ডেস্ক রির্পোঠ;- পাচারের অর্থ ফেরত আনার লক্ষ্যে এস আলম ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের দেশে-বিদেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)। ইতোমধ্যে বিদেশে থাকা পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এরই ভিত্তিতে দেশের উচ্চ আদালত থেকে এ-সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হতে পারে। এ নির্দেশনার আলোকেই দেশে থাকা সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। একই সাথে বিদেশেও নিয়োগকৃত ফার্মের মাধ্যমে সম্পদ বাজেয়াপ্তের আবেদন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে দুইটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এর পরের ধাপে আরো তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তৃতীয় ধাপে আরো পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার হওয়া সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পাচার করা একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারণা, জালিয়াতি ও হুন্ডির মাধ্যমে এক লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম, তার স্ত্রী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সূত্রে জানা যায়, এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন ও দুই ছেলে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাসসহ ইউরোপে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করেছেন। এসব টাকা দিয়ে তারা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রয় ও ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। পাচারকৃত অর্থে সিঙ্গাপুরে ২৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ক্যানালি লজিস্টিকস প্রাইভেট লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ছাড়া ভুয়া নথি তৈরি, জাল-জালিয়াতি এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বিদেশে পণ্য আমদানি-রফতানি ও বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে নামে-বেনামে ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান শেল কোম্পানি খুলে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এস আলমসহ তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ছেলে আহসানুল আলম ও আশরাফুল আলমসহ তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তির সহযোগিতায় সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধের মাধ্যমে অর্থ পাচার করেছেন। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছি। পাশাপাশি বেক্সিমকো, নাসা ও সামিটের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু শুরু হয়েছে।
অপর দিকে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর এ পর্যন্ত পাঁচ দেশে আট হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ মিলেছে। শুধু যুক্তরাজ্যেই তার ৩৬০টি বাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রেও ৯টি বাড়ি রয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদার তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট চারটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর বড় একটি অংশই পাচার করেছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বের হয়ে এসেছে। এর মধ্যে দুবাই, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড- এই পাঁচ দেশেই বেশি অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। দেশের ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের অভিশাপ এস আলম আটটি ব্যাংক দখলে নিয়ে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা নামে-বেনামে ঋণ নিয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বেশির ভাগ ব্যাংকই এখন গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকিং খাত থেকে নামে-বেনামে নেয়া ঋণের বেশির ভাগ অংশই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এভাবে সামিট, বেক্সিমকোসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই অর্থপাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে নানা কৌশলে বিদেশে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া ও তাদের পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে দেশ থেকে যেসব অর্থপাচারকারীদের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এস আলম, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সামিট, নাসা গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপসহ শীর্ষ অর্থপাচারকারীদের দেশ-বিদেশে থাকা অর্থ শনাক্ত করে তা দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য দেশ-বিদেশে সবধরনের আইনগত ও লজিস্টিক সাপোর্ট নেয়া হবে। পাশাপাশি এসব অপরাধীর দেশে থাকা স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ শনাক্ত করে তা দ্রুত জব্দ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে অভিযোগ ছিল ব্যাংক থেকে অর্থ লুটপাটকারীরা দেশে থাকা তাদের স্থাবর সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তর করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ইতোমধ্যে জানিয়েছিলেন, যারা এসব সম্পদ কিনবে তা নিজ দায়িত্বেই কিনতে হবে। এর দায় দায়িত্ব কেউ নেবে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এস আলমসহ অর্থপাচারকারীদের অর্থ যারাই কিনবে তাদের বিরুদ্ধেই আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।