ডেস্ক রির্পোট:- হিন্দু শাস্ত্রমতে, এবার দেবীদুর্গা মর্ত্যে এসেছিলেন পালকিতে চড়ে। আর ঘোড়ায় চড়ে কৈলাশে ফিরবেন। তিথি স্বল্পতার কারণে এবারের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা তিনদিনেই শেষ হয়েছে। একইদিনে অষ্টমী ও নবমীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিধিমতে, মন্ত্রপাঠ করে দেবীকে ঢাকঢোল, শঙ্খ বাজিয়ে গানের তালে তালে বিদায় জানানো হয়েছে। দেশের অনেক জায়গায় গতকালই প্রতিমা বিসর্জন করা হয়েছে। তবে বেশির ভাগ স্থানে আজ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ভারাক্রান্ত মনে সিদুঁর খেলার মধ্যদিয়ে প্রতিমা বিসর্জন করবে। গতকাল থেকেই মন্দিরে মন্দিরে বিদায়ী সুর বাজছিল।
প্রতিবারের মতো এবারও রাঙ্গামাটিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। উৎসব চলাকালে প্রতিটি পূজামন্ডপে সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়। নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উৎসব পালনে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছলি জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।
রাঙ্গামাাটি জেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্যোগে এবার ৪৪টি পূজামন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রাঙ্গামাটি সদরে ১৫টি, কাপ্তাই উপজেলায় ৮টি, রাজস্থলীতে ৪টি, কাউখালীতে ৪টি, বরকলে ২টি, বাঘাইছড়িতে ৫টি, লংগদুতে ৩টি এবং নানিয়াচর, বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার প্রতিটিতে ১টি করে মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
বেলতলায় ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব। মণ্ডপে মণ্ডপে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী পূজার মধ্যদিয়ে শেষ হলো আনুষ্ঠানিকতা। সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন পালকি বা দোলায় দেবীর আগমন বা গমন হলে এর ফল হয় মড়ক। খাদ্যশস্যে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হবে ও রোগব্যাধি বাড়বে। এ ছাড়া দেবী স্বর্গে গমন করেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। শাস্ত্রমতে দেবীর গমন বা আগমন ঘোটকে হলে ফলাফল হয় ছত্রভঙ্গ। এটা সামাজিক ও রাজনৈতিক এলোমেলো অবস্থাকে ইঙ্গিত করে। পঞ্জিকা মতে, এবার মহানবমী পূজার পরই দশমী বিহিত পূজা হয়। গতকাল সকালে শুরু হয় বিজয়া দশমীর পূজা। মণ্ডপগুলোতে আড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে শুরু হয় পূজা-অর্চনা। শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী তিথিতে বিহিত পূজা এবং দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে মণ্ডপে মণ্ডপে দেবীদুর্গার আরাধনা করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
গতকাল রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলোতে দেখা যায়, প্রতিটি মণ্ডপেই দুর্গাপূজার শেষ সময়ের প্রস্তুতি শেষ করা হচ্ছে। মন্ত্রপাঠে আনন্দময়ীকে অঞ্জলি দিচ্ছেন ভক্তরা। এবার তিথির কারণে মহানবমী পূজার পরই দশমীর বিহিত পূজা এবং বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরের আহ্বায়ক বাবু পবন দাস বলেন, এবার একদিনেই নবমী-দশমী পালিত হয়েছে। রোববার প্রতিমা বিসর্জন হবে। এ বছর কিছুটা ভীতি থাকলেও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। জমকালোভাবেই পালিত হয়েছে দুর্গোৎসব। পরিতোষ নামের এক ভক্ত বলেন, এবার পূজা ঘিরে আমাদের মধ্যে শঙ্কা ছিল। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পূজা হয়েছে।
শাস্ত্রমতে, নবমীতেই দেবীদুর্গা রুদ্ররূপ ধারণ করে বধ করেছিলেন মহিষাসুরকে। নবমীর সকাল তাই অশুভ শক্তি থেকে মুক্তির সকাল। ১০৮টি বেলপাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে যজ্ঞের মাধ্যমে দেবীদুর্গার কাছে দেয়া হয় আহুতি। ৮টা ২৬ মিনিটে শুরু হয় দশমী পূজা। দর্পণ বিসর্জনের মধ্যদিয়ে ভক্তদের কাঁদিয়ে একদিন আগেই দেবী দুর্গার প্রস্থান। সপ্তমী থেকে নবমী, চার সন্তান নিয়ে অন্নপূর্ণা এবার পৃথিবীতে থাকলেন কেবল তিনদিন। দেবীর বিদায়ে নবমীর আনন্দের সঙ্গে যুক্ত হলো বিষাদের সুর। শেষবেলায় তাই দেবীর কাছে সুখ-শান্তি এবং সমৃদ্ধির প্রার্থনা করেন ভক্তরা।
সারা দেশে মন্দির ছাড়াও বিভিন্ন মাঠে হয়েছে দুর্গাপূজা। পূজামণ্ডপ ঘিরে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। সরজমিন দেখা যায়, বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন সালাম ডেইরি বালুর মাঠেও মণ্ডপ সাজানো হয়। নিরাপত্তায় ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সনাতন ধম্বাবলম্বীর মানুষ তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পূজা-অর্চনা করেছেন। সনাতন ছাত্র ও সমাজকল্যাণ সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৌরভ দাস বলেন, এবার কিছুটা ভীতি ছিল আমাদের মনে। যদিও এখানে কোনো অপ্রীতিকর কিছু হয়নি। পুরান ঢাকার একটি মণ্ডপের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় কিছুটা ভয় কাজ করেছে। তবে সুন্দরভাবে আমরা আমাদের পূজার আনুষ্ঠানিতা সম্পন্ন করতে পেরেছি।