রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে অকার্যকর হয়ে পড়েছে কোটি টাকার সোলার ফেন্সিং

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৪
  • ১১৯ দেখা হয়েছে

রাঙ্গামাটি:- পাহাড়-প্রকৃতি বেষ্টিত রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলায় রয়েছে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর বিচরণক্ষেত্র। বিশেষ করে দেশের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের অবস্থান এখানেই। যেখানে বন্যহাতি, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিচরণ রয়েছে। তবে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন বনাঞ্চলে গাছ, বাঁশসহ বিভিন্ন বনজ সম্পদ দিন দিন উজাড় হয়ে যাওয়ার ফলে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে এসে তান্ডব চালাচ্ছে। অপরদিকে বন, জঙ্গলের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন স্থাপনা, বসতি। এতে করে খাদ্য সংকটসহ নানাবিধ কারণে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে নেমে আসছে। তবে বর্তমানে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলের লোকালয়ে দিন দিন বাড়ছে বন্যহাতির উপদ্রব। প্রায়সময় বন্যহাতির পাল লোকালয়ে এসে বিভিন্ন বসতি, স্থাপনার ক্ষতি সাধন করছে। অপরদিকে হাতির আক্রমণে আহত, নিহত হওয়ার মতো ঘটনাও রয়েছে কাপ্তাইয়ে।

তবে হাতি-মানুষের মাঝে এই দ্বন্দ্ব নিরসনে একটি বৃহৎ উদ্যোগ নিয়েছিলো বনবিভাগ। যার প্রেক্ষিতে আধুনিকতার ছোঁয়ার মাধ্যমে হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনে কোটি টাকা ব্যয়ে বসানো হয়েছিল সোলার ফেন্সিং। কিন্তু সোলার ফেন্সিং চালু হওয়ার এক থেকে দেড় বছর যেতে না যেতেই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। যার ফলে হাতি-মানু্ষরে দ্বন্দ্ব নিরসনের পরিকল্পনাটিও ভেস্তে যাচ্ছে

জানা যায়, রাঙ্গামাটি দক্ষিণ বন বিভাগের কাপ্তাই-কর্ণফুলী রেঞ্জের জাতীয় উদ্যান এলাকায় বন্যহাতি আক্রমণ থেকে মানুষের প্রাণহানি ও ফসলের ক্ষতি মোকাবেলায় সোলার ফেন্সিং স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য হাতি-মানুষের মাঝে দ্বন্দ্ব নিরসনে দক্ষিণ বন বিভাগ কাপ্তাই রেঞ্জে ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় করে সোলার ফেন্সিং প্রকল্প স্থাপন করেছে। যা ২০২১-২২ অর্থ বছরে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও আবাসস্থল উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কাপ্তাই রেঞ্জের এলাকায় স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে সোলার ফেন্সিং স্থাপনের পর বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত বন্যপ্রাণী লোকালয়ে নেমে আসেনি এবং হাতির উপদ্রব কিছুটা কমেছিল। কিন্তু এক থেকে দেড় বছর যেতে না যেতে এসব সোলার ফেন্সিং এ দেখা দেয় বিভিন্ন সমস্যা। তার মধ্যে সোলার ফেন্সিং তারের ওপর পাহাড় ধস, গাছের ডাল-পালা পড়ে ভেঙে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেইসাথে সোলার ফেন্সিং এর দামী ব্যাটারি ও প্যানেল চুরি হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এছাড়া নিয়মিত সোলার ফেন্সিং পরিচালনার জন্য একজন কর্মচারী নিয়োজিত থাকার কথা থাকলেও তার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমানে অযতœ, অবহেলায় জর্জরিত অবস্থায় পড়ে আছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সোলার ফেন্সিং।

এদিকে কাপ্তাইয়ে সোলার ফেন্সিং অকার্যকর হওয়াতে প্রায়সময় বন্যহাতি লোকালয়ে নেমে আসছে বলে ধারণা করছে স্থানীয়রা। এবিষয়ে কথা হলে কাপ্তাই ইউনিয়ন এর বাসিন্দা মোশরফ হোসেন, মোহাম্মদ বাবু সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, সোলার ফেন্সিং চালুর কিছুদিন পর বন্যহাতির উপদ্রব কমেছিল। কিন্তু যখন থেকে এটি অকার্যকর হয়ে পড়ে তখন থেকে আবারো হাতির উপদ্রব আরো বেশি বাড়তে থাকে। বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই কাপ্তাইয়ের লোকালয়ে বন্যহাতি নেমে এসে তান্ডব চালাচ্ছে এবং মানুষের জানমালের ক্ষতি করছে। এতে আতংকিত অবস্থায় রয়েছে এলাকার মানুষ।

অনেকে আবার আক্ষেপ করে বলেন, কোটি টাকা ব্যয়ে এই সোলার ফেন্সিং এভাবে অযত্ন অবহেলায় অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকাতে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে সরকারের। এছাড়া একবছরের মধ্যে এত দ্রুত কিভাবে এত দামী জিনিস নষ্ট হয়ে যায় সেটিও অনেকে প্রশ্ন রেখেছেন। এইখাতে কোন অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে কিনা সেটাও প্রশাসনকে খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেন তারা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বনবিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এএসএম মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, পাহাড় ধস ও ঝড় তুফানে গাছের ডাল-পালা পড়ে সোলার ফেন্সিং কিছু কিছু জায়গায় তার নষ্ট হয়ে গেছে। এবং দুটি সোলার ফেন্সি ব্যাটারি ও প্যানেল চুরি হওয়ায় কাপ্তাই থানায় জিডি করা হয়েছে। তবে একটি ব্যাটারি সংযুক্ত করা হয়েছে। বাকীগুলো প্রক্রিয়াধীন আছে। এদিকে নানা সমস্যা জর্জরিত হয়ে দীর্ঘদিন সোলার ফেন্সিং বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু করার জন্য বিষয়গুলো দক্ষিণ বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট তিনি জানিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন।

এদিকে পার্বত্য দক্ষিণ বন বিভাগ কাপ্তাই সহকারী বন সংরক্ষক মাসুদ আলমের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সোলার ফেন্সিংগুলো সব জায়গায় নষ্ট হয়নি কিছু কিছু জায়গায় নষ্ট হয়েছে। এবং এটি সংস্কার করার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, সোলার ফেন্সিং বা সোলার ফেন্স হচ্ছে এমন একটি আধুনিক প্রযুক্তি, যার দ্বারা বন্য হাতির পাল লোকালয়ে আসতে চেষ্টা করতে চাইলে সোলার ফ্যানসিং এর হালকা বৈদ্যুতিক শক খেয়ে চলে যাবে, তবে এতে বন্য হাতির প্রাণহানি ঘটবে না। হাতি-মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে এটির ভূমিকা আধুনিক বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে।পাহাড়২৪

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions