ডেস্ক রির্পোট:- সচিবালয়ের বাইরেসহ সরকারের যেকোনো দপ্তরে পোস্টিং হওয়া এড়াতে অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (এও-পিও) পদোন্নতি নিতে চাইছেন না। বিদেশে পদায়নের সুযোগ হারানোও সাধারণত তাঁদের এ মনোভাবের কারণ। প্রবণতাটি এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি পদোন্নতি গ্রহণে আপত্তি করা কর্মকর্তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে অনুশাসন জারি করেছে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ পদোন্নতি না নিতে চাওয়ার আবেদনকে ‘অসদাচরণ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এমন আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হওয়া উচিত।
সচিবালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা (এও-পিও) কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ক্যাডারবহির্ভূত উপসচিব পর্যন্ত পদোন্নতি পান। কোনো কর্মকর্তা এসব পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী সচিব হলে সরকারের যেকোনো দপ্তরে তাঁদের পদায়ন করা যায়। স্বরাষ্ট্র, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান, বাণিজ্য এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি সরকারি দপ্তরের কর্মীদের বিদেশে বাংলাদেশ মিশন ও দূতাবাসে পোস্টিংয়ের সুযোগ আছে। কিন্তু সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি পেলে বিদেশের সেই পথ বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্যও অনেক এও-পিও পদোন্নতি নিতে চান না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের বেশ কয়েকজন এও-পিও পদোন্নতি নিতে চান না জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে আবেদনগুলো গ্রহণযোগ্য নয় জানিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য অনুশাসন জারি করেছে।
এক অফিস আদেশে সুরক্ষা সেবা বিভাগ বলেছে, কিছুসংখ্যক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সহকারী হিসেবে পদোন্নতির জন্য নাম আসা সত্ত্বেও অনীহা জানিয়ে আবেদন করেছেন। তাঁরা পদোন্নতি গ্রহণ না করার কারণে নিচের পর্যায়ে থাকা সুরক্ষা সেবা বিভাগের সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিকদের পদোন্নতি পাওয়ার সুযোগ কমে যাচ্ছে। আদেশে বলা হয়, ‘…পদোন্নতির ধারা গতিশীল এবং দাপ্তরিক কার্যক্রমে অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে পদোন্নতিযোগ্য কর্মচারীদের পদোন্নতি না নেওয়ার আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় মর্মে নির্দেশক্রমে অনুশাসন জারি করা হলো।’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সবার লক্ষ্য থাকে পদোন্নতি পাওয়া। পদোন্নতি হলে নিজের সম্মানও বাড়ে। যাঁরা পদোন্নতি চাচ্ছেন না, তাঁদের অন্য উদ্দেশ্য আছে।’
এ বিষয়ে সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব সেখ ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘কেউ পদোন্নতি নেবেন না এমন আবেদন করার আর কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সবার জন্য অনুশাসন জারি করা হয়েছে।’
এও-পিওদের অনীহার ইতিবৃত্ত
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল আইনসচিব থাকার সময় সাবরেজিস্ট্রাররা পদোন্নতি নেবেন না বলে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। এরপর ওই সাবরেজিস্ট্রাররা আবেদন প্রত্যাহার করেন। তার পর থেকে পদোন্নতি না নিতে আবেদনের প্রবণতা বেশ কমে যায়।
ক্যাডারবহির্ভূত সহকারী সচিবের পদ ফাঁকা হলেই জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী এও-পিওদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। এও-পিও পদে সাত বছর হলেই সহকারী সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করা যায়। তবে পদ কম থাকায় সহকারী সচিব হতে এও-পিওদের ১৬-১৭ বছর চাকরি করতে হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সহকারী সচিব অথবা সিনিয়র সহকারী সচিবের পদ সৃষ্টির সুযোগ রেখে কৌশলে সিনিয়র সহকারী সচিবের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে ক্যাডারবহির্ভূত সহকারী সচিবের পদ বাড়ছে না।
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গত ১৪ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে এ নিয়ে এক আবেদন করেছেন। এতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সৃষ্ট পদের এক-তৃতীয়াংশ ক্যাডারবহির্ভূতদের জন্য বরাদ্দ দিয়ে সহকারী সচিবের আরও ২২৪টি, সিনিয়র সহকারী সচিবের ৫৬টি, উপসচিবের ৫৯টি এবং যুগ্ম সচিবের ৩১টি পদ সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়েছে।
পদোন্নতির বিষয়ে অনীহা নিয়ে অভিমত জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে পদোন্নতি দেওয়া হয় জনস্বার্থে, ব্যক্তির স্বার্থে না। যদি কেউ পদোন্নতি না নিতে চান, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হওয়া উচিত। পদোন্নতি না নেওয়ার আবেদন জানানো মানে অসদাচরণ।’আজকের পত্রিকা