অস্ত্র-গুলির ছড়াছড়ি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৮ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- একের পর এক অভিযানেও নিয়ন্ত্রণে আসছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে সর্বত্রই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। নানা অজুহাতে সমাজে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে অপরাধীরা। হামলে পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। মাঝে মাঝেই ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়া মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। সন্ত্রাসীদের নিশানা থেকে বাদ যাচ্ছেন না খোদ পুলিশ সদস্যরাও। একের পর এক ঘটনায় উৎকণ্ঠা-উদ্বিগ্নতা ভর করছে সব শ্রেণির মানুষের মাঝে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রচুর অবৈধ অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এখনো উদ্ধার হয়নি পুলিশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লুণ্ঠিত অস্ত্র-গোলাবারুদ। আবার চিহ্নিত অপরাধীদের অনেকেই বর্তমানে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের আশ্রয়ে রয়েছেন। তাই পুলিশসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা স্বাভাবিক চেহারায় না ফেরা পর্যন্ত স্বস্তি ফিরবে না সমাজে। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, পুলিশ বাহিনী পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। শুধু নির্বাচন নয়, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ বাহিনী। তবে ভিন্ন কথা বলেছেন অপরাধ বিশ্লেষক ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির উপদেষ্টা নূর খান লিটন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বলেন, পুলিশ এখনো ঘুরে দাঁড়াতে না পারায় সুযোগটা নিচ্ছে অপরাধীরা। আবার সেনাবাহিনীর সদস্যরা মাঠে কাজ করলেও তাদের মধ্যে এক ধরনের জড়তা কাজ করছে। এ কারণে কোনো এলাকায় সেনাবাহিনী গেলেও সেখানকার মানুষ ধাক্কাধাক্কি করছে তাদের সামনে। এসব কারণে সাধারণ মানুষ এখনো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুর্বলতা প্রকাশ করার সুযোগ নেই। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উচিত হবে আইনের আলোকে তাদের আরও কঠোর হওয়ার। কারণ, অবস্থা অনেক পাল্টেছে। সমন্বিত অভিযান জরুরি হয়ে পড়ছে। ‘অপরাধী যেই হোক, অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না’ সমাজে এ বার্তাটা দেওয়া উচিত। নরসিংদী সদরের পাঁচদোনা বাজার এলাকার একটি মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন ছাত্রদল নেতা হুমায়ুন কবীর (২৬)-সহ কয়েকজন। রাত ১১টার দিকে এলাকার পরিচিত দুই যুবক কথা বলার জন্য হুমায়ুনকে মাছের আড়ত মসজিদের দিকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপরই গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে এগিয়ে যান মাঠেই থাকা তার ভাতিজা তন্ময়সহ অন্যরা। এ সময় তাদের লক্ষ্য করেও গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। তবে সেগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গুলিবিদ্ধ হুমায়ুনকে রাত পৌনে ১২টার দিকে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হুমায়ুন কবীর ওই গ্রামের একরামুল হকের ছেলে এবং মেহেরপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, নিহতের বুকে ও মাথায় গুলি করা হয়।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় পূর্বশত্রুতার জের ধরে শনিবার রুহুল আমিন রুবেল (৩৮) নামে এক পুলিশ সদস্যের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। গুলি করার পর তাকে পানিতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গুলিবিদ্ধ রুহুল একজন পুলিশ কনস্টেবল। তিনি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা থানায় কর্মরত ছিলেন। মানসিক সমস্যার কারণে কয়েক মাস ধরে ছুটি নিয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছেন। রুহুল আমিনের বাবা আবদুল হক বলেন, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেশী চুন্নুর পরিবারের সঙ্গে তাদের বিরোধ চলছিল। এর মধ্যে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার ছেলে বাড়ির পাশের মাচায় বসে ছিলেন। এ সময় চুন্নু, তার ছোট ভাই মানিক, বাবু, আওয়ামী লীগ নেতা ইমামপুর গ্রামের তাইফুরসহ আরও কয়েকজন অতর্কিতভাবে তার ছেলের ওপর হামলা চালায়। প্রথমে তারা তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে তাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করলে দুটি গুলি গায়ে লাগে। তাকে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। এ বিষয়ে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনার খবর পেয়েছিলাম। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।

ওপরের দুই নৃশংস ঘটনাই ঘটেছে ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে। তবে এ ধরনের ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ৭ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর কদমতলী ও বাড্ডা এলাকায় পৃথক দুটি ঘটনায় তিনজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ বলছে, কদমতলী এলাকায় একটি রড তৈরির কারখানার দুই নিরাপত্তাকর্মী মো. মনির (৪৫) ও মো. আল আমিন (৪০) দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হয়েছেন। বাড্ডায় গুলিতে আহত হয়েছেন সাইফুল ইসলাম (৩২) নামের এক নিরাপত্তা কর্মী।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে স্পেশাল টিম গঠন করা হয়েছে। আপনারা শিগগরিই এর ফলাফল দেখতে পাবেন।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন থানা-ফাঁড়িসহ পুলিশের নানান স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়। গোলাবারুদ লুট হয় ৬ লাখ ৫১ হাজার ৬০৯টি। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেড ও বিভিন্ন বোরের গুলি। লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর যৌথ অভিযান শুরু হয়। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, এই অভিযানে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৫১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫৬টি গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

জানা গেছে, গত ২১ ডিসেম্বর শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৮টার দিকে খুলনা রূপসা উপজেলার জয়পুর বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন সাব্বির হোসেন (২৫)। এ সময় দুটি মোটরসাইকেলে করে চারজন অজ্ঞাত ব্যক্তি সেখানে আসেন। তাদের দেখে সাব্বির দৌড় দেন। তখন দুর্বৃত্তরা ধাওয়া করে তাকে লক্ষ্য করে একটি গুলি ছোড়ে। লুটিয়ে পড়েন সাব্বির। স্থানীয় লোকজন দুর্বৃত্তদের ধাওয়া দিলে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। গুলিবিদ্ধ সাব্বির জয়পুর গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে। তিনি বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, প্রতিটি ঘটনা পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। অপরাধের সঙ্গে জড়িতদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। জড়িত বাকিদের গ্রেপ্তারেও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, এদেশের প্রেক্ষাপটে অপরাধ পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব নয়, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মাঠ পর্যায়ে এখনো পুলিশের রয়েছে সমন্বয়হীনতা। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অপরাধের ধরন সবসময় একই মাত্রায় থাকে না। অপরাধ যেভাবেই ঘটুক না কেন পুলিশের কাজ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখা। পুলিশ সেই কাজটিই করছে।

৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর প্রায় প্রতিদিনই নানা দাবিদাওয়া নিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও মিছিলসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি রাজধানীসহ সারা দেশে দেখা গেছে। এসব কর্মসূচির বাইরে বিভিন্ন পক্ষ জড়িয়েছে সংঘর্ষ-সংঘাতেও। এ সময় এসব বিশৃঙ্খলা, সংঘাত ঠেকাতে কঠোর অভিযানে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পাশাপাশি নিরাপত্তা ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে প্রতিটি থানায় পুলিশ, ছাত্র-জনতা ও নাগরিকদের সমন্বয়ে করা হচ্ছে মতবিনিময় সভা। এসব বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর হওয়ায় কিছুদিন শান্ত থাকলেও ফের উত্তপ্ত হতে দেখা গেছে বিভিন্ন গ্রুপকে। এসব ঘটনা কেন্দ্র করে ফের জড়িয়েছে সংঘর্ষে, ঘটেছে হতাহতের ঘটনা। এ ছাড়া ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত, দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করেও নিরাপত্তাব্যবস্থা অবনতির কথা উঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে।বাংলাদেশ প্রতিদিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions