস মেনে নিতে অস্বীকৃতির’ ওপর নির্ভরশীল। বিবৃতিতে ইরান এবং তার বাহিনীর ইরানের ওপর আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে ‘নির্ধারক এবং পরিকল্পিত আঘাত’ প্রদানের জন্যও প্রশংসা করা হয়েছে।
১২ দিনে অন্তত ৬০৬ ইরানী নিহত : ইরানে ইসরাইলের হামলায় গত ১২ দিনে অন্তত ৬০৬ জন নিহত হয়েছে ঘটেছে বলে জানিয়েছে তেহরান। মঙ্গলবার ইরানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমে খবরে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গত ১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় ইরানে কমপক্ষে ৬০৬ জন নিহত হয়েছেন। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ রেজা জাফরগনি বলেন, এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৫ হাজারের বেশি মানুষ। তিনি বলেন, আহতদের মধ্যে অনেকেই চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এছাড়া অনেকে এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ইরানের এই মন্ত্রী বলেন, ইরানে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাণঘাতী হামলা হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। কেবল এই সময়েই ইসরাইলি হামলায় দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০৭ জন।
মোসাদের ৬ গুপ্তচর গ্রেফতার : ইরানের হামাদানে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের ৬ গুপ্তচরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা মেহের। ইরান দাবি করেছে, এই ব্যক্তিরা দেশের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও শত্রুপক্ষের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করছিল। সূত্র : আল-জাজিরা, ডন, বিবিসি, তাসনিম।