সংসদ নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪
  • ২৩ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:-আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংসদীয় আসনভিত্তিক, নাকি আনুপাতিক বা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা। দীর্ঘদিন থেকেই নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তনের সেই দাবি আরও জোরদার হয়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠনের পর দেশব্যাপী এ বিষয়ে আলাচনা চাউর হয়। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে এ পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা করেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত একই সেমিনারে রাজনৈতিক দলের নেতারা নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৭ রাজনৈতিক দলের মধ্যে অধিকাংশ দল সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে মতামত দিয়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছে। তবে অন্যতম প্রধান দল বিএনপি ও তার সমমনা কিছু দল এই পদ্ধতি চায় না। দলটি বিদ্যমান সংসদীয় আসন পদ্ধতিতেই নির্বাচন চায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি। এমনকি নির্বাচন পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে এখনো অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কিছুই বলা হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বের ১৭০টি দেশের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশসহ ৯১টি দেশে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে। এ জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশনকে উদ্যোগ নিতে হবে। এর পর সে অনুযায়ী নির্বাচনি আইন-কানুনেও পরিবর্তন আনতে হবে। তবে নির্বাচন পদ্ধতি বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন; তা না হলে সংবিধান সংস্কার কমিশন ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন বিপাকে পড়বে। এদিকে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, এটি নির্বাচন কমিশনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের এখতিয়ার নয়। এটি সংবিধানের বিষয়। সংবিধান সংস্কার কমিশন যদি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তাদের কমিশন কিছু প্রস্তাব দেবে।
নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কোন দল কী বলছে : আগামী সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আসা প্রস্তাব প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, আজকে অনেকে বলেন, সংখ্যানুপাতিক অনুযায়ী নাকি সংসদে আসন থাকতে হবে। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সংসদীয় আসন অনুযায়ী নির্বাচন হয়ে আসছে। এখানে কেউ চাইলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি চাপিয়ে দিতে পারবে না। এ বিষয়ে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির (পিআর) নির্বাচন ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে এক সেমিনারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ‘এ পদ্ধতি চালু হলে কোনো দল এভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী হওয়ার সুযোগ পাবে না। বর্তমানে রাজনৈতিক দল এবং সিভিল সোসাইটিও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবিও তুলছেন।’

সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কাছে জোটের পক্ষ থেকে ২৩টি লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হতে হবে। কোনো আনুপাতিক হার গ্রহণযোগ্য নয়। সম্প্রতি ‘নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই’ শীর্ষক এক সেমিনারে বিএনপি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির বিপক্ষে তাদের অবস্থান তুলে ধরে। তবে সিপিবি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদের প্রতিনিধিরা এ পদ্ধতির পক্ষে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীও তাদের সংস্কার প্রস্তাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালুর কথা বলেছে। ওই সেমিনারে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া ও প্রচলিত ব্যবস্থা পরিবর্তন করে আনুপাতিক ব্যবস্থা জরুরি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট এবং প্রাদেশিক সরকার নিয়ে আলোচনা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ‘না ভোট’ প্রবর্তন করতে হবে।

সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, আনুপাতিক ভোট হলেও সবার অংশগ্রহণ থাকবে। ছোট ছোট দল ক্ষমতায় আসতে পারবে। জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, সংসদ নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক ভোট চেয়েছি আমরা। গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে। সংখ্যানুপাতিক ভোট নিয়ে আমি কারও সমস্যা দেখি না। এদিকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আনুপাতিক পদ্ধতি চালুর দাবি নতুন কিছু নয়। কিছু রাজনৈতিক দল অনেক দিন ধরেই এ দাবি জানিয়ে আসছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭ সালে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেই আলোচনায় জাতীয় পার্টি, সিপিবি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) কিছু দল এই পদ্ধতিতে নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হাবিবুল আউয়াল কমিশনের ডাকা সংলাপেও জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি দল আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছিল। এ ছাড়া গত ১৭ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির সরকার ও নির্বাচন’ শিরোনামে নিবন্ধ লিখেছিলেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সেখানে তিনি সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘এ পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় ব্যক্তি-প্রার্থীর পরিবর্তে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। ৩০০ নির্বাচনি এলাকা থাকবে না। বাংলাদেশ হবে একটি একক নির্বাচনি এলাকা। নির্বাচনে যে দল মোট প্রদত্ত ভোটের যত শতাংশ পাবে, সেই অনুপাতে সংসদে আসন লাভ করবে।বাংলাদেশ প্রতিদিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions