ডেস্ক রির্পোট:- একের পর এক বিতর্ক, মামলায় দোষী সাব্যস্ত, দু’বার হত্যাচেষ্টাসহ অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় দুপুরে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটলে এ শপথ অনুষ্ঠান হয়। শপথ গ্রহণের পর দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প জানান, তাঁর লক্ষ্য শান্তি স্থাপন ও ঐক্য প্রতিষ্ঠা। এ সময় তিনি গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে জো বাইডেন, বিল ক্লিনটনসহ কক্ষে থাকা সবাই দাঁড়িয়ে ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানান।
ভাষণের শুরুতেই ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন থেকে সোনালি যুগে প্রবেশ করল। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে আমাদের দেশ উন্নতির পথে যাত্রা করবে; বিশ্বব্যাপী আবারও সম্মানিত হবে। বিশ্বের প্রতিটি দেশের ঈর্ষার কারণ হবো আমরা। আর কখনও জাতি হিসেবে আমরা নিজেদের প্রতারণার শিকার হতে দেবো না। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে এমন একটি দেশ গঠন, যারা গর্বিত, সমৃদ্ধ ও স্বাধীন। যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত আগের চেয়ে আরও মহান, শক্তিশালী ও অনন্য হয়ে উঠবে।’
অভিষেকের আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বড় ভূমিকা রেখে বিশ্বের নজর কেড়েছিলেন ট্রাম্প। আবার দেশের অভ্যন্তরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়ে সমালোচিতও হচ্ছেন। সব মিলিয়ে সাড়া জাগিয়েই দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরলেন ট্রাম্প।
প্রথম মেয়াদে দু’বার অভিশংসনের মুখে পড়েন এ রিপাবলিকান নেতা। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে যে হামলা হয়, তাতে তাঁর ইন্ধন ছিল বলে অভিযোগ। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে নির্বাচিত হওয়া মার্কিন ইতিহাসে প্রথম প্রেসিডেন্ট তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে করা বেশ কিছু মামলা এখনও বিচারাধীন। সব মিলিয়ে ট্রাম্প এভাবে ফিরবেন– এমনটা অনেকেই হয়তো ভাবেননি। এ প্রত্যাবর্তন রূপকথার মতোই।
প্রথা অনুযায়ী ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম লনে নতুন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠান হলেও তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৬ ডিগ্রি নিচে থাকায় এবার তা ছাদের নিচে হয়েছে। স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে আমন্ত্রণ জানান। রীতি অনুযায়ী হবু প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিনি চা পান করেন। এ সময় জিল বাইডেনও উপস্থিত ছিলেন। শপথের আগে ট্রাম্প ও জো বাইডেন একসঙ্গে একটি লিমুজিনে চড়ে হোয়াইট হাউস থেকে ক্যাপিটল হিলে পৌঁছান। দুপুর ১২টায় ক্যাপিটল রোটুন্ডায় অনুষ্ঠানে শপথ নেন ট্রাম্প। এর পর তিনি উদ্বোধনী ভাষণ দেন।
শুরুতে সাবেক প্রেসিডেন্টদের ধন্যবাদ জানান ট্রাম্প। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিল ক্লিনটন, বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন, জো বাইডেন, কমলা হ্যারিসসহ অনেকে। ছিলেন ফার্স্ট লেডিরাও। ট্রাম্পের সন্তান ইভানকা ট্রাম্প, ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র, টিফানি ট্রাম্প, এরিক ট্রাম্প ও ব্যারন ট্রাম্প অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের ৯ বিচারপতি।
ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সদস্যরাও শপথ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের প্রধান হিসেবে রবার্ট এফ কেনেডি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনোনীত প্রধান ক্রিস্টি নোম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে মনোনীত মার্কো রুবিওসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
শপথ অনুষ্ঠান যখন চলছিল, তখন হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসকে ট্রাম্পের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। সেখানে ন্যান্সি রিগানের ডিজাইন করা একটি কার্পেট ফিরিয়ে আনা হয়। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে এটি ব্যবহার করেছিলেন।
অভিষেক ভাষণে মামলা ও হত্যাচেষ্টা নিয়েও কথা বলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘গত আট বছরে আমাকে যেভাবে পরীক্ষা ও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, এ দেশের ২৫০ বছরের ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্টকে তা করা হয়নি। এ সময়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি।’ ভাষণে তিনি ‘গালফ অব মেক্সিকো’কে ‘গালফ অব আমেরিকা’ ঘোষণা করেন।
ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে অভিবাসন ও সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে কথা বলেন। তিনি মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারি করেন। তাঁর বক্তব্যের মাঝে উপস্থিত অতিথিরা বারবার উঠে করতালি দিচ্ছিলেন। তবে বাইডেন, কমলা, ক্লিনটন ও হিলারিকে অনড় দেখা যায়। তারা কেউ দাঁড়াননি। কিন্তু ট্রাম্প যখন বললেন, বিশ্বব্যাপী তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা ও ঐক্য স্থাপন করবেন, তখন তারাও দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন, করতালি দিয়েছেন।
অভিষেকের দিনই বেশ কিছু পরিবর্তনের অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। আগের দিন রোববার তিনি বিজয় সমাবেশে এসব পরিবর্তনের বিষয়ে বলেন। ট্রাম্প জানান, শপথ নেওয়ার পরপরই তিনি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করবেন। এসব আদেশ হবে অভিবাসন, প্রত্যাবাসন ও ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার সম্পর্কিত। সূত্র জানায়, বৈধতার নথি না থাকা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অভিযান পরিচালনার আদেশ দিতে পারেন। এর আগে নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প জানান, অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে তিনি প্রয়োজনে সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগাবেন। মেয়াদের শেষ পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করে জো বাইডেন প্রশাসন। ট্রাম্প জানান, তিনি এটি ফিরিয়ে আনবেন। সে অনুযায়ী গতকাল থেকে টিকটক চালু হয়েছে। এদিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেডি ভেন্সিও শপথ নিয়েছেন।
ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে উপস্থিত হন বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান। ছিলেন ব্যবসায়ীসহ বিশিষ্টজন। তাদের মধ্যে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেই, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি উপস্থিত ছিলেন। রয়টার্স জানায়, আমন্ত্রণ পেলেও থাকেননি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যান ঝেঙ উপস্থিত ছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে দেশটির শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি ও তাঁর স্ত্রী নিতা আম্বানি ছিলেন। আমন্ত্রণ পেলেও পাসপোর্ট জটিলতায় থাকতে পারেননি ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জায়ার বলসোনারো। ধনকুবের ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গ অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।