রাজনৈতিক চাপ থেকে নিস্তার চান ডিসিরা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৪৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- একটি রাজনৈতিক শক্তির পতনের পর আরেকটি রাজনৈতিক শক্তি ফিরে এসেছে। আর প্রশাসনকে সব সময় এই রাজনৈতিক শক্তির চাপেই থাকতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন না। এই সরকারকে সফল হতে হলে রাজনৈতিক শক্তির চাপ কমাতে হবে।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বালুমহাল, হাটবাজার ইজারা, সরকারি সম্পত্তি দখলসহ বিভিন্ন খাতে টাকার অবৈধ লেনদেন হয়েছে বড় পরিসরে। স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনসহ সব ক্ষেত্রে করা হয়েছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। ফলে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বে বড় ধাক্কা খেতে হয়েছে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকদের (ডিসি)। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি যেন আর হতে না হয়, সে জন্য আইনের শাসন ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থেকে নিস্তার চান বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিরা। এ জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নীতিমালা প্রণয়ন ও সংস্কার চেয়েছেন তারা।

গতকাল রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তিন দিনের জেলা প্রশাসক সম্মেলনের প্রথম দিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় ডিসিরা এসব বিষয় তুলে ধরেন। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সম্মেলনের মুক্ত আলোচনায় একাধিক বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসি বলেছেন, মাঠ প্রশাসনকে সেবামুখী করতে পেশাগত মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা জরুরি। সংস্কারের আগে সমস্যার মূলে গিয়ে তা সমাধান করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৬ মাস পরও মাঠ প্রশাসন কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ঠিক করতে পারছে না, সেই উত্তর খুঁজতে হবে। এ কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, ন্যায্য দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া এবং মানুষের সব ধরনের সেবা নিশ্চত করা যাবে। আট বিভাগীয় কমিশনার ও ১২ ডিসি মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

প্রায় সব বিভাগীয় কমিশনার বলেন, গত ৫ আগস্টের পর মাঠ প্রশাসন পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে। সব জেলার ডিসি, এসপিসহ অন্য কর্মকর্তারা একে অপরের পরামর্শ নিয়ে কাজ করছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোনো সময় মাঠ প্রশাসনে এমন সমন্বয় ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনেক জেলায় ডিসি-এসপিরা দু’ভাগে বিভক্ত ছিলেন। তবে এখন অনেক ভালো সমন্বয় থাকার পরও রাজনৈতিক শক্তির কারণে মাঠে কাজের গতি কম।

আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে নৌ পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, নদীপথে মাদক চোরাচালান, ডাকাতিসহ নানা অপরাধ হচ্ছে। এসব অপরাধ মোকাবিলার জন্য নৌ পুলিশের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি।

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ তাঁর মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত অধিবেশনে বলেন, ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের সব সময় রাজনৈতিক চাপে থাকতে হয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে চাপমুক্ত কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।

বরিশাল বিভাগের এক ডিসি বলেন, যত্রতত্র বালুমহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ করার পাশাপাশি এক ইঞ্চি জায়গার বালুও যাতে উত্তোলন করা না যায় সে ব্যাপারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ দরকার। যেখানে ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলন হবে, সেখানেও যাতে বৈজ্ঞানিকজ্ঞানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ইজারা পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ জন্য সারাদেশের বালুমহালের একটি তালিকা দ্রুত তৈরি করা প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনার পতনের পর পালিয়ে থাকা প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের নামে ইজারা করা বালুমহালের হাল ধরেছেন বিএনপি নেতারা। বরিশালের বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর বালুমহাল থেকে আদায় করা টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধার সই করা একটি তালিকা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায়ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বালুমহালের হাল ধরেছেন বিএনপি নেতারা।

অর্পিত সম্পত্তি মামলার নির্দিষ্ট সময়সীমা না রাখার প্রস্তাব
অর্পিত সম্পত্তি উদ্ধারের মামলা ১৬০ দিনের মধ্যে শেষ করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বেশির ভাগ মামলা এ সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারেন না ডিসিরা। এ জন্য এই মামলা নিষ্পত্তির সময়সীমা বাড়ানো বা নির্দিষ্ট সময়সীমা না রাখার প্রস্তাব করেছেন একাধিক ডিসি। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, অনেক অর্পিত সম্পত্তি প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাদের দখলে থাকে। তাদের কাছ থেকে এসব সম্পত্তি সহজে উদ্ধার করতে পারে না প্রশাসন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সমকালকে বলেন, অর্পিত সম্পত্তি উদ্ধারের মামলা শেষ করার নির্দিষ্ট সময়সীমা না থাকলে মামলা নিষ্পত্তি করতে আরও বেশি সময় লাগবে। কোনো মামলার ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগলে সেটা স্বাভাবিক নিয়মেই বাড়ানো যাবে। কারণ, সম্প্রতি আপিল বিভাগ এমন একটি মামলা নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় সময় বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের স্বার্থে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা উচিত। তাই সময় বাড়ানো বা না থাকা প্রাসঙ্গিক হবে না।

নিখোঁজ জেলেদের তালিকা প্রকাশে সেল গঠনের দাবি

এক ডিসি বলেন, অনেক জেলে সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে ট্রলারসহ নিখোঁজ হন। নানা জটিলতার কারণে দ্রুত তাদের তালিকা প্রকাশ করা যায় না। এ জন্য একটি সেল গঠন করা প্রয়োজন। এই সেল দ্রুত তাদের তালিকা প্রকাশ করবে।

যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, দেশের বিপুল সংখ্যক জেলে জীবিকার তাগিদে ট্রলারে ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন নদী, সাগর ও গভীর সাগরে যান। সমুদ্র উপকূলের উপজেলাগুলোতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানে। ফলে প্রতি বছরই জেলে এবং ট্রলার নদী ও গভীর সমুদ্রে নিখোঁজ হয়। সংশ্লিষ্ট জেলে প্রায় প্রতি পরিবারের আয়ের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি থাকেন। তাঁর নিখোঁজের ফলে পরিবারে দেখা দেয় অনটন। আইনি জটিলতার কারণে নিখোঁজ জেলেকে সহজে মৃত বা জীবিত ঘোষণা করা যায় না।

ঢাকার ডিসি তানভীর আহমেদ বলেন, রমজানে মানুষকে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করতে হবে। এ জন্য ঢাকা জেলার দুই স্থানে ন্যায্যমূল্যের বাজার স্থাপন করা হবে। কেরানীগঞ্জ ও সাভারের কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনে এ দুটি বাজারে কম দামে বিক্রি করা হবে। চট্টগ্রামের ডিসি ফরিদা খানম বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে। চট্টগ্রামের হালদাসহ সম্ভাবনাময় নদীগুলো খনন করে পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগাতে হবে।

বগুড়ার ডিসি হোসনা আফরোজ বলেন, শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১ হাজার ২০০ বেডের হলেও চিকিৎসক ও জনবল আছে ৫০০ বেডের। এ জন্য এই হাসপাতালের চিকিৎসক ও জনবল দ্রুত বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions