ডেস্ক রির্পোট:- ছোট-বড় গর্তে ভরা সড়ক। এসব গর্তে পড়ে গাড়ি চলে হেলেদুলে। বৃষ্টি হলে গর্ত আর গর্ত থাকে না, পরিণত হয় ডোবায়। নানা অংশের ঢালাই উঠে গেছে। খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া-গাড়োহাট ১৪ কিলোমিটার সড়কের এমনই বেহাল দশা এখন। সংস্কারের দেড় বছরের মধ্যেই সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন।
এলাকাবাসী ও স্থানীয়দের অভিযোগ, নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে সড়কটি সংস্কার করায় দেড় বছরের মধ্যে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে মাঝেমধ্যে ঘটছে দুর্ঘটনা। সংস্কারের কোনও উদ্যোগ নেই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের বড় গর্তে জমে আছে পানি। দূর থেকে মনে হচ্ছে ডোবা। এর ওপর দিয়ে চলাচল করছে গাড়ি। মালবাহী গাড়ি যাওয়ার সময় কাদাপানিতে একাকার হয়ে যাচ্ছে আশপাশ। অটোরিকশা, ভ্যান ও রিকশা গর্তের কারণে সড়ক ছেড়ে আশপাশের দোকানঘরের পাশ ঘেঁষে চলাচল করছে। পুরো সড়কজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দ। অনেক জায়গায় পিচ উঠে গেছে। এতে ভোগান্তি বেড়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ফুলবাড়ীয়া-গাড়োহাট সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরে যেতে হয় তিন ইউনিয়নের লাখো বাসিন্দার। সড়কটির ১৪ কিলোমিটার সংস্কার করার পর সবাই মনে করেছিলেন দীর্ঘদিন স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবেন। কিন্তু দুই ধাপে সংস্কারের পর দেড় বছর না পার হতেই গর্ত হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে গর্ত থেকে খানাখন্দে রূপ নেয়। এখন পুরো সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। নানা অংশের ঢালাই উঠে গেছে। উপজেলা সদরে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। বেহাল অবস্থা হওয়ায় স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষের চলাচলে ভোগান্তি হচ্ছে। কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসার জন্য যথাসময়ে হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের ভোগান্তির শেষ নেই।
ফুলবাড়ীয়া-গাড়োহাট সড়কের পাশের বাসিন্দা কামাল হোসেন বলেন, ‘এত বড় বড় গর্ত উপজেলার কোনও সড়কে নেই। মানুষের কষ্ট হলেও এ নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। দেড় বছরে সড়কের অস্তিত্ব নেই।’
পথচারী আসলাম মিয়া বলেন, ‘এই সড়ক দিয়ে মালামালবোঝাই ট্রাক ও তিন চাকার বিভিন্ন যানবাহনসহ মোটরসাইকেল চলাচল করে। উপজেলা শহরে যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। সংস্কারের পর দেড় বছরও টেকেনি। ইট, পাথর ও বিটুমিন উঠে ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ঠিাকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক সংস্কার করায় একেবারেই বেহাল হয়ে গেছে। দ্রুত সংস্কার জরুরি।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা সোহেল মিয়া বলেন, ‘এলজিইডি কর্মকর্তাদের নজরদারি না থাকায় ঠিকাদার নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ইচ্ছেমতো কাজ করে প্রকল্পের টাকা তুলে নিয়ে চলে গেছেন। এখনে এলাকাবাসীকে পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’
তবে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন যানবাহন চালকরা। সিএনজি অটোরিকশাচালক সুজন মিয়া বলেন, ‘খানাখন্দের কারণে গাড়ির নাট-বোল্ট খুলে পড়ে যাচ্ছে এবং নষ্ট হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছা যায় না। সম্প্রতি রাতে যাত্রী নিয়ে পৌর শহরে যাওয়ার সময় সড়কের মাঝখানে বড় একটি গর্তে পানি জমেছিল। তখন চাকা গর্তে পড়ে গাড়ি উল্টে যায়। এতে যাত্রীরাও আহত হন। দুর্ভোগ কমাতে সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।’
খানাখন্দের কারণে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে জানিয়ে অটোরিকশার যাত্রী মাহমুদা নাসরিন বলেন, ‘খানাখন্দের কারণে প্রত্যেকটি গাড়ি ধীরগতিতে চলে। এতে জ্বালানি খরচ বাড়ছে অজুহাতে চালকরা দ্বিগুণ ভাড়া নিচ্ছেন। চালকদের কথায় যুক্তি থাকায় বেশি ভাড়া দিয়েই চলাচল করতে হয় আমাদের।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রথম ধাপে ২০২২ সালের শেষের দিকে ফুলবাড়ীয়া-গাড়োহাট সড়কের সাত কিলোমিটার সংস্কারের কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লাল মাহমুদ। এজন্য ব্যয় দেখায় দুই কোটি টাকা। এরপর দ্বিতীয় ধাপে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আরও সাত কিলোমিটারের সংস্কারকাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সাইফুল ইসলাম কামাল। এজন্য ব্যয় দেখানো হয় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। তাদের সব টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সংস্কারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক লাল মাহমুদ ও সাইফুল ইসলাম কামালের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত কবির বলেন, ‘সড়ক সংস্কারে কোনও অনিয়ম হয়েছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখা হবে। এরপরই বলা যাবে আসলে কী হয়েছিল। তবে সড়কটিতে দিন দিন খানাখন্দ বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। নতুন করে সংস্কার করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হবে।’ট্রিবিয়ন