বিশ্বের মানুষের আশার প্রদীপ ড. মুহাম্মদ ইউনূস

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ১৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বিশ্বে এ মুহূর্তে সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে তিনি একজন। বৈশ্বিক সব সংকটের সমাধানের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন তিনি।
মানুষের কল্যাণে নিবেদিত এ মানুষটি বিশ্বশান্তির দূত। তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। কিন্তু অতি সাদামাটা সাধারণ তাঁর জীবন। এ মুহূর্তে বিশ্বে সবচেয়ে বিজ্ঞজন, সবচেয়ে শান্তিবাদী মানুষ হিসেবে তিনি পরিচিত। কিন্তু তিনি সব সময় নিজেকে রাখেন সংযমী, পরিমিত। ক্লান্তিহীন মানুষটির মুখে হাসি লেগে থাকে সারাক্ষণ। বিশ্বের মানুষের আশার প্রদীপ তিনি। এ মুহূর্তে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার জন্য যে কয়েকজন ব্যক্তির দিকে বিশ্ব তাকিয়ে থাকে তাঁদের মধ্যে তিনি একজন। তার পরও তিনি নির্মোহ। এ মানুষটি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের গর্বের প্রতীক। তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বিশ্ব যখন হিংসা, হানাহানি, দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নানা রকম সংকটে হিমশিম খাচ্ছে, সে সময় তিনি যেন আলোর মশাল জ্বালিয়ে আছেন। তিনি বিশ্বের আলোকবর্তিকা। বাংলাদেশের এক অপার সৌভাগ্য যে, এ বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব, বিশ্বের পথপ্রদর্শক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন বাংলাদেশের হাল ধরেছেন। ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এ পতনের পরপরই ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ৮ আগস্ট তিনি এক সংকটময়, নাজুক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের হাল ধরেছেন। ছয় মাস তিনি বিপরীত স্রোতে সাঁতার কেটেছেন। একটি লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া দেশ তিনি টেনে তোলার নিরন্তর চেষ্টা করছেন। তাঁর সঙ্গে আছে পুরো বিশ্ব। বাংলাদেশকে গত ছয় মাসে তিনি নিয়ে গেছেন অনন্য সম্মানের মর্যাদায়। প্রভাবশালী ইকোনমিস্ট পত্রিকা বাংলাদেশকে ‘কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছে তাঁর জন্যই।

বিশ্ব বদলে দেওয়ার জন্য যেসব স্বপ্নদ্রষ্টা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ড. ইউনূস অন্যতম। ড. ইউনূস শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর ‘থ্রি জিরো’তত্ত্ব সারা বিশ্বকে নিরাপদ, দারিদ্র্যমুক্ত এবং ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য এখন আলোচিত। এটাই এখন বিশ্বশান্তির কার্যকর রোল মডেল। নারীর ক্ষমতায়ন, তারুণ্যের শক্তি কাজে লাগানো, দারিদ্র্যমোচন, কর্মসংস্থান, সামাজিক ব্যবসা এবং ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বকে বদলে দেওয়ার রূপকার তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক ঝুঁকি নিরসনের আন্দোলনের তিনিই পথপ্রদর্শক। দেশে দেশে তাঁর সামাজিক ব্যবসার ধারণা প্রশংসিত হচ্ছে, হচ্ছে জনপ্রিয়। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সামাজিক ব্যবসার তত্ত্বই এখন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে মনে করা হচ্ছে। সামাজিক ব্যবসার সম্প্রসারণ ঘটেছে বিশ্বের দেশে দেশে। আর এ রকম একজন বিরল ব্যক্তিত্ব যে বাংলাদেশের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন তা বাংলাদেশের জন্য চরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। ড. মুহম্মদ ইউনূসের জীবন অধ্যবসায়, জ্ঞাননির্ভর। তিনি শুধু একজন পি ত নন, তাঁর জ্ঞান এবং আবিষ্কারের ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।

তিনি সারা জীবন গবেষণা করেছেন, অনুসন্ধান করেছেন, আবিষ্কার করেছেন। তার প্রয়োগ ঘটিয়ে মানুষের ভাগ্য বদল করেছেন। মেহনতি মানুষ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নের জন্য নিজের জীবন সঁপে দিয়েছেন। এখন বাংলাদেশ তাঁর অভিজ্ঞতায় সিক্ত হচ্ছে। বিশ্বের হতদরিদ্র মানুষের যেমন তিনি আলোর দিশারি, তেমন বাংলাদেশের জন্য তিনি ‘লাইটহাউজ’। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অসাধারণ এ জীবন যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব, মেধাবী, অধ্যবসায় এ মানুষটি আসলে রাজনীতি না করেও মানুষের জন্য উৎসর্গীকৃত এক প্রাণ। তাঁর বেড়ে ওঠা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি সবই মানুষের ভাগ্যবদলের প্রেরণায় পরিচালিত। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি যখন উচ্চশিক্ষার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন, তখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তাঁর জায়গা থেকে কাজ করেছেন, রেখেছেন বিরল অবদান। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশে ফিরে এসে তিনি আরাম-আয়েশের জীবন ত্যাগ করে চলে যান প্রত্যন্ত গ্রামে, সেখানে তিনি দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের পথ খোঁজেন। যখন তিনি খুঁজে পান পথের দিশা সেই জোবরা গ্রামে, তখন তিনি শুরু করেন ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম। এজন্য তাঁকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে এবং নানা রকম নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু একজন মানুষ যদি মেধাবী হন, অধ্যবসায়ী হন এবং তার লক্ষ্য যদি সততায় ভরা থাকে তাহলে সে লক্ষ্য থেকে তাকে কেউ বিচ্যুত করতে পারে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তিল তিল করে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক গড়েছেন। একসময় এ ব্যাংক দেশের প্রান্তিক দরিদ্র মানুষের চেহারা পাল্টে দিয়েছে। হতদরিদ্র মানুষ যাদের জীবনে কোনো স্বপ্ন ছিল না, যারা দুই বেলা দুই মুঠো খেতে পারত না, তাদের তিনি স্বাবলম্বী করেছেন, আত্মনির্ভর করেছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে তারা নিজেদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। তাদের সন্তানসন্ততিদের লেখাপড়ার সুযোগ হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংক শুধু একটি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প নয়, এটি সমাজ বদলে দেওয়ার এক অসাধারণ শান্তির আন্দোলন।

এ কথা তো আমরা সবাই জানি, দারিদ্র্যের কোনো দেশ নেই। দারিদ্র্যের কোনো ভাষা নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাই তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দিয়েছেন সারা বিশ্বে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরকানসাস থেকে শুরু করে আফ্রিকা, জাপান, ইউরোপ, এমনকি ভারতেও ক্ষুদ্রঋণের বিস্তার হয়েছে। বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংক অনন্য অনুকরণীয় মডেল। এ ক্ষুদ্রঋণের কারণেই আজ প্রান্তিক মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে। না হলে দারিদ্র্যের শৃঙ্খল থেকে বাংলাদেশের মুক্তি হতো না। এ বিশ্বে কতগুলো দুর্ভিক্ষ হতো কে জানে। আর এ কারণেই ড. মুহম্মদ ইউনূসকে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু এর আগেই ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বে একজন আলোচিত, প্রশংসিত এবং দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্ভাবনী ধারণা বাস্তবায়নের জন্য ১৯৮৪ সালে এশিয়ার নোবেল হিসেবে পরিচিত ‘র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার’ পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়নে তাঁর ক্ষুদ্রঋণ মডেলের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এখানে বলে রাখা ভালো, গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পিছিয়ে পড়া নারীদের মালিকানা প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে কর্মসংস্থানে নারীর অংশগ্রহণ শুধু বাড়েনি, তাদের ক্ষমতায়ন ঘটেছে এবং বাংলাদেশে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে এক নীরব বিপ্লব করেছে গ্রামীণ ব্যাংক ও ড. ইউনূস। গ্রামীণ ব্যাংক এ দেশে নারী জাগরণের পথিকৃৎ প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৭ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অবদানকে স্বীকৃতি দেয় এবং তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। এ স্বাধীনতা পুরস্কারের মাধ্যমে ড. ইউনূস যতটা না সম্মানিত হয়েছেন, তার চেয়ে সম্মানিত হয়েছে স্বাধীনতা পুরস্কার। কিন্তু এ দেশে ঘৃণ্য রাজনৈতিক চক্রান্তে তাঁকে অপমান-অপদস্থ করা হয়েছে। দাঁড় করানো হয়েছিল খাঁচার কাঠগড়ায়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্ব নানাভাবে মূল্যায়ন করে। বিশ্ব মানবকল্যাণে তাঁর অবদান বহুমাত্রিক। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের জন্য তিনি ‘নেশন বিল্ডার’ হিসেবে ভূষিত হয়েছেন। গণ অভ্যুত্থানের পর বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি এ নেশন বিল্ডার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। গত ৭ ডিসেম্বর বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’ এ উপাধি দিয়েছে। নেচারের সেরা ১০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় ৭ নম্বরে রাখা হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। ২০২৪ সালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখা ব্যক্তিত্বদের এ খেতাব দেওয়া হয়। এ নেশন বিল্ডার খেতাব নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের অর্জন। এ ছাড়া সম্প্রতি বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে জায়গা পেয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের প্রভাব ও অবদান পর্যালোচনা করে প্রকাশিত হয় ‘দ্য মুসলিম ৫০০ : দ্য ওয়ার্ল্ডস ৫০০ মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস’। এ তালিকায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম আছে ৫০ নম্বরে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মক্ষেত্রের মূল জায়গা মানবকল্যাণ। মানবকল্যাণের সব শাখাতেই তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি একদিকে যেমন নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর অধিকারের লড়াইয়ে অগ্রযোদ্ধা, অন্যদিকে তারুণ্যের জন্য পৃথিবী বিনির্মাণে তিনিই বিশ্বের প্রধান কণ্ঠস্বর। তিনি নারী জাগরণের জন্য কাজ করছেন বিশ্বজুড়ে। তিনি তারুণ্যের জয়গাথা গেয়েছেন, তারুণ্যের নেতৃত্বের কথা বলেছেন। বাংলাদেশে যার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। তিনি তারুণ্যের শক্তিতে বিশ্বাস করেন। তরুণরাই যে বিশ্ব বদলে দিতে পারে এ ভাবনায় তিনি জাগরিত। সে ভাবনার কারণে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ক্রীড়া এবং সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন। আর এ কারণে তিনি স্বীকৃতিও পেয়েছেন। ক্রীড়াজগতে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতির জন্য ২০২৩ সালে ওয়ার্ল্ড ফুটবল সামিটের (ডব্লিউএফএস) আজীবন সম্মাননা পুরস্কার পান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই বছর ১১ ডিসেম্বর সৌদি আরবের জেদ্দায় এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। তারুণ্যের জয়গানের জন্যই তিনি বিশ্ব ক্রীড়ার ক্ষেত্রগুলোয় নিজেকে সব সময় সম্পৃক্ত রাখেন। আর বিশ্ব তাঁর প্রজ্ঞা, জ্ঞান গ্রহণ করে তাঁর অভিজ্ঞতায় সিক্ত হয়ে আলোকিত হয়, বিকশিত হয়। ২০২১ সালে অলিম্পিকে তিনি ‘অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও শান্তিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য অলিম্পিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জাপানের রাজধানী টোকিওতে অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের ‘চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেঞ্জ’ পুরস্কার পেয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিউইয়র্কে আয়োজিত ‘উই দ্য পিপলস’ অনুষ্ঠানে তাঁকে এ সম্মানে ভূষিত করা হয়। আর গর্বের বিষয় হলো যৌথভাবে এ পুরস্কার পেয়েছেন বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. এনগোজি ওকনজো-ইওয়েইলা। বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ এবং নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য ২০১৯ সালে তিনি পান ‘গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’। তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গৌরবময় যে সম্মান বয়ে নিয়ে এসেছেন সেটি ২০০৯ সালে। ‘প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম’-এর মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে অনন্য মর্যাদা এনে দিয়েছেন। আমাদের নিশ্চয়ই মনে থাকার কথা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হয়েছিল তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের স্বাধীনতা মেনে নিতে চায়নি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পরও হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। আর সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনি সর্বোচ্চ সম্মান পান। এটি বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট অর্জন। প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডমের মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেন। এর ফলে বাংলাদেশ সম্মানিত হয়। দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রামরত একটি দেশের একজন ব্যক্তিত্বের এ বিশাল অর্জন আসলে বাংলাদেশকেই সম্মানিত করেছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর কর্মজীবনের শুরু থেকেই উদ্ভাবনী প্রাণশক্তিতে ভরপুর। সাধারণ মানুষের চিন্তার পরিধি যেখানে শেষ, সেখানেই যেন ড. ইউনূসের ভাবনা শুরু। আর এ কারণেই সারা বিশ্ব তাঁর অবদানকে একের পর এক স্বীকৃতি দিয়েছে। এসব স্বীকৃতি তাঁকে আরও প্রাণশক্তি দিয়েছে, দিয়েছে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উৎসাহ। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যত আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি পেয়েছেন পৃথিবীর খুব কম মানুষই এত সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। ১৯৮৯ সালে দারিদ্র্যবিমোচন এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তিনি পান ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড’।

১৯৯৩ সালে তিনি কেয়ার পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৯৪ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি পান ‘বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার’। যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে দেয় পিফার শান্তি পুরস্কার। ১৯৯৫ সালে সুইজারল্যান্ড তাঁকে ‘ম্যাক্স সছমিধেইনি ফাউন্ডেশন ফ্রিডম পুরস্কার’ প্রদান করে। আর ১৯৯৬ সালে তিনি পান ‘আন্তর্জাতিক সাইমন বলিভার পুরস্কার’। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যানডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় বিশিষ্ট অ্যালামনাই হিসেবে তাঁকে পুরস্কার দেয়। ১৯৯৭ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওয়ান ইয়ং ওয়ার্ল্ড সম্মেলন, জুরিখে সম্মানিত হন। একই বছরে পান আন্তর্জাতিক অ্যাকটিভিস্ট পুরস্কার। তাঁর গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ ধারণার জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে জার্মানির প্লানেটরি কনশিয়াশনেস বিজনেস ইনোভেশন পুরস্কার পান। নরওয়ে তাঁকে ‘হেলপ ফর সেলফ হেলপ’ পুরস্কারে ভূষিত করে একই বছরে। ইতালি থেকে তিনি পান শান্তি মানব (ম্যান ফর পিস অ্যাওয়ার্ড) আর যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে দেয় বিশ্ব ফোরাম পুরস্কার।

জ্ঞান, গবেষণার ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটিয়ে বিশ্বকে বদলে দেওয়া মানুষেরা হন ক্ষণজন্মা। বিশ্ব ইতিহাসে এ ধরনের মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস তেমনি এক ব্যক্তি। এটা বাংলাদেশের বিরল সৌভাগ্য যে, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণের নেতা তিনি। তাঁর হাতেই বাংলাদেশ বিশ্বে জায়গা করে নেবে নতুন পরিচয়ে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions