ডেস্ক রির্পোট:- বকেয়া বেতন, শ্রমিক ছাঁটাই, কারখানা বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজধানীর মিরপুর-১৪ নম্বরের কচুক্ষেত এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় যৌথ বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে রূপ নেয় পুরো এলাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ার একপর্যায়ে পুলিশ ভ্যান ও সেনাবাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন শ্রমিকরা। তাদের নিবৃত করতে গুলি চালালে ৪ জন গুলিবিদ্ধসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, গতকাল সকাল ৮টার দিকে কাজে যোগ দিতে এসে কারখানার গেট বন্ধ দেখে মিরপুর-১৪ নম্বর কচুক্ষেতের মেইন রোডে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন সিনেটেক্সট, এলিট, ওয়েলটাচ্, ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার গর্মেন্টেসের শ্রমিকরা। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আশেপাশের আরও পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় কচুক্ষেত-ক্যান্টনমেন্ট, মিরপুর-১৩, মিরপুর-১৪সহ পুরো এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের সড়ক ছেড়ে দিতে বললে, বিক্ষুব্ধ পোশাক শ্রমিকরা ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু করেন। আত্মরক্ষায় পুলিশও লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় মিরপুর-১৪ নম্বর সোনালী ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেনাবাহিনীর গাড়িতে ভাঙচুর চালায় ও ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া মিরপুর পুলিশ লাইনের সদস্যদের খাবার পরিবহনের একটি পুলিশ ভ্যানের মালামাল লুট করা শুরু করে তারা। পুলিশ ও সেনা সদস্যরা তাদের ধাওয়া দিলে তারা দৌড়ে পালিয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার একপর্যায়ে শ্রমিকরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় যৌথ বাহিনী শ্রমিকদের রাস্তা থেকে সরাতে গুলি ছুড়লে ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার আল-আমিন, এলিট ফ্যাশনের মোছা. রুমা আক্তার, ওয়েলটাচ গার্মেন্টসের ফয়সাল ও মিরপুর সিনেটেক্সট গার্মেন্টসের শাওন গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া আরও বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে আল-আমিন ও রুমা আক্তারকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বাকি দুজন ফয়সাল ও শাওনকে নেয়া হয় পঙ্গু হাসপাতালে।
গুলিবিদ্ধ আল-আমিনের বাবা আব্দুর রহমান বলেন, আমার ছেলে ক্রিয়েটিভ ডিজাইনার পোশাক কারখানায় কাজ করে। আমাদের গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলার সদর থানার বাইদাঘাটা এলাকায়। বর্তমানে মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় থাকি।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, সকালে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর গাড়িতে কচুক্ষেতে আগুন লাগার খবর পাই আমরা। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদের দু’টি ইউনিট গাড়িগুলোর আগুন নেভানোর কাজ করে। এসব বিষয়ে ভাষানটেক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই রাস্তায় ছিলাম। গার্মেন্টস শ্রমিকরা হঠাৎ করে তাদের আন্দোলন থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা সেনাবাহিনী ও পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরই প্রেক্ষিতে তাদের ছত্রভঙ্গ করার উদ্যোগ নেয় পুলিশ ও সেনা সদস্যরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান বলেন, কচুক্ষেত এলাকায় শ্রমিক বিক্ষোভে আমাদের পুলিশ ভ্যানে আগুন দিয়েছে, সেনা বাহিনীর গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা শক্তি প্রয়োগ করতে বাধ্য হয়েছে। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেশ কয়েকজন পোশাক শ্রমিককে আটক করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।