নতুন বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে ইতিহাস গড়তে পারেন ড. ইউনূস

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪
  • ৫০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে এবং আগস্টের শুরুতে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য করার পর, বাংলাদেশ সত্যিকারের গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে চলার এক অনন্য মুহূর্ত পেয়েছিল। বর্তমান বাংলাদেশের নেতৃত্বে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং এতে সুশীল সমাজের নেতারা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
ড. ইউনূস বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অভিজ্ঞতার আলোকে সামাজিক সংহতি তৈরি করতে এবং দেশের নিপিড়িত অতীতের একটি অতি প্রয়োজনীয় পরিবর্তণ আনতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি বলপূর্বক গুম ও নির্যাতনের জন্য দায়ী নিরাপত্তা সংস্থাগুলি ভেঙে দিতে পারেন। এবং সুশীল সমাজের প্রতি সমর্থন নিশ্চিত করার জন্য এনজিও সংক্রান্ত অধিদপ্তরের সংস্কার করতে পারেন, অথবা বিদেশী অনুদান আইন সংশোধন করতে পারেন, যা আন্তর্জাতিক তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের জন্য আমলাতান্ত্রিক গোলকধাঁধা তৈরি করে।
ড. ইউনূসের দ্রুত কাজ করা উচিত। কারণ, ইতিহাস আমাদের বলে যে সুযোগের মুহূর্ত এবং এইরকম আশাবাদ ক্ষণস্থায়ী হতে পারে। বিপ্লবের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী সরকার অপসারণের পর গণতান্ত্রিক কাঠামো অভিজাতদের ক্ষমতার আবর্তনের শিকার হতে পারে। এবং অচিরেই গণতন্ত্রপন্থী উপাদানগুলি পরিকল্পনার অভাবে দ্রুত গতিশীল ঘটনা দ্বারা পথচ্যুত এবং দ্রবিভূত হয়ে যেতে পারে।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে, জাতীয়তাবাদী এবং কর্তৃত্ববাদী শক্তি, যারা কট্টরপন্থী এবং সামরিক বাহিনীর সাথে তাদের জোটের কারণে ক্ষমতা ধরে রাখে, ক্রমবর্ধমান নেতৃত্ব শূন্যতায় তারা প্রায়শই ক্ষমতায় ফিরে আসে। অনেক সময় সামরিক বাহিনী নিজেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। অন্যান্য ক্ষেত্রে, গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতিনিধি হিসাবে উত্থিত নেতারা সবকিছু একসাথে রাখতে যেয়ে নিজেরাই দমন-পীড়নের পথ বেছে নেন।
অভিজাতদের কালো থাবার মুখে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো কীভাবে অটল থাকতে পারে, তার একটি উদাহরণ চিলি। শাসক বাহিনী থেকে উল্লেখযোগ্য দমন-পীড়ন সত্ত্বেও, ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে জনপ্রিয় বিক্ষোভ চিলিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অবসর ভাতাসহ একাধিক সংস্কারের দিকে পরিচালিত করেছিল।
গুয়াতেমালাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে পূববর্তী সরকারের দ্বারা বারবার বাধা পাওয়া সত্ত্বেও জানুয়ারিতে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহন সম্ভব হয়েছিল। এই উভয় ক্ষেত্রেই সুশীল সমাজের দলগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের উচিত এই উদাহরণগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া, যেখানে নাগরিক সমাজ কঠিন ও জটিল পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করেছে।
যাইহোক, ড, ইউনূসের সরকারের এমন ঘটনাগুলি থেকেও শিক্ষা নেওয়া উচিত, যেখানে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি শক্তিশালী স্বৈরচারীদের ক্ষমতা পতনে সাহায্য করলেও, শেষ পর্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত, গণতন্ত্রবিরোধী নেতাদের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে বাধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
যদিও, কোনো নতুন সরকারের কাছ থেকে সমস্ত ক্ষেত্রে রাতারাতি সন্তোষজনক সংস্কার এবং একটি নিখুঁত গণতন্ত্র, বিশেষ করে কয়েক দশকের স্বৈরাচারী শাসনের পর আশা করা অবাস্তব, কিন্তু বিশ্বজুড়ে অগণিত উদাহরণ দেখায় যে দীর্ঘমেয়াদী কর্তৃত্ববাদী নেতাদের রেখে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের উপর একটি উন্নত ভবিষ্যত গড়ে তোলা সম্ভব যতক্ষণ নতুন নেতৃত্ব দৃঢ় সংকল্পের সাথে কাজ করে, সুশীল সমাজের সাথে সংলাপ চালিয়ে যায় এবং গণতান্ত্রিক পথে থাকে।
যদি, অধ্যাপক ইউনূস অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেন এবং বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেন, তাহলে তিনি নেলসন ম্যান্ডেলার মতো অনুপ্রেরণাদায়ী অবিস্বরণীয় ব্যক্তিত্ব এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির জন্য উদাহরণ হয়ে উঠতে পারেন, যেখানে নাগরিক স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে অবদমিত। ড, ইউনূস যদি একটি সফল বিপ্লবোত্তর উত্তরণের উদাহরণ সৃষ্টি করতে চান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকেই তাকে সমর্থন করতে প্রস্তুত।আল জাজিরা

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions