রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ পুনর্গঠনে তীব্র ক্ষোভ জনমনে: বিতর্কিত নিয়োগ বাতিলের দাবি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৪১ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- অন্তর্বর্তীকালীন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ বাড়ছে। এ নিয়ে উঠেছে চরম অনিয়মের অভিযোগ। এতে আইন লঙ্ঘন করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দীঘিনালা উপজেলার কবাখালী গ্রামের বাসিন্দা প্রতুলচন্দ্র দেওয়ানকে করা হয়েছে পুনর্গঠিত অন্তর্বর্তী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য। এছাড়া প্রতুল দেওয়ান ছিলেন পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার ব্যক্তিগত সহকারী ও সাবেক কর্মস্থলের (ইউএনডিপি) সহকর্মী। অন্য সদস্যদেরও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে। পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করা হচ্ছে। নবগঠিত অন্তর্বর্তী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রত্যাখান করে অবিলম্বে তা বাতিল চেয়ে পুনর্গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। বিগত ৫আগষ্ট ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিদায় এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল এই নতুন বাংলাদেশ থেকে এখনো বৈষম্য দূর হয়নি। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের তৈরি এবং ফ্যসিষ্টদের দোসর পার্বত্য উপদেষ্টা হাসিনা সরকারের আমলের সাবেক রাষ্ট্র দূত পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমার পদত্যাগসহ রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদে বিতর্কিত সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সদস্য এবং জজকোর্টে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিম রায় পাম্পুসহ ৩ব্যক্তির নিয়োগ বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে।

রোববার (২৪ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়। এসয় বৈষম্য বিরোধী সাধারণ নাগরিক সমাজ-রাঙ্গামাটি, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রাঙ্গামাটি ইসলামী আন্দোলন ও রাঙ্গামাটি বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন এক যোগে এই মানববন্ধনে অংশ গ্রহন করেন। মানববন্ধন থেকে হুশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখবেন এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। অন্যথায় পরিষদ সদস্য থেকে বঞ্চিত ৪ উপজেলাবাসী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা ও স্থানীয় জনতা রাজনৈতিক দল সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, জুড়াছড়ি উপজেলা বাসীর পক্ষে রাঙ্গামাটি জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাজীব চাকমা, কাউখালী উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ তারা মিয়া, বরকল প্রেস ক্লাবের (সাবেক) সভাপতি পুলিন বিহারী চাকমা, শিক্ষানবীশ আইনজীবী এমদাদ হোসেন,রাজস্থলীর (সাবেক) ইউপি চেয়ারম্যান উথান মারমা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা রাকিব হাসান, ইসলামী আন্দোলন রাঙামাটি পৌর কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুর রউফসহ আরো অনেকে।

মানববন্ধনে বক্তারা বিভিন্ন অভিযোগ এনে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রতিটি উপজেলা থেকে একজন প্রতিনিধি রাখার রেওয়াজ থাকেলে হলেও ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর যে প্রজ্ঞাপন হয়েছে সেখানে কাউখালী, রাজস্থলী, বরকল ও জুরাছড়ি চারটি উপজেলা থেকে কোন প্রতিনিধি রাখা হয়নি। জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে কেবল ৬ উপজেলা থেকে চেয়ারম্যানসহ ১৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে কেবল রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা হতে ৫জন নারী ও ৪জন পুরুষ সহ মোট ৯জন সদস্যকে রেওয়াজ বর্হিভুত ভাবে নিয়োগ দিয়ে পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার স্বেচ্ছাচারিতা, পক্ষপাতিত্বমূলক, স্বজনপ্রীতি সূচক ফ্যাসিস্ট মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। যাদের পরিষদে রাখা হয়েছে তারা পতিত সরকারে প্রতিনিধি, দোসর, হত্যা মামলার পলাতক আসামী, পার্বত্য উপদেষ্টার কর্মচারী ও আত্মীয়স্বজন রয়েছেন। আমরা এদেরকে প্রত্যাখ্যান করছি। তাদেরকে পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে ছাত্র জনতার আন্দোলনে আত্মহুতি দেয়া শহীদদের রক্তের সাথে বেইমানী করা হয়েছে।

এসময় তারা উল্লেখ করেন, জেলা পরিষদ সদস্যদের বেশির ভাগ পার্বত্য উপদেষ্টার ঘনিষ্ট আত্মীয় এবং আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগী দোসর। তাদের মধ্যে রাঙাবী তঞ্চঙ্গ্যা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার মনোনীত সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক দুর্নীতিবাজ রেমলিয়ানা পাংখোয়ার বড় ভাই লাল ছোয়াক পাংখোয়ার স্ত্রী এবং ড্যানিয়েল লালমুয়ান সাং পাংখোয়া রেমলিয়ানার ভাই। দেবর-ভাবী দুজনকেই সদস্য নিয়োগ দিয়ে অন্যদের বঞ্চিত করা হয়েছে। রাঙাবীকে তঞ্চঙ্গ্যা প্রতিনিধি বিবেচনায় সদস্য করা হলেও তিনি বৈবাহিক সূত্রে মূলত পাংখোয়া জনগোষ্ঠী সমাজের। রাঙাবী পার্বত্য উপদেষ্টা সুপ্রদীপের সাবেক কর্মস্থলের (ইউএনডিপি) সহকর্মী। রাঙাবী পাংখোয়া সম্প্রদায় বিয়ে করায় তিনি তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন না। তাই তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বৈশালী চাকমা সুপ্রদীপের ঘনিষ্ট আত্মীয়ও প্রতিবেশী। সাগরিকা রোয়াজা এককালে জাতীয় পাটি করতেন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনিও উপদেষ্টা সুপ্রদীপের সাবেক কর্মস্থলের (পার্বত্য চট্টগ্রামউন্নয়ন বোর্ড) সহকর্মী ডজিত্রি পুরারমা। বরুন বিকাশ দেওয়ান পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক সংসদ-সদস্য দীপংকর তালুকদারের মনোনয়নে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় বিবেচনায় রাঙ্গামাটি জেলা ক্রীড়াসংস্থার সম্পাদক ছিলেন। রাঙ্গামাটির মুক্তিযোদ্ধা শহিদ আব্দুস শুক্কুর স্টেডিয়ামকে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে নামকরণ করে ছিলেন তিনি।

নাইউপ্রু মারমা রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের নেতা বাচ্চুমং মারমার স্ত্রী। লুৎফুন্নেসা বেগম গত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক বন ও পরিবেশ এবং পর রাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের পারিবারিক এনজিও সুখী বাংলা ফাউন্ডেশনের সহযোগী সংস্থা পর্বত মানব উন্নয়নসংস্থা-পাড়ার নির্বাহী পরিচালক আব্বাস উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী। আব্বাসের বিরুদ্ধে তার কথিত এনজিও পাড়ার মাধ্যমে জল বায়ু ফান্ডের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রযেছে। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগী।

দয়াল দাশ নানিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। একই উপজেলার অপর সদস্য প্রনতি রঞ্জন খীসা বুড়িঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। বর্তমানে এলাকায় থাকেন না। তিনি হত্যা মামলার চার্জ শীটভুক্ত পলাতক আসামি। তার বিরুদ্ধে জি আর নং-৩১৯/ ২০১৮ মামলার রাঙ্গামাটির আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কাপ্তাইয়ের ক্যওসিংমং মারমা উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা। বর্তমানে তার বড় ছেলে উক্যচাই মারমা কাপ্তাই উপজেলার চিৎমরম ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি এবং ছোট ছেলে হ্লাক্যসাই মারমা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনানের ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

মিনহাজ মুরশীদ লংগদু উপজেলার বাসিন্দা হলেও তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদক ইনানের রুমমেট ছিলেন। তাই ছাত্রলীগের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল তার। হাবীব আজম বাঙালী ভিত্তিক ছাত্র সংগঠনে জড়িত থাকলেও ফ্যাসিস্ট সরকারের সাবেক সংসদ-সদস্য দীপংকর তালুকদারের সহযোগী হিসাবে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। এছাড়া রাঙ্গামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য দুর্নীতিবাজ মো. মুছা মাতব্বরের ভাতিজি জামাই।

এসময় বক্তারা আরও বলেন, এছাড়াও রাঙ্গামাটির আদালতে পিপি, এপিপি, অতিরিক্ত পিপি নিয়োগেও বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয় লোকজনকে নিয়োগ দেওয়ায় ছাত্র জনতার রক্তের সাথে বেইমানী করা হয়েছে। এসব নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় রাঙামাটির আদালতে পিপি, এপিপি, অতিরিক্ত পিপি নিয়োগের দাবি জানানো হয়। সেইসাথে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্নগঠন করে বঞ্চিত চার উপজেলা হতে প্রতিনিধি নিয়োগ করে রাঙ্গামাটিপার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্নগঠন এবং রাঙ্গামাটির আদালতে নিয়োগকৃত পিপি, এপিপি ও অতিরিক্ত পিপি নিয়োগের দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।

উল্লেখ্য অন্তর্বর্তীকালীন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্নগঠনে বঞ্চিত কাউখালী, বরকল, জুড়াছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলা থেকে প্রতিনিধি অন্তভুক্ত করার দাবীতে ইতিমধ্যে সাংবাদিক সন্মেলন, প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি পেশ করা হয়েছে। মানববন্ধনে জানানো হয় অন্তর্বর্তীকালীন রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে বঞ্চিত চার উপজেলা কাউখালী, বরকল, জুড়াছড়ি ও রাজস্থলী থেকে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে পুর্নগঠন করা না হলে ভবিষতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions