আজ যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন,প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নাকি ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৪১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- একজনের সামনে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার ইতিহাস গড়ার সুযোগ, আরেকজনের সামনে দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ এটি। এ রকমই এক প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যে নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসের সবচেয়ে হাড্ডাহাড্ডি এ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে কে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন, তা আগেই বলাটা যেন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ এক জনমত জরিপ বলছে, গেম চেঞ্জার সাত রাজ্যে কমলার চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য জটিল নির্বাচনী পদ্ধতির কারণে এসব জনমত জরিপের তথ্যও অনেক সময় মিথ্যা হতে দেখা গেছে। এ রকম অবস্থায় গতকাল সোমবার নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে গেম চেঞ্জার তথা দোদুল্যমান সাত রাজ্য চষে বেড়ান প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী ডেমোক্রেটিক পার্টির কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। শেষ সময়েও জনগণকে নানা প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি পরস্পরকে আক্রমণ করে তাদের বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এদিকে আগাম ভোট দেওয়ার সময় ব্যালট বাক্সে আগুন দেওয়া ও ব্যালট পেপার চুরির ঘটনায় নির্বাচন ঘিরে জনমনে এক ধরনের আতঙ্কও বিরাজ করছে। সেইসঙ্গে নির্বাচনে হারলে ডোনাল্ড ট্রাম্প তা মেনে না-ও নিতে পারেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ, গত নির্বাচনের হার এখনো মেনে নেননি ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৫০টি রাজ্যে ভোট হলেও ফল নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সাতটি রাজ্য, যাদের সুইং স্টেট বা দোদুল্যমান রাজ্য বলে। এসব রাজ্যের মানুষ নির্বাচনের দিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে, কাকে ভোট দেবেন তারা। রাজ্যগুলো হচ্ছে পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, উত্তর ক্যারোলাইনা, মিশিগান, অ্যারিজোনা, উইসকনসিন ও নেভাদা। তাই দিনরাত এক করে এ সাত রাজ্যেই ঘুরেফিরে প্রচার চালান মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। গতকাল সোমবার প্রচারের শেষ দিনেও পেনসিলভানিয়ায় সমাবেশ করেন কমলা হ্যারিস। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ার পাশাপাশি নর্থ ক্যারোলাইনা ও মিশিগানে সমাবেশ করেন। দেশব্যাপী সর্বশেষ জনমত জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে কমলা এক পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও এ সাত রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পই এগিয়ে রয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।

আটলাসইন্টেলের এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, সুইং স্টেটগুলোতে এগিয়ে আছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে বলা হয়, জরিপে অংশ নেওয়া প্রায় ৪৯ শতাংশ ভোটার বলেছেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই ভোট দেবেন তারা। জরিপে প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটে এগিয়ে রয়েছেন রিপাবলিকানরা। নভেম্বরের প্রথম দুই দিন অনুষ্ঠিত এ জরিপে অংশ নেন মোট ২ হাজার ৫০০ ভোটার। অবশ্য জনমত জরিপের তথ্যকে অনেকে আমলে নিচ্ছেন না। কারণ, পপুলার ভোটে বিপুল জয়ের পরও জটিল ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির কারণে হারের ইতিহাস রয়েছে। তা ছাড়া মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছাড়াও রয়েছেন আরও চার প্রার্থী যাদের মধ্যে গ্রিন পার্টির জিল স্টেইন বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াতে পারেন সুইং স্টেটগুলোতে। এসব রাজ্যে কমলার অনেক ভোট কাটতে পারেন জিল স্টেইন, যা ট্রাম্পের পক্ষে যেতে পারে। অনেকে মনে করেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে জিল স্টেইনের কারণে হিলারি ক্লিনটন জিততে পারেননি। ডেমোক্রেটিক পার্টি এবারও জিল স্টেইনকে নিয়ে তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ২৪ কোটি ৪০ লাখ। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন, যা একটি রেকর্ড। ভোটের মাঠে থাকবেন প্রায় ৮ লাখ নির্বাচন কর্মী। নির্বাচন ঘিরে নাশকতার আশঙ্কা থাকায় সারা দেশেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আগাম ভোট চলাকালে কয়েকটি রাজ্যে ব্যালট বাক্সে আগুন দেওয়া ও ব্যালট পেপার চুরির ঘটনা কেন্দ্র করে জনমনে আতঙ্কও বিরাজ করছে। তা ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর দুবার হামলা ও কয়েকটি রাজ্যে কমলা হ্যারিসের ক্যাম্প অফিসে হামলার ঘটনা নির্বাচন নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আতঙ্ক বাড়াচ্ছে রোববার ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যটিও। এদিন তিনি বলেন, ২০২০ সালের ফল ভুয়া ছিল। তার উচিত হয়নি, ওই ফলের ভিত্তিতে হোয়াইট হাউস ছেড়ে চলে যাওয়া। ট্রাম্প সে নির্বাচনের ফল এখনো মেনে নেননি। এবারও হারলে মেনে না নেওয়ার আশঙ্কা দেখা

দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে পারেন ট্রাম্প। আর সেরকমটা হলে এবারও ফল প্রকাশ নিয়ে বেশ জটিলতা তৈরি হতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে কী করণীয় সেটা অবশ্য ঠিক করে রেখেছে ডেমোক্র্যাট শিবির। তবে সুইং স্টেটগুলোতে যদি খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়, সেক্ষেত্রে ফল প্রকাশে দেরি হতে পারে। সার্বিক দিক দিয়ে তাই এটি হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের অন্যতম টানটান এক প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কোটি কোটি মানুষ তাকিয়ে আছেন বিশ্ব রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা দেশটির এ নির্বাচনের দিকে। প্রথমবারের মতো কোনো নারী প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে যেতে পারেন কি না সেটা দেখার জন্য যেন উন্মুখ হয়ে আছেন সবাই। কারণ এ ইতিহাস যে গড়া হয়নি মার্কিন জনগণের। ২০১৬ সালে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন এ রেকর্ডের খুব কাছাকাছি গেলেও শেষ পর্যন্ত হোয়াইট হাউসে যাওয়া হয়নি তার। পপুলার ভোটে ১০ লাখের বেশি ভোটে এগিয়ে থাকার পরও জটিল ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতিতে হেরে যাওয়ায় আশাভঙ্গ ঘটে মার্কিন জনগণের। কমলা হ্যারিস এবার সে রেকর্ড গড়তে পারেন কি না সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

ব্যালট পেপারে ঠাঁই পেল বাংলা : এদিকে নির্বাচনে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের ব্যালট পেপারে ইংরেজির পাশাপাশি যে চারটি বিদেশি ভাষা ঠাঁই পেয়েছে, সেসবের একটির নাম বাংলা। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থা বোর্ড অব ইলেকশন্সের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য শাখার নির্বাহী পরিচালক মাইকেল জে রায়ান সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। নিউইয়র্কের প্রধান শহর নিউইয়র্ক সিটিতে আয়োজিত সেই ব্রিফিংয়ে রায়ান বলেন, ‘অভিবাসী ভোটারদের সুবিধার জন্য ব্যালট পেপারে ইংরেজির পাশাপাশি ৪টি ভাষা অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বোর্ড অব ইলেকশন্স নিউইয়র্ক শাখা। এই ভাষাগুলো হলো চীনা, স্প্যানিশ, কোরিয়ান এবং বাংলা।’ নিউইয়র্ক সিটির বিখ্যাত টাইমস স্কয়ার এলাকার একটি দোকানে কাজ করেন শুভাশীষ, যিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিউইয়র্কে গিয়ে স্থায়ী হয়েছেন। এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে শুভাশীষ বলেন, ‘আমি নিজে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ, তবে এখানে আমাদের কমিউনিটিতে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা বাংলা ভাষার ব্যালট পেপার দেখলে স্বস্তি বোধ করবেন। ভোটকেন্দ্রে এটি তাদের জন্য সহায়ক হবে। আমি নিশ্চিত যে আমার বাবা এই ব্যাপারটি পছন্দ করবেন।’ প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রাজ্যটি অধিবাসী অধ্যুষিত। দেশটির মোট অভিবাসীদের একটি বড় অংশ থাকেন নিউইয়র্ক সিটিসহ এই রাজ্যের বিভিন্ন শহরে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গোটা নিউইয়র্কে ২ শতাধিক ভাষায় কথা বলেন লোকজন। এসবের মধ্যে হিন্দি, পাঞ্জাবি, গুজরাটি, তামিলসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষাও রয়েছে। কিন্তু সেসবের মধ্যে ভারতীয় ভাষা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে একমাত্র বাংলাকে। ব্রিফিংয়ে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে মাইকেল জে রায়ান বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে (ব্যালট পেপারের জন্য) অন্যান্য ভারতীয় ভাষাকে বাদ দিয়ে শুধু বাংলাকে বেছে নেওয়ায় অন্য ভাষাভাষী ভারতীয়রা হয়তো মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন, কিন্তু এটা ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions