রণক্ষেত্র সায়েন্সল্যাব

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৩৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- রাজধানীর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সায়েন্সল্যাব এলাকা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলা এই সংঘর্ষ থামাতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। দুপুরের পর শুরু হওয়া সংঘর্ষ সেনাসদস্য ও পুলিশের চেষ্টায় সন্ধ্যায় নিয়ন্ত্রণে আসে। বেলা ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর ও এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে দফায় দফায় চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ। এসময় এলাকাটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকাল ৫টায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা যৌথভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সরজমিন দেখা যায়, দুপুর দুইটার দিকে ঢাকা কলেজের একদল শিক্ষার্থী ধানমণ্ডি-১ নম্বর রোড দিয়ে ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে ছুড়তে ধাওয়া দিয়ে ২ নম্বর স্টার কাবাবের দিকে এগিয়ে যায়। তাদের কয়েকজনের গায়ে কলেজ ড্রেস থাকলেও বাকিরা ছিল সিভিল ড্রেসে। অন্যদিকে ঢাকা সিটি কলেজের পোশাক পরা একদল শিক্ষার্থী ইট ছুড়তে ছুড়তে পাল্টা ধাওয়া দেয় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের। এসময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘর থেকে বের হওয়া নারী-পুরুষসহ সাধারণ মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। বিকাল ৩টায় ধানমণ্ডি-১ নম্বর রাস্তার মোড়ে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সামিন নামে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ-সাউথের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটান ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। ওই শিক্ষার্থী বলেন, আমি নিউমার্কেটে যাচ্ছিলাম কেনাকাটা করতে। মারামারি দেখে আমি মাত্র বাইকটা সাইড করে দাঁড়িয়েছি, তখনই আমাকে এসে মারধর শুরু করে। উভয় পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে তাদের কলেজের মধ্যে নিয়ে যায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। নিজ কলেজের মধ্যে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢুকে গেট আটকে দিলেও কলেজের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা সিটি কলেজে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এতে কলেজটির জানালার কাঁচ ভাঙাসহ বেশ ক্ষতিসাধন হয়। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেন। এসময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল অবস্থান নেন সায়েন্সল্যাব এলাকায়। তাদের লক্ষ্য করেও টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ধাওয়া দিয়ে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসময় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত রাখতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন পুলিশ সদস্যরা।

আবির নামে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, মূলত ঢাকা সিটি কলেজের একাদশ শ্রেণির এক মেয়ে শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এরই জেরে সিটি কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের এক শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজের ওই শিক্ষার্থীকে মঙ্গলবার মারধর করে। এরপর ঢাকা কলেজের ওই শিক্ষার্থী তার কিছু বন্ধু- বান্ধব নিয়ে সিটি কলেজের ওই ছাত্রকে মারধর করে। এরই জেরে গতকাল সকালে কলেজে যাওয়ার সময় ঢাকা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জুবায়ের আরেফিনকে একা পেয়ে মারধর করে শার্টের পকেট ছিঁড়ে ফেলে। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ওই রাস্তা দিয়ে মোহাম্মদপুর যাওয়ার সময় ঢাকা কলেজের একটি বাসে ভাঙচুর চালায় সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এখান থেকে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপরই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে। আবির বলেন, আমাদের ওপর বারবার হামলা করা হয়েছে। আমাদের অন্তত ২০/৩০ জন আহত হয়েছেন।
অপরদিকে ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার বলেন, কোনো কথা ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা আমাদের কলেজ ড্রেস পরা যাকেই পেয়েছে তাকেই পিটিয়েছে। এখন পর্যন্ত আমাদের কলেজের নূর হোসেন, মো. তুষার, অনিমসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদেরকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উপরন্তু আমাদের কলেজে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।

এদিকে ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য প্রবেশ করায় রাত ৮টার দিকে কলেজের অডিটোরিয়ামে অধ্যক্ষসহ সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বলেন, বৃহস্পতিবার আমাদের কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। কলেজের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের এই ঢাকা কলেজে কোনোদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এভাবে প্রবেশ করে ছাত্রদের ওপর হাত তোলেনি। যা নজিরবিহীন। তাই যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এই কাজ করেছেন তাদের অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে। একই সঙ্গে তাদেরকে ক্ষমা চাইতে হবে।

ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা জোনের উপ- কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক। এই সংঘর্ষের পেছনের আসল কারণ সম্পর্কে জানতে আমাদের তদন্ত চলছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions