বান্দরবান:- পাহাড়, অরণ্য, ঝিরি, ঝরনা আর মেঘের লুকোচুরি—প্রকৃতির এমন অপরূপ সাজে সজ্জিত বান্দরবান। সারা বছর পর্যটক সমাগম থাকলেও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে এ জেলায় ভিড় বাড়ে কয়েকগুণ।
কয়েকদিনের ছুটির সুযোগে গত ২৪-২৫ ডিসেম্বর থেকে পর্যটকের স্রোত নেমেছে বান্দরবানে। এখানকার মেঘলা, নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক, চিম্বুকসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র এখন দর্শনার্থীর পদভারে মুখরিত।
গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) ছিল শুভ বড়দিনের সরকারি ছুটি। এর সঙ্গে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) একদিন বাড়তি নিয়ে সাপ্তাহিক দুই দিনের ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে অনেকে টানা চার দিনের অবসরে ছুটে এসেছেন মেঘে ঢাকা সবুজ পাহাড়ের কোলে।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখন পর্যটক মুখর থাকছে জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র। যাতায়াত সুবিধার কারণে বান্দরবানের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে সহজেই ছুটে যাচ্ছে পর্যটকেরা। শীতের এই আমেজে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন দেশের নানান প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকরা।
বান্দরবানের অন্যতম সুন্দর পর্যটনকেন্দ্র নীলাচলে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. সাইম জানান, বড়দিনের ছুটি নিয়ে বান্দরবানে বেড়াতে এসেছেন। বুধবার বড়দিন ছিল আর বৃহস্পতিবার একদিন ছুটির পাশাপাশি শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি নিয়ে মোট চারদিনের টানা বন্ধে প্রচুর আনন্দ করছেন। পাহাড়, নদী, ঝরণা আর মেঘ দেখে তার পরিবারের সবাই উচ্ছ্বসিত।
শীতের দিনে বান্দরবানের পাহাড়ে ঘুরতে এবং কুয়াশার মধ্য দিয়ে পাহাড়ি সড়কে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অতুলনীয় বলে জানান তিনি।
রাজশাহী থেকে বান্দরবানের মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণে আসা জুলি বলেন, বান্দরবান আমাদের পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে। যে কোনো ছুটি পেলে আমি বান্দরবান চলে আসি। বান্দরবানে প্রায় এই পর্যন্ত ১০ বার ভ্রমণ করেছি। প্রতিবারই নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্রে যাই। জেলা সদরের পাশাপাশি দুর্গম উপজেলা রুমা ও থানচির অপরূপ দৃশ্য সবার নজর কাড়ে। পর্যটন জেলা বান্দরবান ভ্রমণে যে কারও নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
এদিকে দীর্ঘদিন পরে জেলার পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় বাড়ায় খুশি পর্যটন সংশ্লিষ্টরা। পর্যটক সমাগম বাড়লে রাজস্ব আদায় বাড়ার পাশাপাশি অতীতের ক্ষতি পুষিয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন তারা।
বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জসীম উদ্দিন জানান, সাপ্তাহিক ছুটি ও বড়দিন উপলক্ষে বান্দরবানের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে বুকিং বেড়েছে। টানা ছুটির কারণে বান্দরবানে পর্যটক বেড়েছে আর। এতে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা অতীতের কিছু ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী।
বান্দরবান জিপ-মাইক্রো-কার মালিক সমবায় সমিতির লাইন পরিচালক মো. কামাল জানান, সমিতির আওতায় প্রায় ৪৫০টি চান্দের গাড়ি, জিপ ও মাইক্রোবাস রয়েছে। বান্দরবানে বেড়াতে আসা পর্যটকরা এই গাড়িগুলোয় জেলার বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ করেন। এই চান্দের গাড়িতে ঘুরে পর্যটকরা দারুণ উপভোগ করেন।
পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে জানিয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, বান্দরবানের সাতটি উপজেলাতে প্রচুর পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। জেলা সদরের পাশাপাশি লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়িসহ প্রতিটি উপজেলায় পর্যটকেরা ভ্রমণ করছেন নিয়মিত। বেড়াতে আসা পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রশাসন কাজ করছে এবং পর্যটনকেন্দ্রের উন্নয়নে প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে। বাংলানিউজ