করের আওতায় আসছেন গ্রামের ব্যবসায়ী-শিক্ষক

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৪৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় করজাল বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। এ জন্য গ্রামাঞ্চলের ব্যবসায়ী ও শিক্ষকদের করের আওতায় আনতে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবীসহ সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবীকেও করের আওতায় আনা হবে। পেশাজীবীর মধ্যে যারা কর দেওয়ার মতো আয় করেন কিন্তু দিচ্ছেন না, তাদের তালিকা করতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে তিন দিনের ডিসি সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে অর্থ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত অধিবেশন শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এদিকে আসছে রমজান ও গরমের সময় বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিস, মসজিদ, বাসাবাড়িতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্রের ব্যবহার ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, যেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। রোজার ঈদের আগে এক কোটি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিনামূল্যে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। নিজ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন উপদেষ্টারা।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ডিসিরাই সভায় উত্থাপন করেছেন গ্রামাঞ্চলে ব্যবসায়ীরা অনেক আয় করেন। তবে তারা কর দিচ্ছেন না। তাদের করের আওতায় এনে রাজস্ব বাড়াতে চায় সরকার। এ বিষয়ে এনবিআর এখন উদ্যোগ নেবে। এ ছাড়া শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ; কিন্তু কর দেয় মাত্র ৫ লাখ। মোটকথা, জোর করে করের পরিমাণ না বাড়িয়ে আওতা বাড়ানো হবে। ভ্যাটের মতো পরোক্ষ কর না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ করের পরিমাণ বাড়াতে চায় সরকার।

উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশের চিকিৎসক-আইনজীবীরা নগদ টাকায় ফি নেন। এ জন্য সেবাগ্রহীতাকে কোনো রসিদও দেন না। এ কারণে তাদের করের আওতায় আনা যায় না। এই ফি যদি ডিজিটাল মাধ্যমে দেওয়া হয়, তাহলে একটা রেকর্ড থাকে। বিদেশে এগুলো সব রেকর্ডেড। আইনজীবী বা অন্যান্য পেশার জন্যও এমন ব্যবস্থা করতে হবে। সম্মেলনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়াতে ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।

এসির তাপমাত্রা রাখতে হবে ২৫ ডিগ্রিতে
আসছে রমজান ও গরমে এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি বা তার ওপরে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এ অনুরোধ উপেক্ষা করা হলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন কিংবা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি পর্যবেক্ষণে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দিষ্ট টিম কাজ করবে। কোথাও নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে সে এলাকায় লোডশেডিং হবে।
তিনি বলেন, শীতকালে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৯ হাজার মেগাওয়াট। গ্রীষ্মে সেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার মেগাওয়াট। সেচ যেহেতু খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই একে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেব। তবে এসির যে ব্যবহার, এটা যদি পরিমিত আকারে ব্যবহার করা যায়, তাহলে কয়েক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আসবে আইনের আওতায়

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া গেলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে বের করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল পুনর্গঠন করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। সে অনুযায়ী জেলায় জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই করা হবে। সেখান থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করা হবে। পরবর্তী সময়ে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

তিনি বলেন, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জুলাই যোদ্ধারা ক্যাটেগরি অনুযায়ী এককালীন ও মাসিক ভাতা পাবেন। এ জন্য তিনটি ক্যাটেগরি হচ্ছে। ‘এ’ ক্যাটেগরির যোদ্ধারা এককালীন ৫ লাখ ও মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। ‘বি’ ক্যাটেগরির যোদ্ধারা এককালীন ৩ লাখ ও মাসিক ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। আর ‘সি’ ক্যাটেগরির যোদ্ধারা পুনর্বাসন ও সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, এর পর যে সরকার আসবে, তারাও জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা নিয়ে আসবে। আশা করছি, জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের বিষয়গুলো পরবর্তী সরকারও অগ্রাধিকারে রাখবে। উপদেষ্টা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রমের মালপত্র এখন থেকে স্থানীয় পর্যায়ে সংগ্রহ করা হবে। দ্রুত সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছানো, বিকেন্দ্রীকরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিসিদের তত্ত্বাবধানে ইউএনও এসব মালপত্র কিনবেন। প্রতি উপজেলায় এ খাতে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ইউএনওরা প্রয়োজনে মালপত্র কিনবেন। বর্তমানে ত্রাণসামগ্রী কেন্দ্রীয়ভাবে কেনা হয়।

রমজানে খাদ্যপণ্য দেওয়া হবে সুলভ ও বিনামূল্যে

খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, আগামী মার্চ ও এপ্রিলে ৩ লাখ টন চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। প্রতি কেজি ১৫ টাকা দরে ৩০ কেজি করে তা ৫০ লাখ পরিবারকে দেওয়া হবে। পাশাপাশি ঈদের সময় ১ কোটি পরিবারকে বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। অধিবেশনে উপদেষ্টা রমজান মাসে খাদ্যপণ্য সুলভ ও বিনামূল্যে বিতরণ কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি জানান, রোজায় প্রায় ৭ লাখ টন খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া টিসিবির মাধ্যমে আরও ৫০ হাজার টন করে দুই মাসে বিতরণ করা হবে ১ লাখ টন চাল। ওএমএসের মাধ্যমে ৫০ হাজার টন করে বিতরণ করা হবে আরও ১ লাখ টন।

তিনি বলেন, বিতরণ কার্যক্রম বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ করবে, তবে মূল তদারকি করবেন ডিসিরা। ঢাকা মেট্রোপলিটনে ১২২ কেন্দ্র এবং ৭০টি ট্রাক আছে। খাদ্য বিভাগ, ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবে বিতরণ কার্যক্রম তদারকিতে। ভূমি ব্যবস্থাপনা নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমরা সনাতনী পদ্ধতি থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাচ্ছি। প্রধান উপদেষ্টা চান গোটা দেশ ডিজিটাল ব্যবস্থায় আসুক। পর্যায়ক্রমে মানুষের সমস্যা দূর হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সমঝোতার কারণে বড় দুর্নীতির অভিযোগই হয় না

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. আবদুল মোমেন বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে ঘটে যাওয়া অনেক বড় দুর্নীতির অভিযোগই হয় না, ধামাচাপা দেওয়া হয়। দুর্নীতির খবর যেন ধামাচাপা দেওয়া না হয়। তিনি বলেন, ছোট ছোট দুর্নীতি হলে আমরা আগে খবর পাই। তবে সমঝোতার মাধ্যমে যে দুর্নীতি হয়, সেটির অভিযোগই হয় না। আমাদের আবেদন থাকবে বড় দুর্নীতির খবর যেন গণমাধ্যমে বেশি বেশি আসে। জেলা প্রশাসকরা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, তারা এটি নিয়ে কাজ করবেন। তিনি বলেন, প্রতিটি জেলায় দুদকের কার্যালয় নেই। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি কীভাবে কমাব, সেটাই বড় প্রশ্ন। আমাদের সামনে এ ধরনের সংকটের কথা এসেছে।

তিনি বলেন, দুদক ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ সময় ব্যয় করে পুরাতন দুর্নীতি নিয়ে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, পুরাতন দুর্নীতি নিয়ে ২০ শতাংশ, বর্তমানের দুর্নীতি নিয়ে ৩০ শতাংশ এবং ভবিষ্যতের দুর্নীতি প্রতিরোধ করার জন্য ৫০ শতাংশ সময় ব্যয় করা উচিত। আমরা এই নির্দেশনা আমলে নিয়েছি। ওই নির্দেশনা জেলা প্রশাসকদেরও দিয়েছি। কারণ জেলা প্রশাসক হচ্ছে মাঠ পর্যায়ে প্রধান কর্মকর্তা। ঘটনা যেখানেই ঘটুক, জেলা প্রশাসককেই আগে জানতে চাওয়া হয়। আবার দুর্নীতির প্রসঙ্গ এলে জেলা প্রশাসককেই জবাবদিহি করতে হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির ধারণাসূচক (সিপিআই) প্রতিবেদনের সঙ্গে দুদক একমত কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত আমরা পরীক্ষা করিনি। সিপিআই একটি ম্যাট্রিক্সের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশ করা হয়। ম্যাট্রিক্স নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে এটা ১৮০ দেশ গ্রহণ করে। আমরা এর বাইরে থাকতে পারি না।

বিচার ও নির্বাহী বিভাগের কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিকভাবে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা আলাদা হলেও ব্যবহারিক প্রয়োজনে তাতে নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয় প্রয়োজন।’ ডিসি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিচার বিভাগের প্রধান। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে ডিসিরা সাক্ষাৎ করেন।

আগামী নির্বাচন ভালো হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে ডিসিদের একাত্ম হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেছেন, ১০০ টাকার মধ্যে ৪৬ টাকা উপযুক্ত ভাতাভোগী পান না। এ অবস্থায় ভাতা দেওয়ার জন্য অনলাইন পদ্ধতি করা হবে। আর ভাতা পেতে নতুন করে নিবন্ধনও করতে হবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions