রেমিট্যান্সে এস আলমের ভয়ানক ছোবল

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান মাধ্যম প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স হাতিয়ে নেওয়ার চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত ব্যবসায়ী গ্রুপ এস আলমের বিরুদ্ধে। তারা প্রবাসীদের কষ্টার্জিত রেমিট্যান্সে বসিয়েছে ভয়ানক ছোবল। ব্যাংক খাতে ব্যাপক প্রভাব থাকায় দেশ থেকে টাকা পাচারের এই কৌশলকে কাজে লাগায় এস আলম গ্রুপ। তারা রেমিট্যান্সের ডলার ক্রয় করে ওই অর্থ দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বেনামি ঋণ নিয়ে পরিশোধ করত। এ ক্ষেত্রে শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ বের করতে সরাসরি সহায়তা করেছেন ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মওলা, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মিফতাহ উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন ও কালবেলার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

তথ্য বলছে, এস আলম ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে হুন্ডির ভয়ানক চক্র তৈরি করে। ওই চক্রের একটি দল প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে বিদেশি মুদ্রা কিনে নিত। আর বাংলাদেশে থাকা চক্রের সদস্যরা প্রবাসীর পরিবারকে টাকা পরিশোধ করত। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ ও চলতি হিসাব থেকে টাকা তুলে নিয়ে ওইসব টাকা দিত এস আলম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ বলছে, এস আলম গ্রুপের ব্যাংক জালিয়াতির অধিকাংশ অপকর্ম পরিচালিত হয় ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে। ওই পাঁচ গ্রাহক ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন, রেইনবো করপোরেশন, আনসার এন্টারপ্রাইজ, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন ও সোনালী ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে থাকা চলতি হিসাবে বিপুল অঙ্কের অস্বাভাবিক ও বিধিবহির্ভূত লেনদেন হয়েছে। ওই লেনদেন তাদের ব্যবসার প্রকৃতির সঙ্গে কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ ছিল না। প্রতিষ্ঠানগুলোর চলতি হিসাবে ‘বিভিন্নভাবে’ আসা অর্থ তুলে নেওয়া ও উত্তোলনকারীদের আচরণ ছিল সন্দেহজনক। আলোচিত পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত উত্তোলন হয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ১ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কর্মকর্তা, কর্মচারী বা প্রতিনিধির মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়। আর ২৫৪ কোটি টাকা ‘আন্তঃব্যাংক ক্রেডিট অ্যাডভাইসের (আইবিসিএ) মাধ্যমে অন্যান্য শাখায় স্থানান্তর ও রূপান্তর করে নগদে তুলে নেওয়া হয়। ২৫০ কোটি টাকা ব্যবহার হয় দায়দেনা পরিশোধে। এ ছাড়া ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নামে তুলে নেওয়া হয় ৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মীর নামেও তুলে নেওয়া হয়েছে ৫ কোটি টাকা।

পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন বলছে, পাঁচ গ্রাহকের চলতি হিসাবে টাকা জমা হতো ব্যাংকটির বিভিন্ন শাখা থেকে ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে। ২০২৩ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ব্যাংকের ১১টি শাখা বা উপশাখা থেকে ইস্যু করা ৮৩টি আইবিসিএর মাধ্যমে খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে মোট ৩৩৪ কোটি টাকা নগদে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাদের (পাঁচ প্রতিষ্ঠান) চলতি হিসাবে শাখা উপশাখা থেকে টাকা জমা করে আইবিসিএ ইস্যু করা হয়েছে। শাখার সরবরাহকৃত তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এসব আইবিসিএর মাধ্যমে বিকাশ এজেন্ট ও মানি চেঞ্জার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এস আলম গ্রুপ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। তারা ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী বা ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বরং অজ্ঞাত ব্যক্তিবর্গের নামে অর্থ পাঠিয়ে তা নগদায়ন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী বা গৃহিণীর হিসাবেও টাকা পাঠিয়ে নগদায়ন করা হয়েছে।

তথ্য বলছে, কখনো দিনের শুরুতে তোলা অর্থ দিন শেষে সংশ্লিষ্ট হিসাবগুলোর স্থিতি দ্বারা সমন্বয় করা না গেলে বাকি অর্থ সংশ্লিষ্ট শাখার সাসপেন্স হিসাব (অস্থায়ী বা অশ্রেণিবদ্ধ তহবিল থাকে এমন হিসাব) থেকে নিয়ে সমন্বয় করা হতো। ২০২২-এর অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪৩টি এন্ট্রির মাধ্যমে খাতুনগঞ্জ শাখার সাসপেন্স অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা নগদ তোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন সময় সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত খাতুনগঞ্জ শাখার সাসপেন্স অ্যাকাউন্টে ১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা সমন্বয়হীন ছিল। এসব কর্মকাণ্ডের সময় শাখা প্রধান ছিলেন মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম ও মুহাম্মদ সিরাজুল কবির।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম জানান, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মুনিরুল মাওলা এবং তৎকালীন ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিনের নির্দেশে তিনি শাখার সাসপেন্স হিসাব থেকে নগদ নিতেন এবং দিতেন।

যেভাবে কাজ করত হুন্ডি এজেন্ট:

চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর এলাকার আহাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হুবাইব উদ্দিন আহাদ। তিনি স্থানীয় মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশের এজেন্ট। কিন্তু তিনি এস আলম গ্রুপের হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্যক্তিদের একজন। ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন, রেইনবো করপোরেশন, আনসার এন্টারপ্রাইজ, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন ও সোনালী ট্রেডার্সের চলতি হিসাব থেকে হুবাইব উদ্দিন আহাদ ২০২৪ সালের ২৭ মে থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৭টি আইবিসিএ পাঠান। যার মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের আনোয়ারা উপশাখা থেকে ৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা তোলা হয়। এ ছাড়া ২০২৪ সালের ২৭ মে হুবাইব উদ্দিন আহাদের উত্তোলন করা টাকা থেকে আরটিজিএসের মাধ্যমে পূবালী ব্যাংকের কাশিমপুর শাখার (গাজীপুর) মা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা, একই ব্যাংকের নাজিরহাট শাখার গ্রাহক মদিনা লাইব্রেরির হিসাব নম্বরে ৫ লাখ টাকা, এক্সিম ব্যাংকের কাজী নজরুল এভিনিউ, নাজিরহাট শাখার গ্রাহক সওদাগর ট্রেডিংয়ের ব্যাংক হিসাবে ৫ লাখ টাকা পাঠান। শুধু তাই নয়, ইসলামী ব্যাংকের আবু হানিফ নামে এক গ্রাহকের হিসাবে ৩ লাখ টাকা, মনোয়ারা এন্টারপ্রাইজের ব্যাংক হিসাবে ২ লাখ টাকা এবং দেলোয়ার হোসেনের হিসাবে ২ লাখ টাকা জমা করেন। এ ছাড়া হুবাইব উদ্দিন আহাদের ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংকের ঢাকার চক মোগলটুলী শাখা, খাতুনগঞ্জ শাখা, চকবাজার শাখা, মতিঝিল শাখা, মগবাজার শাখা, সিলেটের জকিগঞ্জ, ওসমানীনগর, দৌলতপুর, খুলনা, সোনারগাঁ জনপথ রোড শাখাসহ বিভিন্ন শাখায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নগদ অর্থ জমা হতো। একই দিনে ঢাকা, টাঙ্গাইল, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী, বরগুনা, চাঁদপুর, দেবিদ্বার, মুকসুদপুরের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর ও নগদ উত্তোলন করা হয়। মূলত এই হুবাইব উদ্দিন আহাদ তার ব্যাংক হিসাব থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পরিবারের ব্যাংক হিসাবে টাকা স্থানান্তর করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে তিনি নগদ টাকা উত্তোলন করে প্রবাসীদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

হুবাইব উদ্দিন আহাদের কর্মচারী আবিদ পরিদর্শক দলের সদস্যদের জানান, ‘আহাদ কিছুদিন পরপর সৌদি আরব, দুবাই এবং মালয়েশিয়া যাতায়াত করতেন। তিনি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট হিসেবে এলাকায় পরিচিত।’ আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ‘আহাদ এন্টারপ্রাইজের হিসাবে এস আলম গ্রুপের হিসাব থেকে আইবিসিএর মাধ্যমে বিপুল অর্থ জমা ও দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তা নগদে উত্তোলন বা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর হয়েছে। এই হিসাবধারীর প্রায়ই সৌদি আরব, দুবাই এবং মালয়েশিয়ায় যাতায়াত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, আহাদ অবৈধ হন্ডির কারবারে জড়িত। তার লেনদেনগুলোর মাধ্যমে হুন্ডির অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, শুধু বিকাশ এজেন্ট নয়, এস আলমের হুন্ডি চক্রে ছিল মানি এক্সচেঞ্জ, ব্যাংক কর্মকর্তা বা কর্মচারী ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নয় এমন ব্যক্তিরাও। ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন, রেইনবো করপোরেশন, আনসার এন্টারপ্রাইজ, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন ও সোনালী ট্রেডার্সের কাছ থেকে আইবিসিএর মাধ্যমে পাঠানো ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা সিটি মানি এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত ফিরোজ মোল্লা ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে তুলে নেন। এ ছাড়া আবুল কালাম আজাদ নামে আরেকজন একই শাখা থেকে এক কোটি টাকা তুলে নেন। তিনিও সিটি মানি এক্সচেঞ্জের সৃঙ্গে সম্পৃক্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘মানি এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে বিপুল অঙ্কের নগদ অর্থ স্থানান্তার করার মানে তা হুন্ডি বা অবৈধ লেনদেন। পরিদর্শন দলও তাই মনে করে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে দেখা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার এস এম জামাল উদ্দীন রাসেলের (বর্তমানে মানিকগঞ্জ শাখায় কর্মরত) নামে খাতুনগঞ্জ শাখার পাঁচ প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো ৩০ কোটি ৮১ লাখ টাকা ইসলামী ব্যাংকের লোকাল ও গুলশান সার্কেল-১ শাখা থেকে তুলে নেন। আর ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার ক্যাশ অফিসার মোহাম্মদ আলী ওই পাঁচ প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো ৭৩ কোটি টাকা ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিস ও পল্টন শাখা থেকে তুলে নেন। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের ঢাকা নর্থ জোন অফিসের এফএভিপি তাহেরুল আমিন পাঁচ প্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো ২৩ কোটি টাকা লোকাল অফিস থেকে তুলে নেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাহেরুল আমিন জানান, ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন ডিএমডি আকিজ উদ্দিনের নির্দেশে তিনি এসব অর্থ তুলে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার এস এম জামাল উদ্দীনকে (রাসেল) দিয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের ট্রেনিং একাডেমিতে কর্মরত মেসেঞ্জার কাম গার্ড ওসমান গনি ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে পাঁচ কোটি টাকা নগদে তুলে নেন। এ বিষয়ে ওসমান গনি বলেন, ‘তৎকালীন ডিএমডি আকিজ উদ্দিনের নির্দেশে তিনি টাকাগুলো উঠিয়ে ফের আকিজ উদ্দিনের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।’

পরিদর্শনকালে দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল ফেমাস ট্রেডিং এবং রেইনবো করপোরেশনের হিসাবে জমা হওয়া টাকার মধ্য থেকে ১০ কোটি টাকা ঢাকার গুলশান সার্কেল-১ শাখা থেকে ৪ চার ব্যক্তি তুলে নেন। এদের মধ্যে দুজন গৃহিণী। তারা হলেন শামীমা আকতার রিমি ও আয়েশা আকতার। আর মিজানুর রহমান এবং সৈয়দ মারুফ উর রহমান পেশায় ছাত্র। তারা সবাই আড়াই কোটি টাকা করে তুলে নিয়েছেন। তৎকালীন গুলশান সার্কেল-১ শাখার ব্যবস্থাপক এএসএম নাসির উদ্দিন ফাহিমের নির্দেশে শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শুধুমাত্র এনআইডির তথ্যের ভিত্তিতে শাখায় জুনিয়র অফিসার বোরহান উদ্দিনের মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে ২০টি এমটিডিআর হিসাব খোলেন। এক্ষেত্রে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মাওলা শাখার জিবি ইনচার্জ এবং শাখা ব্যবস্থাপককে টেলিফোন হিসাব খোলা ও নগদায়ন করা, হিসাব গ্রহীতার প্রতিনিধির কাছে পে-অর্ডার প্রদান করার নির্দেশ দেন। এসব টাকা তোলার সময়ও হিসাব গ্রহীতা সশরীরে শাখায় উপস্থিত ছিলেন না। শাখায় আবুল কালাম নামে একজন ব্যক্তির অথরাইজ লেটারের মাধ্যমে এসব টাকা তোলা হয়। শুধু তাই নয়, এনআইডি, বিদ্যুৎ বিল ও অন্যান্য দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এসব গ্রাহক প্রত্যেকেই কক্সবাজার সদর এলাকার বাসিন্দা।

শাস্তির সুপারিশ: ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার পাঁচ গ্রাহকের (ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশন, রেইনবো করপোরেশন, আনসার এন্টারপ্রাইজ, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশন ও সোনালী ট্রেডার্স) প্রায় সব লেনদেনই ছিল সন্দেহজনক। এই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের সব কার্যকলাপ অসংগতিপূর্ণ। তাদের ব্যাংকিং নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ড পরিচালনার সুযোগ করে দেওয়ায় ইসলামী ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর অসংগতিপূর্ণ বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা উত্তোলন, নামে-বেনামে আইবিসিএ ইস্যুর মাধ্যমে টাকা স্থানান্তর, ইস্যুকৃত আইবিসিএর টাকা দিয়ে বেনামে এমটিডিআর হিসাব খোলার সঙ্গে এসব কর্মকর্তা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। এজন্য তৎকালীন ডিএমডি আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিন, খাতুনগঞ্জ শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইহসানুল ইসলাম ও মুহাম্মদ সিরাজুল কবির, গুলশান সার্কেল-১ শাখার তৎকালীন ব্যবস্থাপক এএসএম নাসির উদ্দিনের (ফাহিম) বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকরে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অবহিত করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের বর্তমান এমডি মুনিরুল মওলারও সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনিরুল মাওলা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিভিন্ন গ্রাহক ও ব্যাংক কর্মকর্তাকে ফোন করে চাপ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি ষড়যন্ত্র হতে পারে’।

তবে ইসলামী ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যাদের শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে তারা এখন কেউ ইসলামী ব্যাংকে নেই। তাদের আগেই বরখাস্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে বিস্তর অনুসন্ধান চলছে। যদি আরও কোনো অনিয়ম ধরা পড়ে, তাহলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’কালবেলা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions