প্রশ্নপত্র ছাপাতে যাতায়াত ও থাকার খরচই কোটি টাকা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২৫
  • ১৫ দেখা হয়েছে

এক অর্থবছরে ৮ শিক্ষা বোর্ডে খরচ ১ কোটি ১ লাখ।
টাকার বেশির ভাগ পায় বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখা।
শিক্ষা বোর্ড অধ্যাদেশে এমন ভাতার বিধান নেই।

ডেস্ক রিপেৃাট:-
মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপার কাজে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট প্রেসে (বিজি প্রেস) যাতায়াত ও অবস্থান ভাতায় এক অর্থবছরেই খরচ হয়েছে কোটি টাকা। এই টাকা গেছে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে।

আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের বিল-ভাউচার পর্যালোচনা করে এবং আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসব শিক্ষা বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষার (এসএসসি ও এইচএসসি) কাজে বিজি প্রেসে যাতায়াত ও অবস্থান বাবদ ভাতা নেওয়া হয়েছে ১ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার ৩২ টাকা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ‘দ্য ইন্টারমিডিয়েট অ্যান্ড সেকেন্ডারি এডুকেশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬১ অনুযায়ী দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত হয়। এই অধ্যাদেশে প্রশ্ন ছাপার কাজে বিজি প্রেসে যাতায়াত ও অবস্থানের জন্য কোনো ভাতার বিধান নেই। অথচ প্রতিবছরই এ খাতে ভাতা তুলছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বোর্ডগুলোর দাবি, আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অর্থ কমিটির অনুমোদন নিয়েই এ ভাতা দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ আরও যুগোপযোগী করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড আইন করার কাজ চলছে। তবে নানামুখী তৎপরতার কারণে উদ্যোগটি আটকে গেছে। আইনটি হলে বোর্ডগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জবাবদিহির আওতায় আসবেন

১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ৯টি। এগুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। বাকি দুটি হলো কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। ১১টি বোর্ডে কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় সাড়ে ৩ হাজার।

সার্বিক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ৮ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তাই এখনই মন্তব্য করতে পারছি না। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

অনুসন্ধানের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের পাবলিক পরীক্ষার কাজে বিজি প্রেসে যাতায়াত ও অবস্থান বাবদ তোলা হয় ১ কোটি ১ লাখ ১১ হাজার ৩২ টাকা। তবে কোন বোর্ড ভাতা বাবদ কত টাকা ব্যয় করেছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি। কারণ, এ খাতের অর্থ ব্যয় করা হয় আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে। এ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বেশির ভাগ কাজ করেন ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সূত্র বলছে, প্রশ্নপত্র ছাপার কাজে যাতায়াত ও অবস্থান ভাতা মূলত বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পান। ক্ষেত্রবিশেষে বোর্ডের চেয়ারম্যান অথবা সচিবও এ বাবদ ভাতা পান। বছর শেষে এ বাবদ একজন কর্মচারী-কর্মকর্তা ন্যূনতম ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত পান। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রশ্ন ছাপার কাজে বিজি প্রেসে যাতায়াত ও অবস্থান ভাতা নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র জানায়, বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশ্নপত্রের পাণ্ডুলিপি বিজি প্রেসে পৌঁছে দেন। প্রশ্নপত্র ছাপা শেষে সেগুলো সেট অনুযায়ী প্যাকেটজাত করা হয়। এরপর প্রশ্নের প্যাকেটগুলো বিজি প্রেসেই ট্রাঙ্কজাত করা হয়। পরে সেখান থেকে ট্রাঙ্কগুলো সারা দেশের পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। এসব কাজও করেন বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ জন্য তাঁদের টানা কয়েক দিন বিজি প্রেসে অবস্থান করতে হয়।

যাতায়াত ও অবস্থান ভাতার বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোবাইলে ফোন করা হলে ঢাকা বোর্ডসহ অধিকাংশ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির অনুমোদন ও বোর্ডের অর্থ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে যাতায়াত ভাতা ও অবস্থান ভাতা দেওয়া হয়। এটি দীর্ঘদিন ধরে চলছে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এভাবে ভাতা নেওয়া অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে জবাবদিহির এবং তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।আজকের পত্রিকা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions