বেহাল বীমা, লাখো মানুষের কান্না

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৪ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- বীমা খাতে অনিয়ম, গ্রাহক ভোগান্তি বেড়েই চলছে। ম্যাচিউর হওয়া পলিসির টাকা দিতে গ্রাহক হয়রানি, নির্দিষ্ট সময় পার হলেও প্রিমিয়ামের টাকা পরিশোধে বিলম্ব, হিসাবে অনিয়মসহ নানা অব্যবস্থাপনায় চলছে দেশের বীমা খাত। এমন নাজুক পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলছে বীমা গ্রাহক ও বীমা খাত সংশ্লিষ্টদের। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর কাছে পাওনা টাকার জন্য ভিড় করছেন গ্রাহকরা। বীমা কোম্পানির হয়রানির বিষয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগের জন্য সেল থাকলেও বেশির ভাগ গ্রাহকই তা জানেন না। ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের টাকা পেতে ভোগান্তির কথা জানিয়েছে গ্রাহক ও বিভিন্ন অঞ্চলের জোনাল ইনচার্জরা। বীমা কোম্পানিগুলো মালিকপক্ষের লুটপাটের কারণে সংকট তৈরি হয়েছে এই খাতে।

সূত্র জানায়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কাছে বার বার গ্রাহকদের ৩ থেকে ৪ বছর আগে ম্যাচিউর হওয়া পলিসির টাকা পরিশোধে তাগাদা দিয়ে আসলেও তারা জোনাল ইনচার্জদের পাঠানো এসব অনুরোধ আমলে নিচ্ছে না। ফলে জোনাল অফিসে গ্রাহকরা এসে নানা হুমকি-ধামকি, অফিসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। যার কারণে অনেকে হয়েছেন বাড়িছাড়া। হেড অফিসে এগুলো জানালে তারা ইনচার্জদের ডেকে নিয়ে মিটিং করে সম্পত্তি বিক্রি করা হলে তখন টাকা দেয়া হবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। যেটা কার্যত তারা আদৌও করছেন না। করোনার সময় থেকে নানা অজুহাতে টাকা দিতে বিলম্ব ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে ফারইস্টের গ্রাহকদের। এদিকে, সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চিত্রও একই। তারাও ম্যাচিউর হওয়া পলিসির টাকা দিতে নানা রকম টালবাহানা করছে।

সূত্র জানায়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের টাকা বিগত সময়ে যে পরিচালনা পর্ষদ ছিল তারা টাকা লুটপাট করে পালিয়েছে। জমির নির্দিষ্ট মূল্যের বাইরে গিয়ে অতিরিক্ত দামে কেনারও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। নির্দিষ্ট কিছু এলাকা ছাড়া সারা দেশের গ্রাহক টাকা পেতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। সম্পদ বিক্রির অজুহাতে মিথ্যা আশ্বাসে গ্রাহক ও জোনাল অফিসারদের ঘোরানো হচ্ছে। এ ছাড়াও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সিও তার নিজস্ব এলাকায় পলিসির টাকা পরিশোধে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী, গ্রাহক কোম্পানিতে বীমা দাবির জন্য আবেদন করার ৯০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হয়। কিন্তু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও কিছু কোম্পানি দাবি পরিশোধ করছে না।

সরজমিন দেখা গেছে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় গড়ে ওঠা এসব বীমা কোম্পানির অফিসগুলোতে গ্রাহকদের ভিড়। সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে ২ ঘণ্টা অবস্থান করে দেখা মিলে সেখানে গ্রাহকরা তাদের জমানো প্রিমিয়ামের টাকা নিতে এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাদের এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে পাঠানো হচ্ছে। কর্মকর্তারা কেউই এই বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছেন না। সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অধীনে সূর্যমুখী একক বীমা প্রকল্পের গ্রাহকরা টাকা তুলতে এসেছেন বেশি। তাদেরকে ফান্ড নেই বলে ঘুরানো হচ্ছে এমন চিত্রও দেখা যায়।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে সরজমিন অবস্থান করে দেখা যায় গ্রাহক ভোগান্তির চিত্র।
একাধিক গ্রাহক বলেন, আমাদের ম্যাচিউর হওয়া পলিসির টাকা দিতে তারা এভাবে ঘুরাচ্ছে আমাদের। নিরুপায় হয়ে গেছি আমরা। মানুষ বিপদ-আপদের জন্য বীমা করে। দরকারের সময় যদি টাকা নাই পাই এভাবে ভোগান্তি পোহাতে হয় তাহলে কেন মানুষ বীমা করবে? বীমার ওপর ভরসাই করবে কীভাবে বলে অভিযোগ করেন তারা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাকা না পাওয়াটা বীমা খাতের বড় ভীতি। কিছু কিছু কোম্পানি এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। মানুষের টাকা লুট করে অনেক কোম্পানির মালিক আখের গুছিয়েছেন। বর্তমান সময়ে অনেক কোম্পানির মালিক কিংবা ব্যবস্থাপকদের চুরি করে অফিস করতে হচ্ছে। অনেকে নিজেদের অফিসে নিজেরাই প্রকাশ্যে আসতেছেন না। এসব সমস্যা থেকে বীমা খাতকে বাঁচাতে বড় ধরনের সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। এত কিছুর পরও নীরব নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আইডিআরএ’র কার্যক্রম নিয়ে রয়েছে নানামুখী অভিযোগ। বিশাল পরিমাণের বীমা দাবি নিষ্পত্তি না করার বিষয়ে খাত সংশ্লিষ্টরা অপরিকল্পিত ও মন্দ বিনিয়োগকে দায়ী করছেন। তাছাড়া এজেন্টদের উচ্চহারের কমিশন দেয়া ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ও দায়ী বলে মনে করেন তারা। তারা বলেন, সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ না হওয়াতে সামগ্রিকভাবে বীমা খাতের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে। এ কারণে জীবন বীমা গ্রাহণের হার বাড়ার বদলে কমছে।

ম্যাচিউর পলিসি পরিশোধে বিলম্ব: ম্যাচিউর হওয়া পলিসির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ৩ থেকে ৪ বছর পার হলেও গ্রাহকদের টাকা দেয়া হচ্ছে না। নানা বাহানায় ঘুরানো হচ্ছে গ্রাহকদের। আবার ২ থেকে ৩ বছর ঘুরে কেউ টাকা পেলেও চুক্তি ও ঘোষণামতো টাকা পাচ্ছেন না। নামমাত্র চেক ধরিয়ে দিয়ে দায়সারা হচ্ছে বলেও অভিযোগ বীমা গ্রাহকদের। চেক পেতেও দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। অনেককে বাধ্য করা হচ্ছে পুনরায় বীমা পলিসি করতে। বার বার সময় দিয়ে অফিসে আসলে সম্পত্তি বিক্রি করা হয়নি দাম কম এমন কথা বলে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

চেক বিড়ম্বনা: গ্রাহকদের চাপের মুখে বীমা কোম্পানিগুলো মেয়াদ উত্তীর্ণ পলিসির বিপরীতে ৩ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত তারিখ দিয়ে ব্যাংক চেক প্রদান করলেও কার্যত চেক ডিজঅনার হয় (কোম্পানির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলে ব্যাংক তা প্রত্যাখ্যান করে দেয়)। এ অবস্থায় বার বার চেকের তারিখ পরিবর্তন করেও টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে অনেক কোম্পানি। এই পরিস্থিতির কারণে গ্রাহকরা এখন ব্যাংক চেক প্রদান থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছেন। চেক দেয়ার নামে গ্রাহকদের শান্ত রাখার একটা অপকৌশল এটা। ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা থাকুক না থাকুক। অনেক কোম্পানি একের পর এক চেক ইস্যু করে যাচ্ছে।

প্রতারণার অপকৌশল: টাকা বা বীমা দাবি পরিশোধের বদলে গ্রাহকদের পুনরায় পলিসি করার চাপ সৃষ্টি করা বা বাধ্যতামূলক পুনরায় পলিসি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ ছাড়াও এফডিআর নামক ভোগান্তিতে জড়ানোর পাঁয়তারা করছে অধিকাংশ কোম্পানি। এতে বেশির ভাগ জোনাল অফিসার ইনচার্জরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। গ্রাহকদেরও ভোগান্তি বেড়েই চলছে।
অনেকে আবার বীমা দাবির অর্ধেক টাকা পরিশোধ এবং অবশিষ্ট টাকা দিয়ে পুনরায় বীমা পলিসি করতে বাধ্য করে থাকে। এতে নিজের টাকা না পেয়ে বরং প্রতারণার শিকার হচ্ছেন গ্রাহকরা। এসব কারণে বেশির ভাগ পলিসি অচল হয়ে পড়েছে। যা বীমা খাতের জন্য ক্যান্সার স্বরূপ।

দেশে ৩৬টি জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে ৩২টির কাছে প্রায় ১১ লাখ গ্রাহকের অনিষ্পন্ন বীমা দাবি জমেছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এরমধ্যে একটি কোম্পানির অনিষ্পন্ন দাবির পরিমাণই দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি অনিষ্পন্ন বীমা দাবি রয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চিফ ফাইন্যান্স অফিসার রুহুল আমিন বলেন, আগের পরিচালনা পর্ষদের অনিয়ম দুর্নীতির কারণে আজকে এ অবস্থা। এর কারণে আগের পরিচালনা পর্ষদের অনেকেই কারাগারে আছেন। আমরা আমাদের সম্পদ বিক্রির ওপর গুরুত্ব দিয়ে গ্রাহকের টাকা পরিশোধে চেষ্টা করছি।

সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কাছে জমানো টাকা নিতে এসেছেন রেহেনা বেগম। মুন্সীগঞ্জ থেকে তিনি এক এজেন্টের মাধ্যমে ওই বীমা কোম্পানিতে টাকা জমান। ১২ বছরের জন্য বীমা করা থাকলেও স্ট্রোক করার কারণে তিনি আর এই বীমা চালিয়ে নিতে পারেননি। এখান যে টাকাটা জমা হয়েছে। সেটাই নেয়ার জন্য এসেছেন তিনি।

রেহেনা বেগম বলেন, এক এজেন্টের মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জে নিয়মিত প্রায় দু’বছরের মতো টাকা জমিয়েছি। এখানে এসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার দেয়া পুরো টাকাটা এখানে জমা দেয়নি সেই এজেন্ট। এখন যা পাবো সেটার জন্যই ঘুরতেছি। বীমা কোম্পানির লোকেরা নানা রকম টালবাহানা করছে। একজন আরেকজনের কাছে তথ্যের জন্য পাঠাচ্ছে। সবাই বলছে ফান্ডে টাকা নেই। পরে জানানো হবে।

রাজীব হোসেন নামের এক যুবক মানিকগঞ্জ থেকে এসেছেন তার মায়ের করা বীমা অ্যাকাউন্টের টাকা নিতে। তিনি বলেন, বাবা স্ট্রোক করার পর মা আর সঞ্চয় করতে পারেনি। যে টাকাটা মা জমা করেছেন। সেটা নিতে এর আগেও এসেছি। কিন্তু বার বার ঘুরে পরে জমির মূল দলিল জমা দিয়ে রিসিভ নিয়েছি। ফান্ডে টাকা না থাকায় তারা বলেছে ডিসেম্বর বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আসতে। এখন চেকের জন্য এসেছি। দুবার বোনাস পেয়েছি ৫০ হাজার টাকা। এরপর জমা হওয়া ১ লাখ টাকার মধ্যে ৪৫ হাজার টাকা দিবেন তারা। এই টাকাটাও নিতে ১০ হাজার টাকা দিয়ে বই করলে নাকি চেক দিবেন, এমন কথা বলছেন তারা। পরে একজন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ দিতে বলেন, দিয়েছি এক মাস হলো। কোনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। কবে যে টাকা পাবো। টাকার জন্য স্ট্রোক করে পরে থাকা বাবার চিকিৎসাও করাতে পারছি না।

আব্দুল জলিল এসেছেন কুমিল্লা থেকে। তিনিও কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়ায় একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। তিনি বলেন, এভাবে কীভাবে যে চলবো বুঝতে পারছি না। কতো কী উপহার আর বোনাসের কথা বলে তারা অ্যাকাউন্ট করিয়েছে। অনেকের টাকার সঠিক হিসাবগুলোও জমা দেয়নি এলাকার এজেন্টরা।

নাজমুল নামে একজন জানান, বীমা কোম্পানিগুলো এমনভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে অ্যাকাউন্ট করায়। কিন্তু পরবর্তীতে হাতেগোনা দু’চারটা প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউই ভালোভাবে গ্রাহকদের সময়মতো টাকা পরিশোধ করে না। জমাকৃত টাকা নিতে আসলেও ভোগান্তির শেষ থাকে না।

অপু নামের এক যুবক তার পিসির টাকা নিতে এসেছেন নরসিংদী থেকে। তিনি বলেন, নিয়মিত ১২ বছর টাকা জমা করেছেন আমার পিসি। প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে ১২ বছরে দাঁড়ায় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। অফিসে এসে দেখতেছি জমা ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বলা হচ্ছে পিসিকে তারা ৩ লাখ টাকা দিয়েছেন। আবার ১ লাখ টাকা কীভাবে উঠানো হয়েছে সেটাও পিসি বা আমরা জানি না। ১২ বছর জমানোর পর অফিস থেকে পিসিকে জানানো হয়েছে আপনি তিন বছর জমা দেন নাই টাকা। কিন্তু পিসি নিয়মিত টাকা জমা দিয়েছেন। এজেন্ট ঠিকমতো টাকা অফিসের খাতায় এন্ট্রি করেননি বলেও জানান।
সূর্যমুখী একক বীমা দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ফান্ডে টাকা না থাকায় আমরা টাকা দিতে পারছি না।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মিডিয়া মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বীমা দাবি পরিশোধের জন্য কোম্পানিগুলোকে আইডিআরএ তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। কোম্পানিগুলোর আর্থিক অনিয়মে জড়িত পরিচালকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়ে টাকা উদ্ধারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দাবি নিষ্পত্তির জন্য এর আগে স্থায়ী সম্পদ বিক্রির নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের কাজ বীমা নিষ্পত্তি করার বিষয়ে এবং অভিযোগকারীদের ম্যাচিউর হওয়া পলিসির টাকা পরিশোধে সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে কথা বলা। তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধে তাগাদা দেয়া। আমরা কাজটি অত্যন্ত ভালোভাবে করার চেষ্টা করছি। বিগত সময়ের থেকে বর্তমানে এ বিষয়টি একটু জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকার পরিবর্তনের কারণে। বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ নতুন করে গঠিত হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা বিষয়টি নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করছি।

গ্রাহকের হয়রানির দিকটা প্রয়োরিটি দিয়েছি, আমাদের অভিযোগ সেল রয়েছে। সেখানে অভিযোগ করলে আমরা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে যতদ্রুত সম্ভব অভিযোগের বিষয়ে কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে সেটা নিষ্পত্তিতে তাগিদ দিচ্ছি। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোতে যেগুলো লাইফ ইন্স্যুরেন্স রয়েছে তাদেরও বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ সমস্যা, বিগত সরকারের সময়ে নানা অনিয়মের কারণে সবকিছুতে একটু সময় লাগছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী বলেন, উন্নত বিশ্বে বীমা বা ইন্স্যুরেন্সের দিকে তাদের সিস্টেমটাকে আমরা ফলো করতে পারি। আমাদের দেশের বীমা, ইন্স্যুরেন্স খাতে আইনের শাসনের অভাব, বিচারহীনতার প্রক্রিয়া, ল অ্যান্ড অর্ডারের দুর্বলতা এগুলোর কারণে মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছেন বীমা ও ইন্স্যুরেন্সে। মামলায় দীর্ঘসূত্রিতাও এর মধ্যে আরেকটা কারণ। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায় তারা ইন্স্যুরেন্সে অনেক জনপ্রিয় ও এগিয়ে। সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বীমা খাত বিশ্বে অধিক জনপ্রিয়। তাদের সেগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন করা হয়। আমাদের দেশে বিদেশি কোম্পানি মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের দিকে তাকালেই দেখা যায় সেই চিত্র। তারা সবকিছু সময়মতো করেন। এ ছাড়া নিয়মিত গ্রাহকের টাকা পরিশোধ, ইন্স্যুরেন্সের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছেন মানুষকে। যার কারণে দেশের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ওপর মানুষের আস্থা না থাকলেও বিদেশি প্রতিষ্ঠান মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাজের গতি ও জনপ্রিয়তা বেড়েছে সকলের মধ্যে।মানবজমিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions