‘যে আন্দোলন’ ছড়িয়ে গেল সবখানে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ৪০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গত বছর জুলাইয়ে আন্দোলন শুরু হয়েছিল বাংলাদেশে। সেই কর্মসূচি ঘিরে সহিংসতা হয়। পরে ওই বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার পতন হয়। এরপর এ আন্দোলন বিশ্বজুড়ে আলোচনা তৈরি করেছে। এ অগ্রগতির জন্য ২০২৪ সালে ব্রিটিশ সাপ্তাহিক ‘দ্য ইকোনমিস্ট’-এর বিবেচনায় বাংলাদেশ বিশ্বের সেরা দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। ওই গণআন্দোলনের পর দেশে দেশে ক্ষমতা ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের তীব্র আন্দোলন তৈরি হয়েছে। কোথাও সরকারের পতন হয়েছে, কোথাও ভিত নড়েছে স্বৈরাচারের। কেউ পালিয়ে গেছেন মিত্রদেশে। কোনো কোনো দেশে বাধ্য হয়ে নীতি বদলিয়েছেন প্রভাবশালী শাসকরা। এসব নিয়ে পুরো পাতার আয়োজন লিখেছেন হুমায়ূন কবির

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০২৪ সালে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। নির্বাচনে জালিয়াতি, দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং নীতি পরিবর্তন ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। প্রশাসনিক সংস্কারের দাবিতেও আন্দোলন হয়। দ্য গ্লোবাল প্রোটেস্ট ট্র্যাকারের তথ্যমতে, ওই বছর সারা বিশ্বে ১৬০টির বেশি বড় আন্দোলন হয়েছে। ৪৫টির বেশি দেশে বিক্ষোভ, সমাবেশ হয়েছে। এতে বাংলাদেশ ও সিরিয়ার সরকারের পতন হয়েছে। জর্জিয়া, ভেনেজুয়েলার মতো কয়েকটি দেশে ক্ষমতার পরিবর্তন না হলেও সেসব দেশের সরকারকে ব্যাপক নাড়া দিয়ে গেছে।

জর্জিয়া: ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যোগ দেওয়ার আলোচনা স্থগিত করায় সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে জর্জিয়ার নাগরিকরা। মূলত গত অক্টোবরে সেদেশে সাধারণ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। এরপর গত ডিসেম্বরে সরকারি ওই সিদ্ধান্তের পর বিক্ষোভ-আন্দোলনে উত্তাল হয়ে পড়েছে জর্জিয়া।

ভেনেজুয়েলা: গত জুলাইয়ের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয় দেশটিতে। সে আন্দোলন সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি।

ফ্রান্স: ইউরোপের দেশটিতে ২৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ডানপন্থি মিশেল বার্নিয়েকে মনোনীত করার প্রতিবাদে গত সেপ্টেম্বরে হাজার হাজার ফরাসি রাজপথে নেমেছিল। ওই মাসে যৌন সহিংসতার প্রতিবাদে গড়ে ওঠা আন্দোলনেও কেঁপেছে ফ্রান্স।

ঘানা: আফ্রিকার এ দেশেও ওই বছর ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে। ভোটার তালিকায় জালিয়াতির অভিযোগে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে ছিল দেশটির সর্বত্র।

সেনেগাল: ওই বছর সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়ে ছিল সেনেগালও। আফ্রিকার এ দেশে বিরোধীদলীয় নেতাকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদ এবং নির্বাচন বিলম্বিত করার অভিযোগে রাজপথ কাঁপিয়েছিল গণতন্ত্রপন্থিরা।

তানজানিয়া: সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বেঁধেছিল এই দেশটিতেও। পূর্ব আফ্রিকায় এ দেশে মূলত বিভিন্ন প্রশাসনিক অঞ্চলের বিলুপ্তির কারণে ওই বিক্ষোভ ছড়িয়েছিল সবখানে।

তিউনিসিয়া: ২০২৪ সালেও বড় ধরনের আন্দোলনের মুখে পড়ে ছিল উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়া। নির্বাচনী বিরোধীদের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে রাস্তায় মেনেছিল প্রতিবাদীরা।

কমোরোস: নির্বাচনে জালিয়াতি, কারচুপির অভিযোগে আন্দোলনের ঢেউ উঠেছিল পূর্ব আফ্রিকার কমোরোসে। তবে তা কঠোর হাতে দমন করে ভারত মহাসাগরের কোলে অবস্থিত সে দেশের সরকার।

ইন্দোনেশিয়া: ভোট নিয়ে নয়ছয়ের অভিযোগে চব্বিশে রাজপথ নেমেছিল ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষার্থীরা, যা নিয়ে কয়েক দফায় আন্দোলন হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে।

মৌরিতানিয়া: উত্তর আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ায়ও নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে কয়েক দফায় আন্দোলন হয়েছে। বিক্ষোভে রাজপথ কাঁপলেও সরকার টলেনি।

মোজাম্বিক: পূর্ব আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে গত অক্টোবরে জাতীয় নির্বাচনে ভোট কারচুপির পর থেকে বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু হয়েছে, যা ক্রমেই ছড়িয়েছে।

রাশিয়া: পরাশক্তি রাশিয়ায় একতরফা নির্বাচন এবং যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ ও প্রতিবাদী কর্মসূচি কয়েক বছর ধরে চলছে। মাঝেমধ্যে আন্দোলন বড় আকার ধারণ করে।

অস্ট্রিয়া: পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে উগ্রপন্থার উত্থানের শঙ্কায় বিক্ষোভ হয়েছে ২০২৪ সালে।

জার্মানি: কয়েক বছর ধরে দফা দফায় বিক্ষোভের মুখে পড়ছে জার্মানি। ইউরোপের শীর্ষ অর্থনীতির দেশটি উগ্রপন্থার উত্থানের আশঙ্কায়ও আন্দোলনে নাজেহাল।

লিথুয়ানিয়া: ইউরোপের এই উন্নত দেশটিতেও সম্প্রতি উগ্রপন্থা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন লোকজন প্রায় বিক্ষোভে নামে।

রোমানিয়া: আফ্রিকার এ দেশটিতেও একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। উগ্রপন্থা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠায় সেখানে মানুষ মাঝেমধ্যে রাস্তায় নামছে।

ক্রোয়েশিয়া: সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে বালকান রাষ্ট্রটিতে কয়েক দফায় আন্দোলন ছড়িয়েছে।

হাঙ্গেরি: ইউরোপের দেশটিতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করা এবং গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২০২৪ সালে আন্দোলন হয়েছে।

আলবেনিয়া: বলকান অঞ্চলের এ রাষ্ট্রে মিডিয়ার স্বাধীনতা হরণ ও গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিল নাগরিকরা।

উগান্ডা: পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির প্রতিবাদে বারবার রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে সমাজকর্মী ও সাধারণ মানুষ।

বলিভিয়া: বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ফৌজদারি মামলা ও তদন্তের মাধ্যমে হয়রানির অভিযোগে বেশ কয়েকবার আন্দোলন করেছে বলিভিয়াবাসী।

তাইওয়ান: সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২০২৪ সালে বেশ কয়েকবার আন্দোলনের মুখে পড়েছে দ্বীপরাষ্ট্রটি।

বতসোয়ানা: সরকারের নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার সংশোধনী নিয়ে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল বতসোয়ানার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা।

স্লোভাকিয়া: ফৌজদারি দণ্ডবিধি পরিবর্তনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়েছে স্লোভাকিয়ায়।

টোগো: সরাসরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান বিলোপ করায় আন্দোলন-প্রতিবাদের মুখে পড়েছিল টোগোর সরকার।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল: যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বিচার দাবিতে সেখানে গত বছর বড় কয়েকটি আন্দোলন হয়েছে।

কেনিয়া: অর্থনৈতিক নীতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশটিতে বড় আন্দোলন করেছিল সাধারণ মানুষ।

নাইজেরিয়া: সরকারি প্রকল্পে প্রশ্নহীন বৈধতার সুযোগ দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল দেশটির নাগরিকরা।

আফগানিস্তান: পেনশন ব্যবস্থা বাতিল ও অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে এশিয়ার দেশটিতে কয়েকবার আন্দোলন হয়েছে।

আর্জেন্টিনা: শিক্ষা বাজেট হ্রাস, পেনশন ব্যবস্থা সংস্কার ও নতুন কঠোর আইন প্রণয়নের প্রতিবাদে তিনবার বিক্ষোভের কবলে পড়ে দেশটির সরকার।

কলম্বিয়া: বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের বিরুদ্ধে কলম্বিয়ায় আন্দোলন হয়েছে।

ফিনল্যান্ড: শ্রম আইন পরিবর্তন করে বিক্ষোভে অচল হয় ইউরোপের এই দেশটি।

পর্তুগাল: আবাসন প্রকল্প নীতির বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল ইউরোপের এই দেশটি।

স্পেন: পর্যটন নীতির কারণে আন্দোলন ছড়িয়েছিল ইউরোপের এই দেশটিতে।

ইউক্রেন: ইউরোপের এই দেশটিতে যুদ্ধবিরোধী ও কৃষিনীতির বিরুদ্ধে কয়েক দফায় আন্দোলন হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া: কৃষক আন্দোলনে ওই বছর বারবার জর্জিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

মেক্সিকো: শ্রমিক আন্দোলনে বারবার থমকে ছিল মেক্সিকোর প্রশাসনিক কার্যক্রম।

গ্রিস: ২০২৪ সালে শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্দোলনে কাবু ছিল গ্রিস।

পেরু: বাসচালকদের আন্দোলন-বিক্ষোভে সারা বছরই উত্তাল ছিল পেরু।

গাম্বিয়া: লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে গাম্বিয়ায় কয়েক দফায় বড় আন্দোলন হয়েছিল।

ইতালি: এলজিবিটিকিউ অধিকার ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ইতালি নাকাল হয়েছিল।

কিরগিজস্তান: একই রকম আন্দোলনের মুখে পড়েছিল কিরগিজস্তান।

সুইজারল্যান্ড: লিঙ্গভিত্তিক সমতার দাবিতে সুইজারল্যান্ডে বড় কয়েকটি বিক্ষোভ হয়েছিল ২০২৪ সালে।

তুরস্ক: নারী অধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো নীতি প্রণয়নের অভিযোগে তুরস্কে বিক্ষোভ করেছিলেন অধিকারকর্মীরা।

ব্রাজিল: নারীর গর্ভপাত সংক্রান্ত একটি বিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছিল হাজার হাজার নারী। ওই বিলে একটি নির্দিষ্ট গর্ভপাতকে হত্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।

বুলগেরিয়া: এলজিবিটিকিউ বিরোধী আইন করায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়েছিল বুলগেরিয়া।

সার্বিয়া: একই রকম আইন করে বড় ধরনের আন্দোলনের মুখে পড়েছিল সার্বিয়া।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions