যৌথ বাহিনীর অভিযানে খোঁজ মেলেনি এখনো খাগড়াছড়িতে চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থী

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
  • ৪১ দেখা হয়েছে

খাগড়াছড়ি:- বিজু উৎসব থেকে ফেরার পথে খাগড়াছড়িতে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীর সন্ধান মেলেনি তিন দিনেও। তাদের উদ্ধারে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। তবে অন্তত তিনটি স্থানে অভিযান চালিয়েও তাদের উদ্ধার করা যায়নি।

অভিযান সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপহরণকারীরা ক্রমাগত জায়গা পরিবর্তন করছে, যে কারণে অপহৃতদের উদ্ধারে বেগ পেতে হচ্ছে। তবে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বেশ কয়েকটি জায়গায় একযোগে অভিযান চালাচ্ছেন। অপহৃতদের উদ্ধারের ব্যাপারে তারা আশাবাদী।

অপহৃতরা হলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ-পিসিপি চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা ও তার চার বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো ও চারুকলা বিভাগের অলড্রিন ত্রিপুরা। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।

জানা গেছে, এই পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে গিয়েছিলেন। উৎসব শেষে ১৫ এপ্রিল তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে খাগড়াছড়ি সদরে যান। তবে চট্টগ্রামগামী বাসের টিকিট না পাওয়ায় তারা সেদিন খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছু দূরে কুকিছড়া নামক জায়গায় রাতযাপন করেন। পরদিন বুধবার সকালে কুকিছড়া থেকে টমটম গাড়িতে চড়ে খাগড়াছড়ি সদরে ফেরার পথে গিরিফুল নামক স্থানে তারা অপহরণকারীদের কবলে পড়েন। টমটম গাড়ির চালকসহ পাঁচ শিক্ষার্থীকে সেখান থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে টমটম চালককে ছেড়ে দিলেও শিক্ষার্থীদের ছাড়েনি অপহরণকারীরা।

এই অপহরণের জন্য ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপকে দায়ী করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ‘বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে পিসিপি চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা ও তার চার বন্ধুকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়া হয়। ইউপিডিএফ (প্রসীত) এ ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা তাদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। একই সঙ্গে তাদের সুস্থ অবস্থায় মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের অন্যতম জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, ‘অপহরণের সঙ্গে আমাদের সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি আমাদের দল করে না। আমরা শুরু থেকে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতের বিপক্ষে।’

অপহৃত শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে। এ বিষয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ভোর থেকে জেলা সদরের মধুপুর, পানখাইয়া পাড়া, চাবাই সড়ক নোয়াপাড়া এলাকায় অভিযান চালান যৌথ বাহিনীর সদস্যরা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিযান সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ এবং যারা অপহৃত হয়েছে, উভয়ই পার্বত্য এলাকার মানুষ। চাঁদা ও মুক্তিপণের বিষয় থাকতে পারে। আমরা কয়েকটি লোকেশনে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু তারা সময়ে সময়ে লোকেশন চেঞ্জ করায় বেগ পেতে হচ্ছে। এ ছাড়া এলাকাও দুর্গম। তবে আমরা তাদের অক্ষত অবস্থায় উদ্ধারের ব্যাপারে আশাবাদী।’

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘অপহৃত পাঁচজনকে উদ্ধারের জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি। জেলা সদরের মধুপুর, পানখাইয়া পাড়া, চাবাই সড়ক নোয়াপাড়া এলাকায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়েছে। আরও কিছু জায়গায় অভিযান চলছে। যৌথ বাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে।’

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions