শিরোনাম
ক্ষমতার দাপটে শতকোটি টাকার মালিক হাজী মুছা মাতাব্বর ও তার অনুসারীরা,দেশ-বিদেশে গড়েছেন সম্পদের পাহাড় বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরলো সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে চীন-ভারত উত্তেজনা ও সম্ভাব্য যুদ্ধ এবং বাংলাদেশের অবস্থান: একটি ভূ-রাজনৈতিক পর্যালোচনা রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি,বান্দরবানসহ ১০ জেলায় ওলামা দলের কমিটি বিলুপ্ত চার হাজার কোটির প্রকল্পে বছরে গচ্চা ৫শ কোটি চলমান অস্থিরতায় পোশাকশিল্পের ক্ষতি ৪০ কোটি ডলার ১৫ চিনিকলে উৎপাদন হয় চাহিদার ১ শতাংশ, ঋণ ৯ হাজার কোটি! সাজেদার দুই পুত্রের সম্পদের পাহাড় সংস্কার সংলাপে আ.লীগ ও শরিকদের নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষাবোর্ডের সনদ ও নম্বরপত্রের সম্মানীতে লুট শতকোটি টাকা

আশ্বাসেই কেটেছে ১৫ বছর

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১১ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- দেশের সংবিধানে সকল নাগরিকের সমান সুযোগ প্রদানের কথা বলা হলেও ইবতেদায়ী মাদরাসা যেন ভিনদেশী নাগরিকদের শিক্ষা ব্যবস্থা! একই দেশের নাগরিক হয়েও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বেতন-ভাতা, উপবৃত্তি, মিড ডে মিলসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পেলেও এর কোনটিই পাচ্ছেন না মাদরাসা শিক্ষার ফিড ইনস্টিটিউট হিসেবে পরিচিত ইবতেদায়ী স্তর। একই স্মারকে ইবতেদায়ী মাদরাসা ও রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্ম হলেও দুটির অবস্থান এখন দুই মেরুতে। ৪০ বছরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা, অবকাঠামো সবই সমানতালে এগিয়ে গেলেও একই অবস্থানে এখনো পড়ে আছে ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষা।

মাদরাসা শিক্ষার প্রতি সরকারের বিমাতাসূলভ আচরণ ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শুধু মাদরাসায় ভর্তি হওয়ায় যুগ যুগ ধরে বৈষম্যের শিক্ষার হচ্ছেন লাখ লাখ শিক্ষক-শিক্ষার্থী। তাই ৫ আগস্ট পরবর্তী বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নেয়া অন্তর্বর্তী সরকারকে মাদরাসা শিক্ষার বৈষম্য দূর করতে অনুরোধ জানিয়েছেন মাদরাসা শিক্ষার শিক্ষক নেতারা। জানা যায়, ১৯৮৪ সালে তৎকালীন সরকারের নির্দেশে একই স্মারকে এবং একই চিঠিতে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ইবতেদায়ী মাদরাসার জন্ম হয়। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের তৎকালীন সভাপতি মরহুম মাওলানা এম. এ মান্নান (রহ.) এর প্রচেষ্টায় মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার ইবতেদায়ি মাদরাসাকে মঞ্জুরী প্রদান করে। ১৯৯৪ সালে একই পরিপত্রের মাধ্যমে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষকদের মাসিক ভাতা হিসেবে ৫০০ টাকা বেতন ধার্য করা হয়। এরপর ধাপে ধাপে বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হলেও একই হারে বেতন বৃদ্ধি হয়নি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষকদের। উপরন্তু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে স্বীকৃতিও বন্ধ করে দেয় মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২৬ হাজার ১৯৩ টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়। কিন্তু কোন স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা ও শিক্ষকদের জাতীয়করণ তো দূরের কথা তাদের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু পূরনের আশ্বাস পর্যন্ত দেয়া হয়নি।

মাদরাসার শিক্ষক নেতারা বলেন, প্রায় ১৮ হাজার স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসার মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৫১৯ টি প্রতিষ্ঠানের ৬ হাজার ৭৬ জন শিক্ষক নামমাত্র ভাতা ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে (অনুদান) পেয়ে থাকে। পতিত আওয়ামী সরকার তাদের ১৫ বছরে নানা সময়ে ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে আশ্বাস দিলেও পুরণ হয়নি কোনটিই।

শিক্ষকরা আরো জানান, শুধু বেতন-ভাতার বৈষম্যই নয়, ২০২২ ও ২০২৩ সালে স্কুলের বৃত্তি পরীক্ষা চালু থাকলেও মাদরাসাকে সম্পূর্ণ বাদ দেয়া হয়েছে। প্রাথমিকের অর্ধশতাধিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (পিটিআই) থাকলেও সংযুক্ত ও স্বতন্ত্র মিলে ১৫ হাজারের অধিক মাদরাসার শিক্ষকগণের জন্য প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিগত প্রায় ৪০ বছরেও একজন শিক্ষকের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নীতিমালা না করায়, সরকারি অনুদান ও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ১২ হাজার ৪৪৪টি মঞ্জুরি প্রাপ্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। ৮ হাজার ৯৫৬টি মাদরাসার অস্তিত্ব সরকারি অনুদান ও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত হয়েও টিকে থাকে। বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের ১৩টি সম্মেলন ও জমিয়ত সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দিনের নেতৃত্বে মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজীর সঞ্চালনায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক মহাসম্মেলনে উত্থাপিত দাবি ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা উন্নয়নে গঠিত বিভিন্ন সংগঠনের দাবির প্রেক্ষিতে বিগত সরকার প্রধান ২০১৯ সালের ৮ মে ইবতেদায়ি নীতিমালা স্বাক্ষর প্রদান করলেও বিগত ৫ বছরে এ নীতিমালা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা পরিচালনা, শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগ, অধিভুক্তির নবায়ন, একাডেমিক স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি কোনটাই সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের নেতা ড. মাওলানা এ কে এম মাহবুবুর রহমান বলেন, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের আন্দোলনের ফলে মাত্র ১ হাজার ৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসায় ৪ জন করে শিক্ষকের মাদরাসা প্রধানগণ ২ হাজার ৫০০ টাকা এবং সহকারীগণ ২ হাজার ৩০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। বাকি মাদরাসাসমূহ বিনা বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত অবস্থায়ও পাঠদান অব্যাহত রেখেছে। অপরদিকে সংযুক্ত ৯ হাজার ২৭৮টি ইবতেদায়ি শাখার জন্য নেই বৃত্তি, উপবৃত্তি, নেই প্রাইমারির মতো সুযোগ-সুবিধা। এতে বেশিরভাগ দরিদ্র মানুষ সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য সন্তানাদিদের স্কুলে ভর্তি করাচ্ছে। ইবতেদায়ি স্তর চরম শিক্ষার্থী সংকটে দিন দিন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, বিগত সরকার এক নোটিশে ২৬ হাজার ১৫৯টি রেজিস্টার্ড প্রাইমারি স্কুলকে জাতীয়করণের আওতায় নিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সরকারি চাকরি দেয়। কিন্তু সরকারি সর্বশেষ হিসেবে ৪ হাজার ৩১২টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার একটিও কি জাতীয়করণের যোগ্য ছিল না? বৈষম্যেরও তো একটা সীমা আছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা বর্তমানে ১ রাখ ২৯ হাজার ২৫৪ এর অধিক। এছাড়া এনজিও পরিচালিত হাজার হাজার স্কুল উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে স্বনামে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ ও বিনামূল্যে বই পাচ্ছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থী সংকট সেখানে হয় না। অথচ, সরকারি ও বেসরকারি দাখিল মাদরাসা প্রায় দশ হাজার। ইবতেদায়ি মাদরাসা মঞ্জুরী, এমপিও ভুক্ত ও সুযোগ-সুবিধা না থাকায় শিক্ষার্থী সংকট দিনের পর দিন আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদরাসাসমূহের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সংকটে অনায়াসেই বন্ধ হয়ে যাবে।

মাদরাসা শিক্ষকদের দাবি : ইবতেদায়ী স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল রাখতে মাদরাসা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- মাদরাসার ইবতেদায়ি স্তরকে জাতীয়করণের আওতায় নেয়া। তাতে বিলম্ব হলেও এমপিওভুক্ত করা। ইবতেদায়ি নীতিমালা ২০২৪ অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা। নতুন ইবতেদায়ি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার জন্য মঞ্জুরীর স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডকে মঞ্জুরী প্রদান, নবায়নের সুযোগ করে দেয়া। ইবতেদায়ি শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যবই তৈরির ব্যবস্থা করা। স্বতন্ত্র ও সংযুক্ত ইবতেদায়ি মাদরাসাসমূহকে প্রাইমারির মতো উপবৃত্তিসহ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা। ইবতেদায়ি স্তরের শিক্ষকগণের প্রশিক্ষণের জন্য পি.টিকে.আই এর আদলে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা। ইবতেদায়ি শিক্ষকগণদের জন্য প্রাইমারি স্কুলের মতো বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা। মঞ্জুরীপ্রাপ্ত বিলুপ্ত ১৬ হাজারের অধিক স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা সহজ শর্তে পুনর্জ্জীবিত করা। বেসরকারি প্রাইমারি ও এনজিও স্কুলের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসাসমূহকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোড নম্বর দিয়ে স্বনামে পরীক্ষা দানের সুযোগ ও বিনামূল্যে বই সরবরাহ করা। প্রাইমারি স্কুলের প্রাক প্রাথমিকের মতো ইবতেদায়ি মাদরাসায় প্রাক ইবতেদায়ি শ্রেণি চালু করা। প্রাইমারি স্কুলের মতো ইবতেদায়ি স্তরের জন্য অবকাঠামো ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রাইমারির মতো ইবতেদায়ি স্তরে বৃত্তি পরীক্ষা দানের সুযোগ দেয়া।

বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেসব সুবিধা পাচ্ছে, একই ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার রাখে ইবতেদায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। যদিও ইবতেদায়ীর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এখন ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে নতুন সরকার কাজ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাচে আমাদের অনুরোধ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এসব বৈষম্যের যেন অবসান হয় এবং ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যেন যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান পায় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions