রুটিন কাজেও যেতে চাইছে না পুলিশ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ৭ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রিরোট:- জধানীর উপকণ্ঠের একটি থানার ওসি আলাপকালে কালবেলাকে বলেন, ‘মানুষের মধ্য থেকে পুলিশের ভয় কেটে গেছে। তুচ্ছ কারণেও মানুষ পুলিশের ওপর আক্রমণাত্মক আচরণ করে। ফলে দারোগারা (এসআই) টহলে যেতে চান না। বিশেষ করে গভীর রাতে দারোগাদের বকাঝকা করে এমনকি শাস্তির ভয় দেখিয়েও টহলে পাঠানো যায় না। আর পুলিশ টহলে না গেলে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হবে কী করে?’

চট্টগ্রাম রেঞ্জে কর্মরত এক পুলিশ পরিদর্শক বলেন, ‘৫ আগস্ট বা তার আগে জুলাই আন্দোলনে যেসব পুলিশ সদস্য মারা গেছেন বা আহত হয়েছেন, ওইসব ঘটনায় মামলা হয়নি; আমরা সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু চট্টগ্রামের একজন ওসিকে দিনদুপুরে শত শত মানুষের সামনে প্রকাশ্যে হামলা করে মারধর করা হলো, সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হলো, অথচ কারও বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হয়নি। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভিকটিম ওই পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে দেখতেও যাননি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা

এভাবে রাজধানী ও রাজধানীর বাইরে বেশকিছু থানার ওসি, এসআইসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ‘পুলিশ এখনো নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ফলে তারা টহল ও তল্লাশিতে যেতে অনীহা প্রকাশ করছে। মামলার তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তার অভিযানে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না তারা। আবার অনীহা আদালতে সাক্ষ্য দিতে। অনেকে নানা অজুহাতে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাচ্ছেন না। বিশেষ করে যারা গত ১৫ বছরে বিভিন্ন থানায় কর্মরত ছিলেন, তারা ওই এলাকায় সাক্ষ্য দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এতে করে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে রুটিন পুলিশিংয়েও। যার সুযোগ নিচ্ছে নানা শ্রেণির অপরাধী চক্র।’

এক পরিদর্শক বলেন, ‘এসআই ও ইন্সপেক্টরদের অনেকেই ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত’ নয় বিধায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাবেন না বলে অনেকটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছেন। এ ক্ষেত্রে যদি চাকরির ঝুঁকি থাকে, তাও তারা নিজ নিজ অবস্থানে অনড়। বিশেষ করে গত ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানা এলাকায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি নেজাম উদ্দিনকে বেধড়ক মারধরের পর কোনো ধরনের আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টি মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের চরমভাবে হতাশ করেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হাতে পুলিশ লাঞ্ছিত হয়েছে। সেগুলোরও বিচার হয়নি বলে তারা অভিযোগ করেছেন।’

গত ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামে পুলিশ পরিদর্শক নেজাম উদ্দিনের ওপর বর্বরোচিত হামলার পর তীব্র ক্ষোভ জানায় নন-ক্যাডার পুলিশদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন। তারা ওই হামলার বিষয়টি ‘পুলিশ বাহিনীর মনোবলের ওপর বড় আঘাত’ হিসেবে অ্যাখ্যা দেন। সংগঠনের সভাপতি কামরুল হাসান তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হকের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘নেজাম উদ্দিনের শার্টের কলার ধরে টেনেহিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলা এবং চড়থাপ্পড় ও কিল-ঘুসি মারার ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মনে গভীর বেদনা তৈরি হয়েছে। একজন পুলিশ অফিসারকে এভাবে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত ও মারধর করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া দণ্ডনীয় এবং ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য।’ ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা সব নাগরিককে আহ্বান জানাচ্ছি, আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে যে কোনো অসন্তোষ বা অভিযোগের ক্ষেত্রে আইনানুগ পদ্ধতি অনুসরণ করুন। এ ধরনের ঘটনা সরকারি কর্মচারীদের মনোবল ও কর্মস্পৃহা নষ্ট করে এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।’

ওসি নিজামকে মারধরের ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তবে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের দায়িত্বশীল এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘ভিকটিম নেজাম উদ্দিন কোনো মামলা করতে না চাওয়ায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তিনি মামলা করতে চাইলে আমরা এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেব।’ কিন্তু অন্যরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি পক্ষ মামলা না নিতে চাপ প্রয়োগ করেছিল, যার ফলে নেজাম উদ্দিন মামলা করতে পারেননি।’

পুলিশের প্রতি জনসাধারণের আস্থাহীনতার কথা উল্লেখ করে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার পেশ করা পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও পুলিশের ওপর জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতাকে হত্যা ও আহত করার ঘটনায় দোষী পুলিশ সদস্য এবং তাদের নির্দেশদাতাদের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এটি কেবল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই নয় বরং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার এবং পুলিশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গঠনের জন্য অপরিহার্য। গণঅভ্যুত্থানের সময় ঘটে যাওয়া সহিংসতা জনগণের মনে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও অবিশ্বাস তৈরি করেছে। যা দীর্ঘমেয়াদে পুলিশ-জনসম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের বৈধতা দেওয়ার সমান হবে, যা ভবিষ্যতে আরও ‘দমনমূলক আচরণ’-এর পথ প্রশস্ত করতে পারে। সঠিক বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে, যা পুলিশ বাহিনীর মধ্যে দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরি করবে। একই সঙ্গে এই পদক্ষেপ জনগণের কাছে একটি বার্তা দেবে যে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে এবং অন্যায় প্রতিরোধ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি পুলিশকে সত্যিকার অর্থে জনবান্ধব হয়ে উঠতে সহায়তা করবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের পুলিশিং মডেল অনুসরণ করা হলে অপরাধ দমন এবং প্রতিরোধে পুলিশের দক্ষতা সম্ভব। এর মাধ্যমে জনগণের কাছে পুলিশের সেবার মান উন্নত করতে হবে। জরুরি সেবার প্রতিক্রিয়া সময় হ্রাস করা এবং পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। সদস্যদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করা এবং তাদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

পুলিশের কর্মস্পৃহা ফেরানোর উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশে যেন আর রাজনৈতিক প্রভাব না পড়ে, সেজন্য পুলিশ রিফর্মের কাজ চলছে। এখনো অনেক পুলিশ সদস্য ‘মনভাঙা’ অবস্থায় আছে। ভয়ে-আতঙ্কে তাদের মন ভেঙে গেছে। গণঅভ্যুত্থানে সিনিয়র পুলিশ সদস্যরা জুনিয়রদের হুকুম দিয়ে তাদের অনিরাপদ রেখে পালিয়ে গেছে। বর্তমানে পুলিশ ফোর্সকে জাগিয়ে তোলা বা কর্মস্পৃহা ফিরিয়ে আনা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি।

পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনআস্থা ফেরাতে করণীয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মতিউর রহমান শেখ বলেন, ‘পুলিশকে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। পুলিশের মনোবল সুদৃঢ় করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসিকভাবে উজ্জীবিত করতে হবে। পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের কাজ করছে। এতে পুলিশের মনোবল সুদৃঢ় ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে।’

নন-ক্যাডার পুলিশ সদস্যদের সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান তালুকদার বলেন, ‘পুলিশ সদস্যরা মামলার তদন্তে যাওয়া বা সাক্ষ্য দিতে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনিরাপদ বোধ করলে তারা যাতে আমাদের জানায়। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করব। আমরা পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন থেকে বলতে চাই, কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক (নন-ক্যাডার পুলিশ) আমরা সব সদস্যের পাশে আছি। আপনার কেউ ভয় পাবেন না। আমরা জনগণের সেবক—এই কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। মামলার তদন্ত করতে হবে, আসামি ধরতে যেতে হবে। টহলে যেতে হবে। তল্লাশি চৌকি পরিচালনা করতে হবে। মামলার সাক্ষ্য দিতে আদালতে যেতে হবে, সাক্ষ্য দিতে হবে। এগুলো আমাদের মৌলিক রুটিন কাজ। যখনই কোনো সমস্যা দেখবেন, দ্রুত সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানান; আমাদের জানান। সব ক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করে তাদের আস্থায় নিয়ে কাজ করতে হবে।’

কামরুল হাসান তালুকদার আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামের পাঁচলাইশসহ যেসব জায়গায় পুলিশ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছে, সেখানে দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে বহিষ্কার আদেশসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই। যারাই পুলিশের ওপর হামলা করবে বা লাঞ্ছিত করবে, তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর কঠোর ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে কেউ পুলিশকে আক্রমণ করার সাহস পাবে না।’

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, ‘৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। সে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু ব্যবস্থাগুলো পর্যাপ্ত না হওয়ায় জনমনে যেমন স্বস্তি ফিরছে না, তেমনি পুলিশ নিজেও স্বস্তি পাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটনকালে পুলিশ ডাকলে তাদের পাওয়া যায় না। পুলিশের আতঙ্ক দূর করে পুলিশের সার্ভিল্যান্স বাড়াতে হবে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘৫ আগস্ট-পূর্ববর্তী সময়ে অনেকটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। এজন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা ক্ষমা চাওয়া ও দুঃখ প্রকাশ করাসহ নানাভাবে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এতে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মনোবল সুদৃঢ় হবে। মানুষ পুলিশের ওই সময়কার বিতর্কিত ভূমিকাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। এতে জনআস্থা বাড়বে। পুলিশের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে পুলিশ ছাড়া আমরা চলতে পারব না। পুলিশ যদি নিজেরাই নিজেদের অনিরাপদ ভাবে, পরিবর্তিত পরিস্থিতি বা সংকটের কথা বলে মাসের পর মাস মানুষকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রাখে, তাহলে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের যেভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা ছিল, তা হয়নি। এর অন্যতম কারণ গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে অনেক পুলিশ সদস্য নৈতিক ও মনোবল সংকটে পড়েছে। তাদের কর্মকাণ্ড সমালোচিত ও বিতর্কিত হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা অভিযুক্ত শ্রেণিতে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে। তাই এই পরিস্থিতি এত দ্রুত স্বাভাবিক হবে না। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে ভালো কাজের মাধ্যমে পুলিশকেই তাদের বিরুদ্ধ ওঠা অভিযোগ ও বিতর্কের অবসান ঘটাতে হবে। জনআস্থা ফেরাতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের জন্য যেসব কর্মকাণ্ড গ্রহণ করা উচিত ছিল, সেটা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এখন পুলিশ নিজেরাই ঝুঁকিতে পড়ে আছে। আক্রান্ত হচ্ছে, তিরস্কারের মধ্যে পড়েছে। যার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধী চক্র। তারা মনে করে, এখন অপরাধ করলে মামলা হতে পারে; আবার নাও হতে পারে। মামলা হলেও গ্রেপ্তার হবে না বা গ্রেপ্তার হলেও পার পেয়ে যাবে। এ ধরনের অনেকগুলো বহুমুখী বাস্তবতা রয়েছে, যা কেটে ওঠা অনেকটা সময়সাপেক্ষ বিষয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে যে ধরনের যোগসূত্র বা বোঝাপড়া থাকার প্রয়োজন ছিল, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেটা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। যাকে যে দায়িত্বের জন্য পদায়ণ করা হচ্ছে, তিনি সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারছেন না। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না। এতে করে মাঠ পুলিশের মধ্যেও অস্থিরতা কমছে না।’

এই সমাজ বিজ্ঞানী বলেন, ‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনদের মধ্যে বোঝাপড়ার ঘাটতি দূর করতে হবে। থানা থেকে অস্ত্র লুট হয়েছে, থানায় আগুন দেওয়া হয়েছে; জুলাই বিপ্লবে অনেক নিরীহ পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ মানতে গিয়ে আহত-নিহত হয়েছে। সেগুলো নিয়ে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ বিষয়টি মাঠ পুলিশকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তারা সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে মুখে কিছু বলতে পারছে না। তবে বিষয়গুলো তাদের মধ্যে হতাশা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের একটি সংস্কৃতি হচ্ছে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দায় নিতে চায় না। এই প্রবণতাগুলো পুলিশের স্বাভাবিক কার্যক্রম যেমন মামলার তদন্ত, আসামি গ্রেপ্তার, টহল ও তল্লাশি, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া এসব স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। যার ভুক্তভোগী হচ্ছে আইন মান্যকারী সাধারণ মানুষ।কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions