ডেস্ক রির্পোট:- বন বিভাগে কী পরিমাণ জমি অবৈধ দখল হয়ে আছে তার সঠিক হিসাব নেই বন মন্ত্রণালয়ের কাছে। তবে গত বছর জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে দেয়া হিসাব অনুযায়ী, বন বিভাগের দুই লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে বলে জানা যায়। এর মধ্যে গাজীপুর এলাকায় বন বিভাগের জমি দখল করে দেড় শতাধিক কলকারখানা, পিকনিক স্পট, রিসোর্ট, দোকানপাট, বাজার ইত্যাদি গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকটির নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। এ সবের মাধ্যমে অবৈধ দখলদাররা বছরে শত কোটি টাকা আয় করছে। অন্যান্য এলাকায় বনের জমি দখল করে অবৈধভাবে বসতভিটা নির্মাণ করা হয়েছে, অনেক জমিতে চলছে চাষাবাদ। মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আয়তন এক হাজার ২৫০ হেক্টর কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে কতটুকু বনভূমি নিজেদের আওতায় রয়েছে তা জানে না খোদ বন বিভাগই। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, লাউয়াছড়ার প্রায় অর্ধেক বনই অবৈধ দখলে চলে গেছে। এসব জমি উদ্ধারে বন মন্ত্রণালয়ের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। অনেকের অভিযোগ, বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বনভূমি দখলে নিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। আবার রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অনেক কোম্পানিও বড় অঙ্কের অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বনের জমি দখল করে নিয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িঘর তৈরি করে ২৩ হাজার ব্যক্তি দখল করেছে ১০ হাজার একরের বেশি বনভূমি। বনের জমি দখল হওয়ায় উজাড় হচ্ছে বন, ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ, হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী ও কীটপতঙ্গ। বনভূমি উজাড় হয়ে হুমকির মুখে পড়েছে এলাকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। অথচ এই আগ্রাসন ঠেকাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই বন বিভাগের। উল্টো বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে নানা ফন্দিতে নতুন করে দখল হচ্ছে বনভূমি।
বনভূমি উজাড় হওয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে পড়েছে। এ অবস্থায় বনায়নসহ পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে গত অর্থবছরেও দেড় বিলিয়ন মার্কিন ডলার আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে সহযোগিতা এসেছে। কিন্তু তাতে পরিবেশের কোনো উন্নয়ন হয়নি। উল্টো পরিবেশের আরো বিপর্যয় ঘটেছে। ঢাকার বায়ুদূষণ এখন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রায়ই রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দূষিত শহরের শীর্ষে থাকছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দায়িত্ব গ্রহণের আগে পরিবেশ দূষণ নিয়ে অনেক গালভরা বক্তব্য দিয়েছেন। সরকারের অনেক সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর পরিবেশের সামান্যতম উন্নতি হয়নি; বরং ঢাকার বায়ুদূষণ আরো বেড়েছে। ঢাকার আশাপাশের নদীগুলো আরো দূষিত হয়েছে। সারাদেশে নদীগুলো মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে। বন বিভাগের যে সব বনভূমি অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে সেগুলো উদ্ধারের কোনো তৎপরতা নেই। ভারতের সাথে পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো বৈঠকের আয়োজনও করতে পারেনি। পলিথিন বন্ধে খুব হাঁকডাক করেও তাতে কোনো কার্যকর ফলাফল অসেনি। এখনো দেদার পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা এখন পর্যন্ত পরিবেশের উন্নয়নে দৃশ্যত কোনো কাজ করেছে, এমনটি বলা যাচ্ছে না।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)-এর সদস্য সচিব শরিফ জামিল গতকাল বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব যাকে দেয়া হয়েছে তিনি পরিবেশে উন্নয়নের জন্য দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন। তাই সবার প্রত্যাশা ছিল এবার পরিবেশের ভালো কিছু হবে। কিন্তু চার মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও পরিবেশ উন্নয়নে কিছুই হয়নি। পরিবেশের উন্নয়ন বিষয়টি এ সরকারের অগ্রাধিকার কর্যতালিকায় আছে এমনটি আমাদের কাছে মনে হচ্ছে না। তবে চেষ্টা আছে। এইটুকু চেষ্টা জনগণ প্রত্যাশা করে না। উন্নয়নের নামে বিগত সরকার পরিবেশ ধ্বংসকারী অনেক প্রকল্প নিয়েছিল। যেমন রূপপুর, রামপাল, পটুয়াখালি কয়লা বিদুৎ প্রকল্পসহ আর যেসব প্রকল্প পরিবেশের জন্য হুমকিÑ এগুলো এ সরকার এসেই রিভিউ করা উচিত ছিল। এ সরকার পরিবেশ উন্নয়নে আসলে কিছুই করছে না। গালভরা বুলি এখন আর জনগণ শুনতে চায় না। জনগণ কাজ দেখতে চায়।
বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের ১৬ বছরের শাসনামলে সরকারি বনের জমি দখলের মচ্ছব চলেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের মানুষ প্রত্যাশা করেছিল, এবার এসব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন-বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দায়িত্ব গ্রহণের পর বন বিভাগের জমি উদ্ধারে উদ্যোগ নেয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। তিনি পরিবেশ রক্ষায় পলিথিন ব্যবহার বন্ধের ব্যাপক তৎপরতা দেখালেও পরিবেশ রক্ষার সবচেয়ে মূল্যবান উপাদান বন উদ্ধারে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। অনেকে অভিযোগ করে বলছেন, যেখানে এনজিওদের সম্পৃক্ততা রয়েছে সেখানে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টার তৎপরতা বেশি। বন উদ্ধারে গাজীপুরে তার নির্দেশে গত নভেম্বরে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে নির্মাণাধীন ও সদ্য নির্মিত ১২০টি অবৈধ ঘরবাড়ি ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এতে প্রায় ছয় একর বনভূমি জবরদখলমুক্ত করা হয়। এরপর আর কোনো অভিযান এখন পর্যন্ত হয়নি। গাজীপুরে বনভূমি অবৈধভাবে দখল করে দেড় শতাধিক কলকারখানা নির্মিত হলেও তাদের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা এসব বিষয়ে গালভরা বুলি আওড়ালেও গত চার মাসে দেশের বন রক্ষায় তার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
গাজীপুরে বনের জমিতে দেড় শতাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেড (বিবিএস) ২০১৭ সালে কারখানা নির্মাণের জন্য গাছপালা কেটে সাতখামাইর ফরেস্ট বিটের তেলিহাটি মৌজার আরএস ২৯২৩, ২৯২৪ ও ২৯২৫ দাগের ১.৬১ একর সংরক্ষিত বনের জমি দখল করে নেয়। দখল করা ওই জমির বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত আড়াই কোটি টাকা। বন বিভাগ দখল করা ওই জমি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি। এরই মধ্যে নতুন করে কারখানার মূল ফটকের সামনে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হাসনাইন ওরফে হাসান বনের জমি দখল করে নির্মাণ করেছেন মার্কেট। ওই মার্কেট থেকে মাসে ভাড়া তুলছেন ৩০ হাজার টাকা। অন্যদিকে গাজীপুর সদরের নলজানী এলাকার অভিজাত ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার মাসিক আয় কোটি টাকার বেশি। শীত, গ্রীষ্ম-বর্ষা কোনো সময়ই এই রিসোর্টের ভিলা খালি থাকে না। ৯-১০ বছর আগে নির্মাণের সময় ভাওয়াল রিসোর্টের পাশে থাকা সংরক্ষিত বনের বাড়ইপাড়া মৌজার এসএ, সিএস ৩, ২৭৯ ও ২৭১ দাগের ৩.৬৮ একর জমি দখল করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায় বন বিভাগ গ্রিনটেক রিসোর্টের দখল থেকে জমি উদ্ধারের জন্য গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে উচ্ছেদ মামলা করে। কিন্তু সেই জমি এখনো উদ্ধার হয়নি। এভাবে গাজীপুরে সংরক্ষিত বনের জমিতে কারখানা, খামার, আলিশান রিসোর্ট, পিকনিক ও শুটিং স্পট নির্মাণ করে বছরে শত কোটি টাকার বাণিজ্য করছে দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান।
ব্যক্তিগত প্রভাব এবং অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যক্তিগত জমির সঙ্গে থাকা বনের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। সংরক্ষিত বনে বা বন-ঘেঁষে তৈরি করা এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকটির নেই পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র। বন বিভাগের তালিকা অনুযায়ী, গাজীপুরের শ্রীপুর, কালিয়াকৈর ও সদর উপজেলায় ১২ হাজার ৩২১ একর বনের জমি অবৈধ দখল হয়ে গেছে। এর মধ্যে ১৭৪টি প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে ৫০০ একর জমি। মাঝে মধ্যে বন বিভাগ ও জেলাপ্রশাসন লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে কিছু জমি উদ্ধার করার গল্প প্রচার করে। বাস্তবে অবৈধ দখলদারদের দখলেই আবার সব চলে যায়। কিছু দিন আগে বন বিভাগ ও জেলা প্রশাসন শ্রীপুর ও গাজীপুর সদর উপজেলায় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করেছে মাত্র ৮.৭৯ একর বনভূমি। অবশিষ্ট ভূমি রিসোর্ট, বাড়িঘর-দোকানপাট, হাটবাজার ও কৃষিজমি হিসেবে দখল করা হয়েছে।
বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, শ্রীপুরে ধনুয়া মৌজায় আরএকে সিরামিকস চার একর, রশোওয়া স্পিনিং মিল চার একর, ডিবিএল সিরামিকস আট একর, অটো স্পিনিং মিলস ২.২০ একর, সাতখামাইর মৌজায় আকন্দ গার্ডেন ১৬ একর, রিফাত ব্যাগ ২৫ শতক, পটকা মৌজায় ট্রেড ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন ৭.৬৪ একর, কেওয়া মৌজার মিতা টেক্সটাইল ২.২০ একর, মেঘনা কম্পোজিট ৪০ শতাংশ, জোবায়ের স্পিনিং এক একর, ওমেগা সুয়েটার এক একর, সোলার সিরামিকস ৯০ শতাংশ, ইকো কটন ৪.৮৬ একর, ভাওয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ দুই একর, অনটেক লিমিটেড ৪.৯৪ একর, হাউআর ইউ টেক্সটাইল এক একর, অরণ্যকুটির ২.২২ একর, উইস্টেরিয়া টেক্সটাইল ৫.৩৩ একর, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল দুই একর, এপেক্স নিট কম্পোজিট ১১.৬২ একর, গ্রেটওয়াল সিরামিকস ৭.৩৮ একর, টেপিরবাড়ি মৌজায় ডিবিএল গ্রুপ ছয় একর, তেলিহাটি মৌজায় কুঞ্জু বিথি এক একর, আলিফ অটো ব্রিকস ৭০ শতাংশ, টেপিরবাড়ি মৌজায় চায়না-বাংলা প্যাকেজিং এক একর, প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস ৭৬ শতাংশ, এইচ এস অ্যাগ্রো দেড় একর, রেক্স অটো ব্রিকস এক একর ৭০ শতাংশ, টেংরা মৌজায় শিশুপল্লী প্লাস সাড়ে ১২ একর, মম পোলট্রি ৭০ শতাংশ ও ওয়ারবিট স্টিল বিল্ডিং দুই একর বনের জমি দখল করেছে। পেলাইদ মৌজায় সিসিডিভি পাঁচ একর, সাইটালিয়া জামান পোলট্রি দুই একর, মাওনা মৌজার মনো ফিড ২.২৫ একর, এইচ পাওয়ার লিমিটেড ৩৩ শতাংশ, হোম ডিজাইন ১.২২ একর ছাড়াও বিবিএস কেবল, দি সোয়েটার, ইকো কটন মিলস, সিটিসেল লিমিটেডও বনের জমি দখল করেছে। এ ছাড়াও এরকম আরো অনেক কোম্পানি বন বিভাগের জমি দখল করে কারখানা গড়ে তুলেছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরিফীন বলেন, গাজীপুরে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে হাজার হাজার একর বনভূমি জবরদখল হয়েছে। এসব উদ্ধারে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। বন বিভাগের অবৈধ দখলে থাকা সব জমি উদ্ধার করা হবে।
বনভূমি দখল প্রসঙ্গে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল আল মামুন বলেন, বন বিভাগের জমি উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে বন বিভাগ নিজস্ব উদ্যোগে শতাধিক বিঘা জমি উদ্ধার করে বনায়ন করেছে। তা ছাড়া দখল করা জমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। যৌথভাবে উচ্ছেদ অভিযানও শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব জমি উদ্ধার করে বনায়ন করা হবে।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের আয়তন কাগজে-কলমে এক হাজার ২৫০ হেক্টর। কিন্তু বাস্তবে কতটুকু বনভূমি নিজেদের আওতায় রয়েছে তা জানে না খোদ বন বিভাগই। দীর্ঘদিন ধরে আয়তন পরিমাপ না হওয়ায় বনের চারপাশের জমি যে যেভাবে পেরেছেন দখলে নিয়ে সম্প্রসারণ করেছেন চা-বাগান, তৈরি করা হয়েছে লেবু ও আনারস বাগান, কটেজ, বাড়িসহ নানান স্থাপনা। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটি দখল-বেদখলে ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত হয়ে প্রায় অর্ধেক আয়তনে এসে দাঁড়িয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রটির মতে, অনেকবার চেষ্টা করেও ডিমারগেশন (সীমানা নির্ধারণ) করা বা দখলদারদের উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। দখলদারদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় এটা সম্ভব হয়নি। তবে অনেক পরে হলেও দখলে থাকা লাউয়াছড়া বনের জমি উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদের ‘সাবারি টি প্ল্যান্টেশন’ নামের চা-বাগানের দখলে থাকা প্রায় পাঁচ একর জমি উদ্ধার করা হয়। সবশেষ ৩ নভেম্বর অভিযান পরিচালনা করে কমলগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর কমলগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সদস্য বদরুল আলম জেনারের দখলে থাকা প্রায় চার একর বনভূমি উদ্ধার করে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। উদ্ধার করা বনভূমিতে বন্যপ্রাণীদের খাবার উপযুক্ত ফলদ বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।
নওগাঁ বন বিভাগের এক-তৃতীয়াংশ জমিই বেদখল হয়ে গেছে। কেউ কেউ এসব জমিতে বসতি স্থাপন করেছেন, কেউ দোকানপাট। কেউ বনের জমিতে আমবাগান করেছেন, আবার কেউ করছেন চাষাবাদ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি শিক্ষক ও সাধারণ মানুষও রয়েছেন দখলদারদের তালিকায়। বনের জমি উদ্ধারে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় দখল থামছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। জমি উদ্ধারে বন বিভাগের পক্ষ থেকে প্রায়ই মামলাও করা হয়। তবে সেগুলো ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। যুগ যুগ ধরে বনের জমি দখল হওয়ায় উজাড় হচ্ছে বন, ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি ও পরিবেশ, হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী ও কীটপতঙ্গ। বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী, জেলায় ১৭ হাজার ৬৮৩ দশমিক ২৬ একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ১৯৫ একর ভূমি বেদখলে, অর্থাৎ নওগাঁয় মোট বনভূমির প্রায় এক-তৃতীয়াংশই বন বিভাগের দখলে নেই। তালিকায় দখলদারদের সংখ্যা দুই হাজার ১৪৩। তাদের দখলে সর্বনিম্ন পাঁচ শতক থেকে শুরু করে ১২ একর পর্যন্ত জমি রয়েছে।
চট্টগ্রামে প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমি প্রভাবশালীদের কাছে অবৈধ দখলে রয়েছে। জাল বিএস খতিয়ান তৈরি করে ও প্রভাব খাটিয়ে জবরদখলে রেখেছে প্রভাবশালীরা। বনভূমির এসব জায়গায় মাল্টা বাগান, পানের বরজ, পুকুর খনন করে মাছ চাষ, পার্ক, মাছের ঘের, শিপইয়ার্ড, ডেইরি খামারসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে ভোগ করছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদের বন বিভাগের গাছাড়া ভাব। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে শত শত মামলা রয়েছে। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসনের কাছে অবৈধ দখলদারদের নামের তালিকা দেয়া হয়েছে। বনভূমি লিজ দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে এসব ভূমি দখল করে ভোগ করছে। চট্টগ্রামে উত্তর ও দক্ষিণ দুই বিভাগে মোট বনভূমির পরিমাণ আড়াই লাখ একর। এর মধ্যে প্রায় ২০ হাজার একর বনভূমি অবৈধ দখলে রয়েছে। বিগত সময়ে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও কয়েকজন ব্যবসায়ী বিপুল পরিমাণ বনভূমি দীর্ঘদিন যাবত দখলে রেখেছে। কেউ কেউ জাল বিএস খতিয়ান তৈরি করেছে। এসব বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। অবৈধ দখলমুক্ত করতে বন বিভাগের নিজস্ব জনবল নেই। উচ্ছেদ করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে হলে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ র্যাবের সহায়তা ছাড়া করা যায় না। ইনকিলাব