বান্দরবানে ঐতিহ্যবাহী ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে: উৎসব উদযাপন

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৪
  • ৬৩ দেখা হয়েছে
Oplus_131072

বান্দরবান:- বান্দরবানে থানচিতে ঐতিহ্যবাহী ‘মাহা ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে: (প্রবারণা উৎসব) এ বছর সীমিত আকারে পালন করেছে বলে বৌদ্ধ সম্প্রদায়। প্রতিবছর এ উৎসব ঘিরে তিন দিনব্যাপী বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা পালন করে আসলেও এবার পাহাড়ে ‘সাম্প্রতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতির’ কারণে দু’দিন ব্যাপী সীমিত পরিসরে উৎসব পালন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

দু’দিনের উৎসবে অনুষ্ঠানসূচি থেকে বাদ গেছে ঐতিবাহী রথ যাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফানুস উত্তোলন, হাজার বাতি প্রজ্জ্বলন, তাছাড়া ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্য গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে আকাশে ফানুস উড়ানো ও সীমিত আকারে হবে।
জানা যায়, আদিকাল থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাস ব্যাপী বর্ষাবাস থাকার পর মারমা জনগোষ্ঠীর লোকজন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে (প্রবারণা উৎসব) পালন করে আসছে। কথিত আছে, বৌদ্ধ ধর্মেও প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধ এই আশ্বিনী পূর্ণিমায় তার মাথার চুল আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাই আশ্বিনী পূর্ণিমার এই তিথিতে বৌদ্ধধর্মলম্বীরা আকাশে ওড়ানো হয় শত শত ফানুস বাতি। নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী ফানুস বাতি বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ বা উৎসর্গ করেন ভক্তরা।

তবে পাহাড়ের অশান্তি পরিবেশ বিরাজমান কারণে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে উৎসবে এবার আমেজ নেই। চলতি মাসে ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া দুই দিনের এই উৎসবকে ঘিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের বাইরে যেমন গ্রামে গ্রামে সরারাত ধরে চলে পিঠা তৈরি উৎসব। এসময় নাচ-গানে মেতে ওঠেন সর্বস্তরের মানুষজন। তাছাড়া উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে মঙ্গলশোভা রথযাত্রা। রথের ওপর বুদ্ধ মূর্তি স্থাপন করে রথটি টেনে পুরো রাস্তায় ঘুরিয়ে সাঙ্গু নদীতে বিসর্জন দেয়া হয়। এ সময় নানান রকম মোমবাতি জ্বালিয়ে বুদ্ধ মূর্তি দর্শন করেন পূজারীরা। ওই সময় রথের পেছনে সাউন্ড বক্স মাধ্যমে উচ্চ শব্দ বাজিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মারমাদের ঐহিত্যবাহী গান গেয়ে ঢোল বাজিয়ে এতে যোগ দেন।

থানচি উপজেলা রথ কারিগর ও যুব নেতা চাইহ্লাচিং মারমা বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও রথ তৈরি শুরু করেছিলাম। কাজ প্রায় অর্ধেক করেছি। পরে দেখি বর্তমান দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি কারণে সবগুলো বাদ দিতে হয়েছে।

থানচি উপজেলা উৎসব উদযাপন কমিটি সভাপতি খেমংথুই মারমা বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা পুরো তিন মাস বর্ষাবাস পালন করার পর অপেক্ষায় থাকে এই দিনটির জন্য। কিন্তু এবছরে দেশের পরিস্থিতি কথা চিন্তা করে সবগুলো আয়োজন বর্জন করেছি। যেহেতু এবার দানোত্তম মহা কঠিন চীবর দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘে বর্জন ঘোষণা দেয়, তাই আমাদের রথযাত্রা আয়োজনও করা হবে না। বেঁচে থাকলে আগামী বছরে আমরা জাঁকজমকভাবে আয়োজন করবো।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মুহাম্মদ আছিফ উদ্দিন মিয়া বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ঘিড়ে আমরা শৃঙ্খলার রক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীদের নিরাপত্তা চাদরে রাখা ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। এবং প্রতিটি বৌদ্ধ বিহার ও উৎসব উদযাপন কমিটি সাথে সমন্বয়ের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে রাখা হয়েছে।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তদন্ত মো. নাছির উদ্দিন বলেন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান উদযাপন করতে পারে, সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions