৩ ঘণ্টা সহিংস বাধার মুখে চিন্ময় দাসকে কারাগারে নিল পুলিশ, আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ-ভাঙচুর

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৩৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুরের পর আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ, ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালত জামিন নামঞ্জুর করে চিন্ময়কে দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর চিন্ময়ের সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

আদালতে শুনানি শেষে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় প্রিজনভ্যানে ওঠানো হয়। তবে তাঁর অনুসারীদের বাধার কারণে প্রিজনভ্যানটি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হতে পারেনি। প্রায় তিন ঘণ্টা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ সময় আদালত এলাকার মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়। ঘটনার পর ওই এলাকার পরিস্থিতি থমথমে হয়ে ওঠে।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা একটি মসজিদসহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভাঙচুর চালায়। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আহতদের সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১২টা থেকেই কয়েক শ নারী-পুরুষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। প্রায় তিন ঘণ্টা তারা প্রিজনভ্যান আটকে রাখার পর বেলা ৩টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে যায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে এবং লাঠিচার্জ করে।

বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা একপর্যায়ে আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময় আইনজীবীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে চিন্ময়কে চট্টগ্রাম কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনায় আহত এনামুল হক নামে এক সেবাপ্রার্থী অভিযোগ করেন, তিনি জমি রেজিস্ট্রির জন্য আদালতে এসেছিলেন। তাঁর দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি দেখায় ইসকনের কর্মীরা তাঁর ওপর হামলা চালায়।

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একটি সূত্র জানিয়েছে, আজ বেলা ১১টার দিকে চিন্ময় দাসকে আদালতে তোলা হয়। এ সময় আদালতজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর কড়া নিরাপত্তা ছিল। আদালতে তোলার পর চিন্ময়ের পক্ষে ৫১ জন আইনজীবী ছিলেন।

চিন্ময় দাসের নেতৃত্বে সম্প্রতি চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৮ দফা দাবিতে বেশ কয়েকটি সমাবেশ হয়। গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময়সহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। ওই মামলার বাদী ছিলেন মো. ফিরোজ খান নামে এক বিএনপি নেতা। মামলার পরপরই দুজনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গতকাল সোমবার বিকেলে সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, এরপর চিন্ময়কে রাতেই চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। চিন্ময় বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর পুণ্ডরিক ধামের অধ্যক্ষ।

এদিকে, চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের পর তাঁর মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ করেছে সনাতনীরা। এর আগে, সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে চিন্ময় দাসসহ আরও কয়েকজনকে গত জুলাইয়ে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

চট্টগ্রামের হাজারি গলিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে ‘ইসকন বাংলাদেশ’—আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারীর এই বহিষ্কারের কথা জানান।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions