শিরোনাম
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দুর্গম পাহাড়ে ব্যতিক্রমী আয়োজন পিলখানা হত্যাকাণ্ড : সাক্ষ্য দিতে শেখ হাসিনাকে ডেকেছে কমিশন সীতাকুণ্ডের গুলিয়াখালী সৈকতে কলেজ শিক্ষার্থীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ চট্টগ্রামে প্রশাসন সামলাচ্ছেন ১৯ নারী রাঙ্গামাটিতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী অহিদকে ভূমিহীনদের সংবর্ধনা রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ থেকে বাঙ্গালী যুবকের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার রাঙ্গামাটিতে ইউপিডিএফ এর গোপন আস্তানার সন্ধান: গোলাবারুদসহ বিপুল সামগ্রী উদ্ধার রাঙ্গামাটিতে ভারতীয় সিগারেট জব্দ, বিএনপির নেতাকর্মীসহ আটক ৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির কমিটি ঘোষণা আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়া ম্যাচের জন্য ব্রাজিলের দল ঘোষণা

উভয় সঙ্কটে এনসিপি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ মার্চ, ২০২৫
  • ২৬ দেখা হয়েছে

‘১০ কোটি টাকা’ ও ‘সংসদ সদস্য’ করার প্রলোভন দেখিয়ে তার দলের ২০ নেতাকর্মীকে এনসিপিতে নেয়া হয়েছে -নুরুল হক নুর :: নুর তার দল বিলুপ্ত করে এনসিপিতে যোগ দিতে চেয়েছেন -হান্নান মাসউদ :: স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে বিশ্বাসীরা আমাদের সাথে থাকবে -আখতার হোসেন

ডেস্ক রির্পোট:- নতুন রাজনৈতিক দল- জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। শুধু তাই নয়, একসময়ের মিত্র দলগুলোর সঙ্গে চলছে টানাপড়েন। চলছে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। বর্তমান এনসিপি নেতাদের একসময় নেতা ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। সেই নুর এবার তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও প্রলোভন দেখিয়ে নেতাকর্মীদের দলে নেয়ার অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে, এনসিপির নেতা হান্নান মাসউদ বলছেন, নুরুল হক নুর তার দল বিলুপ্ত করে নিজেই আমাদের দলে যোগ দিতে চেয়েছেন। এটি অনেকে গুরু-শিষ্যের লড়াই বলে আখ্যায়িত করছেন। অন্যদিকে এনসিপির বর্তমান কমিটিতে ৩০ শতাংশেরও বেশি শিবিরের সাবেক নেতাকর্মী রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাদেরকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। এসব বিষয় নিয়ে এনসিপি এখন উভয় সঙ্কটে পড়েছে।

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ স্লোগানকে ধারণ করে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এনসিপি আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে। এরপর ২ মার্চ ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এনসিপির এই কমিটি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অনেকেই বলছেন, এই কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তার মধ্যে ৩০ শতাংশেরও বেশি ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাকর্মী রয়েছেন। আবার অনেকে এই কমিটিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অনেকে আছেন, এমন অভিযোগ করছেন। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগÑ এ কমিটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধান্য দেয়া হয়েছে। কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। অন্যদিকে, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর অভিযোগ করেছেন, ‘১০ কোটি টাকা’ ও ‘এমপি’ (সংসদ সদস্য) করার প্রলোভন দেখিয়ে তার দলের ২০ নেতাকর্মীকে এনসিপিতে নেয়া হয়েছে। এ ধরনের আরো অনেক অলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে নতুন এই দলকে নিয়ে। তবে এসব সমালোচনার বেশির ভাগই প্রোপাগান্ডা বলে মনে করেন এনসিপি নেতারা। তারা বলেন, নতুন দল হিসেবে আমাদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। তবে উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রোপাগান্ডা কোনোভাবেই কাম্য নয়; বলে তারা মনে করেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ডান-বামের বাইনারির মধ্যে না গিয়ে মধ্যপন্থি দল হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে এনসিপি। স্বাধীনতার মূলমন্ত্রে বিশ্বাসীরা আমাদের সাথে থাকবে এবং নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করবে। বিভিন্ন দল থেকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে কাউকে তাদের দলে নেয়ার বিষয়টি একেবারেই অসত্য। এনসিপি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং আদর্শ নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। আমাদের এই উদ্দেশ্য-আদর্শের সাথে যারা ঐকমত্য পোষণ করেন, কেবল তারাই এ দলের সদস্য হতে পারবেন এবং হবেন।

এনসিপি গঠন প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব পদপ্রত্যাশী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি আলী আহসান জুনায়েদ। এ ছাড়া নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারীও সদস্য সচিব পদের দাবিদার ছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠক করে সমঝোতায় পৌঁছাতে হয়েছে। এক্ষেত্রে জুনায়েদ নিজ থেকে সরে যাওয়ায় সমঝোতা সহজ হয়েছে এবং আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করে নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অনেকে বলছেন, জুনায়েদ অনুসারী অর্থাৎ শিবিরের সাবেক নেতাকর্মী অনেকে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। তবে এ বিষয়টি এনসিপির বিরুদ্ধে একটি উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রোপাগান্ডা বলে মনে করছেন দলের নেতারা।

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আমরা এটিকে অবশ্যই স্বাগত জানাই। তবে উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রোপাগান্ডা কাম্য নয়। সাবেক শিবির বা অন্য কোনো দলের নেতাকর্মী এ দলে নেই। যারা এনসিপির সদস্য তারা সবাই এ দলের আদর্শে বিশ্বাসী।

নতুন রাজনৈতিক দলে শিবিরের অনেক নেতাকর্মী আছেন এ বিষয়টি মানতে নারাজ স্বয়ং ছাত্রশিবিরও। তারা বলছে, ইসলামী ছাত্রশিবির একটি আদর্শবাদী দল। এ দলের কেউ অন্য দলের সদস্য হতে পারে না। শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, ছাত্রশিবিরের আদর্শ যারা ধারণ করেন তারা অন্য কোনো দল করতে পারেন না। এখন কেউ যদি ছাত্রশিবির ত্যাগ করে অন্য দলে যান তাহলে তো আমাদের বলার কিছু নেই। অতীতে এমন তো হয়েছে। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি দল ছেড়ে অন্য দল গঠন করেছেন। তিনি তো আর শিবিরের বা জামায়াতের নন। এরকম কেউ যদি দল ত্যাগ করে অন্য দলে যান তাহলে তাকে তো আর শিবিরের কেউÑ এটি বলা যাবে না।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ঘোষণার পরের দিন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, এই নেতাদের কয়েক জনকে ‘১০ কোটি টাকা’ ও ‘এমপি’ (সংসদ সদস্য) করার প্রলোভন দেখিয়ে এনসিপিতে নেয়া হয়েছে। তবে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন এই অভিযোগকে ‘সর্বৈব মিথ্যা’ বলে অবিহিত করেছেন।

অন্যদিকে নুরের ওই সংবাদ সম্মেলন ও বক্তব্য প্রসঙ্গে গত ২ মার্চ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে কথা বলেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। তিনি বলেন, ‘নুরুল হক নুর নিজেই তার দল বিলুপ্ত করে আমাদের (এনসিপি) সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। আমরা বলেছি, অবশ্যই আদর্শিকভাবে অনেক দিক থেকে আমাদের মিল আছে। কিন্তু আমরা প্রাথমিকভাবে কোনো একটা দল বিলুপ্ত করে আনতে চাইছি না। অনেক ধরনের সমালোচনা হতে পারে। ভবিষ্যতে আমরা একসঙ্গে এক উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে মুভ করতে পারি।

এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সাথেও এনসিপির দূরত্ব বাড়ছে। ইতোমধ্যে বসুন্ধরা এলাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সে এলাকায় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। সারজিস আলমের রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় যাওয়াকে কেন্দ্র করে চিৎকার-চেঁচামেচির একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি পোস্ট করে কেউ কেউ দাবি করছেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ সারজিস আলমকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। ভাইরাল ভিডিওটির ঘটনাটি ঘটেছে ৫ মার্চ রাত ১০টার পরে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির সামনে। ৫ মার্চ রাতে ফেসবুকে বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে ওই ঘটনার একটি ভিডিও পোস্ট করা হচ্ছে। ক্যাপশনে লেখা হচ্ছে, ‘এনসিপিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করার পর সারজিস আলম (বুধবার) এসেছিলেন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার অনুসারীদের নিয়ে শোডাউন দিতে। এ খবর শুনে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি, এআইইউবি (আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশে), আইইউবির (ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ) সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে সারজিসের অনুসারীদের ওপর চড়াও হন। পরে সবার সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে সারজিস তার গাড়িতে উঠে বসুন্ধরা এলাকা থেকে চলে যান। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সারজিসকে বসুন্ধরা এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।’ তবে এ ঘটনার জন্য শাকিল (নর্থ-সাউথের সাবেক শিক্ষার্থী) নামে ছাত্রদলের একজন নেতা জড়িত বলে দাবি করেছেন সারজিস আলম। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটু বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরির জন্য এটি করা হয়েছে। তারা সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ জন ছিল। তাদের মধ্যে তিন-চারজন বাদে বাকিরা শিক্ষার্থীও নয়। অন্যদিকে আমার সঙ্গে চার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক থেকে দেড় শ’ শিক্ষার্থী ছিলেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions