স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ের সাইবার যোদ্ধারা এখনো অবহেলিত,প্রবাসী সূর্যসন্তানদের মামলা ওঠেনি

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৫ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- শেখ হাসিনা রেজিমে যখন বিএনপি একের পর এক কর্মসূচি দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর আওয়ামী লীগ ও সম্প্রতি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার শিকার হন; তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার যুদ্ধে আওয়ামী লীগ বার বার পরাজিত হয়েছে। এক ঝাঁক প্রবাসী সাংবাদিক, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট সাইবার যুদ্ধ করে শেখ হাসিনাকে ধরাশায়ী করেছেন। মাদার অব মাফিয়া হাসিনার মুখোশ দেশ-বিদেশে উন্মোচন করেছেন। প্রবাসী ওই সাইবার যোদ্ধারা এখনো রয়ে গেছেন অবহেলিত। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ১০০ দিনেও তাদের বিরুদ্ধে হাসিনা রেজিমে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি।

এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এক কর্মশালা গঠন করে সংসদ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়। সজীব ওয়াজেদের নেতৃত্বে গঠিত এই সংগঠন ২০২৩ সালের ৭ মে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা’ শীর্ষক এ কর্মশালা করেন। এ আরাফাতের নেতৃত্বে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ভারত ও বাংলাদেশের সাইবার যোদ্ধাকে (সাংবাদিক, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ইউটিউবার) মাঠে নামান। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতনের প্রতিবাদী প্রবাসী সাইবার যোদ্ধাকের কাছে টিকতে পারেননি।

হাসিনার বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে দেশ থেকে বিতারিত হয়েছেন বহু সাংবাদিক, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও ইউটিউবার। বিদেশের মাটিতে বসেই তারা শেখ হাসিনার অপকর্ম, দুর্নীতি তুলে ধরেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের অপকর্মের প্রতিবাদ করে বহু মানুষ বিগত ১৫ বছরে বাড়িছাড়া, দেশছাড়া হয়েছেন। যারা প্রবাসে হাসিনার বিরুদ্ধে তথ্যবহুল প্রচারণা চালিয়েছেন তাদের অনেকের আত্মীয়স্বজনকে সরকারের রোষানলে পড়তে হয়েছে। মামলা-হামলায় দুর্বিষহ জীবন কেটেছে প্রতিবাদী সাংবাদিক-ইউটিউবার ও তাদের পরিবারকে। ফ্যাসিস্ট সরকারের হুমকি-ধমকি, মামলার আসামি হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন সাহসী কিছু সাংবাদিক ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। বিদেশে গিয়ে অমানবিক জীবন যাপন করেও তারা অকুতোভয়ে লড়ে গেছেন নিজ দেশের গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠায়। তারা হাসিনার দুঃশাসনের নানা চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে হাজির করেছেন। বিশ্বব্যাপী নানা ফোরামে তুলে ধরেছেন নিপীড়িত বাংলাদেশিদের কথা। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভারতে পালানোয় তাদের ছিল অবিস্মরণীয় অবদান। ৮ আগস্ট শপথ নেয়া অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে ১০০ দিন পার করেছে। এখন পর্যন্ত তাদের মামলাগুলো প্রত্যাহার করা হয়নি এবং তাদের যথাযথ সম্মান দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। শুধু মুশফিকুল ফজল আনসারীকে সচিব পদ মর্যাদায় রাষ্ট্রদূত করা হয়েছে।

হাসিনা রেজিমে বিদেশে থেকে যেসব সাংবাদিক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সাইবার যুদ্ধ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বড় অবদান রেখে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন পিনাকী ভট্টাচার্য, তাসনীম খলিল, ড. কনক সারোয়ার, জুলকারনাইন সায়ের খান সামি, ইলিয়াস হোসেন, আব্দুর রব ভুট্টো, মনির হায়দার, ফাহাম আবদুস সালাম, শাহেদ আলম, মুশফিকুল ফজল আনসারী, সাইফুর সাগর, নাজমুস সাকিব, ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, অলিউর খন্দকার, হাসিনা আক্তারসহ অনেকে। তাদের কয়েকজন দেশে এসে ঘুরে গেলেও মামলাগুলো এখনো তুলে নেয়া হয়নি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের অনেকেই বলছেন, দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এসব প্রতিবাদী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। হাসিনার পতন ঘটানোর স্বীকৃতি হিসেবে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দেয়া হবে বীরের সম্মান। গত ১০০ দিনে বাস্তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

জানা গেছে, প্রবাসী এই দেশপ্রেমী সাংবাদিক, কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের কয়েকজনের স্বজনদের হেনস্তার অভিযোগ গত ১৫ বছরে বারবার সামনে এসেছে। এর জেরে বাংলাদেশে ভিন্নমত দমন করতে অ্যাক্টিভিস্ট ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানির অভিযোগ তুলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল একাধিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। পেশায় চিকিৎসক, ফ্রান্সে থাকা মানবাধিকারকর্মী পিনাকী ভট্টাচার্য। তার ক্ষুরধার বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তিনি তুমুল জনপ্রিয়। তার লাখ লাখ অনুসারী রয়েছেন। মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে একের পর এক ভিডিও বক্তব্য হাজির করেছেন জনগণের সামনে। হাসিনা ও তার ছেলেমেয়ে ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের নানা অপকর্মের তীব্র সমালোচনা করেছেন। আর এ কারণে তার বৃদ্ধ মা এবং মামাকে দেশে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে। চরম হয়রানির শিকার হয়েছেন তারা। জুলাই বিপ্লবের পর বর্তমান সরকারকেও তিনি নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছেন।

সাংবাদিক ড. কনক সারোয়ার ইউটিউব টকশোয় স্বৈরাচার সরকারের মুখোশ উন্মোচন করে গেছেন। এ জন্য তার পরিবারের ওপর অনেক নির্যাতন হয়েছে। কিন্তু তিনি পিছু হটেননি। সরকারের দুর্নীতি আর অনিয়মের ঘটনা বারবারই সামনে নিয়ে এসেছেন। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হয়ে ২০১৫ সালে ৯ মাস জেল খাটার পর ২০১৬ সালে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেও ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর তার বোন নুসরাত শাহরিনকে কারাবরণ করতে হয়। প্রায় ছয় মাস কারাগারে থাকার পর ২০২২ সালের ৩০ মার্চ উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে দেশের বাইরে চলে যান নুসরাত। খ্যাতিমান সাংবাদিক তাসনীম খলিল। সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের প্রধান সম্পাদক। গত কয়েক বছরে একের পর এক অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে সরকারের এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখোশ উন্মোচন করেছেন। কুখ্যাত আয়নাঘরের বিষয়টি নেত্র নিউজই প্রথম সামনে নিয়ে আসে। গুম, ক্রসফায়ার নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করে তোলপাড় তৈরি করে সারা দুনিয়ায়। সুইডেনপ্রবাসী এ সাংবাদিকের মাকে ভয়ভীতি দেখানো হয় বারবার। তার মামলা এখনো তুলে না নিলেও তিনি দেশে এসেছেন মাকে দেখতে। সাংবাদিক মনির হায়দার যুক্তরাষ্ট্রে বসেও অনলাইনে দেশের পক্ষে করেছেন অনেক সেমিনার। ছিলেন বিগত সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। তিনিও দেশে এলেও মামলা রয়ে গেছে।

সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপুল জনপ্রিয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিক হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রকাশ করেছেন ভয়ঙ্কর সব তথ্য। প্রকাশ করেছেন বহু গোপন নথি, যা হাসিনাকে বিপাকে ফেলে। দেশে থাকতে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়। দেশ ছাড়ার পর তার বিরুদ্ধে আরো ১২টি মামলা হয়েছে। একটি মামলায় তাকে ছয় মাসের সাজাও দেয়া হয়। আল-জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রথম আলোচনায় আসেন জুলকারনাইন সায়ের খান সামি। শেখ হাসিনার সমর্থনে জেনারেল আজিজ আহমেদ পরিবার কীভাবে দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়ে তোলে তা আলোয় আসে ওই রিপোর্টে। এরপর একের পর এক নানা অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছেন সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের। সাংবাদিক শাহেদ আলম যুক্তরাষ্ট্র থেকে নানা বিশ্লেষণাত্মক ভিডিও প্রকাশ করেছেন।

সাংবাদিক আব্দুর রব ভুট্টো ভিডিওসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সরকারের অপকর্ম ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখেন। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্য এবং সরকারের মন্ত্রী এমপি দুর্নীতির আর বিদেশে টাকা পাচারের একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

ইউটিউব চ্যানেল নাগরিক টিভির নাজমুস সাকিবও সরব ছিলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে। বিজ্ঞানী ফাহাম আবদুস সালামের ভিডিও বেশ সাড়া ফেলে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তার বক্তব্য বিপুল আবেদন তৈরি করে। ব্লগার আসাদ নূরের বরগুনার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তার বাবা-মাসহ পরিবারের ছয় সদস্যকে দুই দিন আটক রাখাসহ অনেক ঘটনা সামনে এসেছে। এসব ব্যক্তির মামলা তুলে নিতে বিলম্ব করা নিয়ে বিতর্ক চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions