ডেস্ক রির্পোট:- প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরেও রাজশাহী সিটি করপোরেশনে খোলা হয়েছিল বিশেষ আট বিভাগ। সেগুলোতে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয় প্রায় ২০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। দলীয় নেতান্ডকর্মীদের পুনর্বাসনের জন্য নতুন বিভাগ চালুর নামে রাসিকের অর্থ অপচয়ের পথ তৎকালীন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তৈরি করেছিলেন বলে অভিযোগ। এসব বিভাগে নিয়োজিতদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতান্ডকর্মী। রাসিকের বেতন-ভাতা দেওয়া হলেও অধিকাংশ সময়ই তাদের দেখা মিলত দলীয় মিটিং মিছিলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে রাসিকে নিয়োজিত প্রশাসক দায়িত্ব পেলে আয়-ব্যয়ের খাত যাচাইয়ে তৎপর হয়। এ সময় প্রশাসনিক কাঠামোর বাইরে সৃষ্ট বিভাগে অর্থ অপচয়ের বিষয়টি নজরে আসে। বেরিয়ে আসে তৎকালীন মেয়র লিটনের আস্থাভাজনদের নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টিও। তাই অযাচিত অর্থ অপচয় রোধে অপ্রয়োজনীয় বিভাগ বন্ধে উদ্যোগ নেন নতুন প্রশাসক।
বিশেষ সেই আট বিভাগ হলো- সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তি শাখা, ধর্মবিষয়ক শাখা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা, শিক্ষা ও আইসিটি বিভাগ, সিটি মিউজিয়াম ও আর্কাইভ শাখা, আইন ও বিচার বিভাগ, আইন শাখা এবং নারী ও শিশু কল্যাণ শাখা।
সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে, রাজশাহী সিটি করপোরেশনে অনুমোদিত বিভাগ আছে ১১টি। এগুলো হলো- সচিবালয় বিভাগ, সাধারণ প্রশাসন বিভাগ, নিরাপত্তা শাখা, জনসংযোগ শাখা, ম্যাজিস্ট্রেসি শাখা, অ্যানফোর্সমেন্ট অ্যান্ড মনিটরিং শাখা, সম্পত্তি শাখা, মসজিদ শাখা, ভান্ডার শাখা, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি শাখা। এর বাইরেও ২০১৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর নতুন করে আটটি বিভাগ চালু করেন সাবেক মেয়র লিটন। এসব বিভাগের কোনো অনুমোদন না থাকলেও বাজেটের ভিত্তিতে কাজ হতো। এসব কাজ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো রাসিকের নির্ধারিত বার্ষিক বাজেট থেকে।
নাম প্রকাশ না করে সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, তারা এগুলো অনুমোদনের জন্য ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন। তবে সেগুলো অনুমোদন হয়নি। অনুমোদন না পেলেও তৎকালীন মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বিভাগগুলো পরিচালনা করেছেন। বিভাগ চালুর নামে বড় অঙ্কের অর্থ অপচয়ের পথ সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। এমনকি কিছু বিদেশিদের ডেকে এনেও বড় বড় অনুষ্ঠান করে টাকা জলে ঢালা হয়েছে। তাদের দাবি, বিভাগগুলোর প্রায় ৯৫ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই রাজনৈতিক নেতা।
রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ বি এম শরীফ উদ্দিন বলেন, করপোরেশনের ছয়টি সাংগঠনিক বিভাগ আছে। এই ছয়টি বিভাগ ছাড়া আরও আটটি বিভাগ সাবেক মেয়র লিটন খুলেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সিটি করপোরেশনের কলেবর ৯৮ স্কয়ার থেকে ৩৪২ স্কয়ার কিলোমিটার করা। এজন্য প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। এগুলো সাংগঠনিক কাঠামো নয়। তাই বাজেট অনুমোদিত হিসাবে এটি পরিচালিত হয়।
সুশাসন বিশ্লেষক সুব্রত পাল বলেন, ওই আটটি বিভাগ রাজনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে এরকম কোনো কিছু যাতে সিটি করপোরেশন হাতে না নেয়। এমন কিছু করা উচিত যাতে সেগুলো নাগরিকদের কাজে আসে।