ডেস্ক রির্পোট:- ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলাকারীরা বাংলাদেশের পতাকা ছিঁড়ে অগ্নিসংযোগ করেছে। গতকাল দুপুরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া আরও কয়েকটি স্থানে ভারতীয়রা বিক্ষোভ করেছেন। তারা বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। বিক্ষোভ হয়েছে মুম্বই উপ-দূতাবাসের সামনেও। হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেখা যায়, বিক্ষোভকারীরা সেখানে হামলা করছেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা স্ট্যান্ড থেকে নামিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, হিন্দু সংঘর্ষ সমিতি নামের একটি সংগঠনের সভা ছিল আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের সামনে। সভা শেষে সংগঠনের একটি প্রতিনিধিদল হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে যায় স্মারকলিপি জমা দিতে। এসময় বাইরে থাকা কিছু হিন্দু যুবক হঠাৎ বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশন কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ছিঁড়ে ফেলে এবং আগুন দেন। পরে হাইকমিশন কার্যালয়ের কিছু সাইনবোর্ড ভাঙচুর করে তারা। ঘটনার সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে থাকলেও হামলা-ভাঙচুর ঠেকাতে পারেনি।
বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল গেরুয়া পতাকা, ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা। তাদের জয়শ্রীরাম স্লোগান দিতে শোনা যায়।
ঘটনার পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করেছে। তাদের এক্স হ্যান্ডেলে লেখা হয়, কোনো অবস্থাতেই কূটনৈতিক সম্পত্তিকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা উচিত নয়।
এদিকে, ভারতের কোচবিহারেও বিক্ষোভ হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখায় সনাতনী হিন্দু মঞ্চ। সংগঠনটির সদস্যরা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া চ্যাংড়াবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিলও করে। বিক্ষোভ হয়েছে ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তেও। সেখানে সমাবেশ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে।
মুম্বইয়ে উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ: ভারতের মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের কাছে সোমবার বিকালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কয়েক শ’ বিক্ষোভকারী বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বাংলাদেশ মিশনের প্রায় এক থেকে দেড় শ’ গজের মধ্যে অবস্থান নেন। তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসকন সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিবাদ জানিয়ে নানা স্লোগান দেন। মুম্বইয়ে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের পক্ষ থেকে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আয়োজনে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের রাজ্য সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট শিল্পপতি লোধা মঙ্গল প্রভাত।
ফেনী সীমান্তে বিক্ষোভ: ওদিকে ফেনীর সীমান্তবর্তী পরশুরামের বিলোনিয়া স্থলবন্দরের ভারত অংশে বাংলাদেশবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। সনাতনী হিন্দু সমাজের ব্যানারে কিছু ভারতীয় নাগরিক রোববার বিকালে বিক্ষোভ করেন। সোমবার এ বিষয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি-৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার রাত ১২টার দিকে বিলোনিয়া সীমান্তেও ওই বিক্ষোভের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রোববার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিলোনিয়া স্থলবন্দরের ওপারে ৫০ থেকে ৬০ জন ভারতীয় নাগরিক জড়ো হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। তারা ইসকনের পক্ষে এবং বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য ও বিদ্যুৎ রপ্তানি বন্ধের দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় ভারতের নো-ম্যানস ল্যান্ড অংশে ঢুকে বাংলাদেশের দিকে মাইক তাক করে উচ্চ শব্দে প্রায় আধা ঘণ্টা নানা স্লোগান দেন। পরে বিএসএফ সদস্যরা তাদের সরিয়ে দেন।
বিজিবি’র মজুমদারহাট বিওপির কোম্পানি কমান্ডার সৈয়দ কামরুল আলম মজুমদার বলেন, ঘটনার পর বিলোনিয়া স্থলবন্দরে বিজিবি’র সদস্যরা অবস্থান নেন। বিএসএফের কোম্পানি কমান্ডারকে ডেকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।