ডেস্ক রির্পোট:- তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে সেই সরকারের অধীনে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে। যেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের প্রভাব না পড়ে। একই সঙ্গে লক্ষ রাখতে হবে যেন মেরুদণ্ডসম্পন্ন, লজ্জাবোধ ও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনার পদে অধিষ্ঠিত হন। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার’ বিষয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় সম্পাদকরা এসব সুপারিশ করেন। সভা শেষে সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তাঁরা যে নির্বাচনি অপরাধ করেছেন, তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায় আলোচনা হয়েছে। তবে তা নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি আমরা। গত জাতীয় তিন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে আমরা সুপারিশ করব। ভোটার তালিকা এনআইডির সঙ্গে যুক্ত হলে নির্বাচনের আগের দিনও ভোটার হতে পারবেন ভোটাররা সে ব্যবস্থা আমরা হাতে নিচ্ছি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বদিউল আলম মজুমদার আরও বলেন, প্রিন্ট মিডিয়ার সম্পাদকরা নারীর ক্ষমতায়ন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন যাতে জাতীয় নির্বাচনের আগে হয়, প্রবাসীরা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট যাতে প্রকাশ করা হয় এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা যে বিষয়গুলোর কথা ভাবছিলাম সম্পাদকরা সেগুলোর ওপর জোর দিয়েছেন।
এ সময় আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান বলেন, বৈঠকে গণমাধ্যমকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য বলা হয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা, স্থানীয় সরকার বা জাতীয় নির্বাচনে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রবাসী ভোটারদের কার্যকারিতা রক্ষা করতে হলে দীর্ঘসূত্রতার ব্যাপার আছে, তাদের ভোট দেওয়ার বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বিবৃত হওয়া দরকার। আইনের পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে হলে তা-ও করতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রধানসহ অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে। যাদের মেরুদণ্ড আছে, যাদের আত্মসম্মানবোধ আছে এবং যাদের লজ্জা আছে তাদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া উচিত। বিগত আওয়ামী লীগ আমলের কমিশনগুলো দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। নারীদের সংরক্ষিত আসন ১০০ এবং সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সংবাদকর্মীসহ যারা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন তাদের পোস্টাল ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের জন্য স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো করতে হবে।
প্রথম আলোর যুগ্মসম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান বলেন, যিনি যে এলাকার বাসিন্দা, তিনি সে এলাকার প্রতিনিধিত্ব করবেন। ঢাকায় থেকে খাগড়াছড়ি কিংবা দিনাজপুরে প্রতিনিধিত্ব করবেন এটি ন্যায়সংগত নয়। এতে সে এলাকার ভোটাররা বঞ্চিত হন। টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় খরচে নির্বাচনি প্রচার করতে হবে।
ডেইলি স্টারের সিনিয়র সাংবাদিক গোলাম মোর্তোজা বলেন, ২০১৪ সালের রকিব কমিশন, ২০১৮ সালের নূরুল হুদা কমিশন ও ২০২৪ সালের আউয়াল কমিশন থেকে প্রকৃত তথ্য জানতে হবে। তাদের কাছ থেকে জানতে হবে ভোটারবিহীন নির্বাচন কেন করেছে? নির্বাচনি আসনবিন্যাসে নারীর আসন ৩০ থেকে বাড়িয়ে ১০০ করতে হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে আমরা কিছু পরামর্শ দিয়েছি। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনও তাদের অধীনে হতে হবে। ভোটার তালিকা করা সময় এবং অর্থের অপচয় মনে হয়। ভোটার তালিকা করার সময় এনআইডি কার্ড ব্যবহার করা হয়, সেটিকেই কেন আমরা ভোটার কার্ড হিসেবে ব্যবহার করি না?