ডেস্ক রির্পোট:- গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য আবুল কাশেম (১৭) মারা গেছে। এ ঘটনায় দায়ীদের বিচার এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল করেছে ছাত্র-জনতা।
গতকাল বুধবার বিকেল ৩টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আবুল কাশেমের। সে গাজীপুরের বোর্ডবাজারের দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার মৃত জামাল হোসেনের ছেলে।
রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে আওয়ামী লীগের বিচার ও রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল করে ছাত্র-জনতা। মিছিলটি শাহবাগে যাওয়ার পর এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সেখানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং জুলাই গণহত্যার জন্য দলটির দায়িত্বশীলদের বিচারের দাবি জানানো হয়।
আবুল কাশেমের জানাজায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র হাসনাত আবদুল্লাহ, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘জাতিসংঘের প্রতিবেদনে হাসিনা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত সেটা প্রকাশিত হয়েছে। ছয় মাস পরেও বিপ্লবীদের শহীদ হওয়ার ঘটনা এ দেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোর জন্য সামগ্রিক ব্যর্থতা। সরকার এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারেনি।
’
তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে শেখ হাসিনা দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে এ দেশকে ভাড়া দিয়ে রেখেছিলেন। ৫ আগস্টের বিজয়ের পর এই ভূখণ্ডের দখল আমরা পেয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে এই ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘এ দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার আর বিন্দুমাত্র অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ যদি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে, তবে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়ে যাব।
সরকারের কাছে আবেদন, আর কোনো নয়ছয় নয়, আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘আমরা জুলাইয়ের একজন সৈনিক বেঁচে থাকলেও আওয়ামী লীগের কবর রচনা করতে লড়াই চালিয়ে যাব। আওয়ামী লীগকে শুধু নিষিদ্ধ করলেই হবে না, যারা বিভিন্নভাবে তাদের পক্ষ নিচ্ছে, প্রত্যেককে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করতে হবে। যদি সরকার তা না করে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা বিপ্লবকে সম্পন্ন করতে সে দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নেবে।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, আহত আবুল কাশেম শহীদ তাজউদ্দীন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন ছিল। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিত্সার জন্য গত শুক্রবার রাত ২টায় ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর শাখার মুখপাত্র বশির আহমেদ বলেন, গত শুক্রবার রাতে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে ডাকাতি হচ্ছে এমন সংবাদ পেয়ে সেখানে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। সেখানে তাঁরা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হন। হামলায় ১৫ জন গুরুতর আহত হয়েছিলেন। এর মধ্যে কয়েকজনকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, হামলার ঘটনায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ২০০ থেকে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সম্প্রতি পুলিশের অভিযানে ১২৯ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘আমাকে নিয়া যাও’ : ‘আমাকে নিয়া যাও, এখানে ভালো লাগছে না’—এটাই আবুল কাশেমের শেষ কথা ছিল বলে জানিয়েছেন তার চাচাতো ভগ্নিপতি সজীব আহমেদ শাহীন। গত মঙ্গলবার বিকেলে শাহীন ঢামেক হাসপাতালের আইসিইউতে কাশেমকে দেখতে গেলে সে এ কথা বলেছিল।
ফুফু নাসিমা আক্তার বলেন, ‘বহুত আক্ষেপ নিয়া ছেলেটা বিদায় নিল। কাশেমের বাবার দুই স্ত্রী ছিল। কাশেমের বয়স যখন চার-পাঁচ, তখন নিরুদ্দেশ হন তার মা রেখা আক্তার। এর পর থেকে দাদি আলেকজানের কাছে কাশেম ও তার দুই ভাই-বোন বড় হয়েছে। চার বছর আগে দাদি ও দুই বছর আগে বাবা মারা গেলে ভাই-বোনেরা এতিম হয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের দিন আত্মহত্যা করে বড় ভাই হাসেম (২৫)। কিছুদিন পর হাসেমের স্ত্রী চলে যায় বাপের বাড়ি। তার পর থেকে ছোট বোন সুরভি (১৩) সৎ বড় ভাইদের সংসারে থাকে। দাদির রেখে যাওয়া বাড়িতে থাকত কাশেম।’