ডেস্ক রির্পোট:- কাপ্তাই হ্রদ আর ছোট-বড় পাহাড় বুকে ধারণ করেই নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার রাঙ্গামাটি জেলা। প্রকৃতির মায়াবী হাতছানি নিয়ে দেশে বছরজুড়েই রাঙ্গামাটি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। ইতিহাস-ঐতিহ্যে এ পার্বত্য জেলা বেশ সমৃদ্ধ। ১৮৬০ সালে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত হয় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম’ জেলা। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৯৮১ সালে বান্দরবান এবং ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি আলাদা করা হয়।
বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পৃথক হওয়ার আগ পর্যন্ত রাঙ্গামাটি ছিল এ অঞ্চলের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রস্থল। ডিসির বাসভবন ছিল রাঙ্গামাটিতে। জেলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে ব্রিটিশ, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও বাঙালি মিলে প্রায় দেড়শ বছরে এ জেলায় ৯২তম ডিসি দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৫৭ সালে মেজর এল এইচ নিবলেট নামে একজন জেলা প্রশাসকের করুণ মৃত্যু হয়। ‘লাল বাহাদুর’ নামে তাঁর একটি হাতি ছিল। ওই হাতির পিঠে চড়েই নিবলেট বিভিন্ন জায়গায় যেতেন।
‘লাল বাহাদুর’ ছিল জেলা প্রশাসকের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। হাতিটির খাওয়া, সেবা-যত্নের সব অর্থ বরাদ্দ যেত সরকারি কোষাগার থেকে। এখনকার সময় যেভাবে জেলা প্রশাসকের গাড়ির তেল খরচসহ যানবাহনের সার্বিক ব্যয় সরকার বহন করে, সেভাবে বাহাদুর ছিল সরকারি খরচে পরিচালিত বাহন। মনিবকে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ওর জুড়ি ছিল না। তবে লাল বাহাদুরের ক্ষেত্রে একবারই বিপত্তি ঘটেছিল।
সময়টা ১৯৫৭ সাল। রাঙ্গামাটিতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তৎকালীন ইরানের রাষ্ট্রদূত। রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে তাঁকে নিয়ে বনে ঘুরতে যান জেলা প্রশাসক নিবলেট। মূলত শিকারের জন্য গিয়েছিলেন তারা। এর পর জেলা প্রশাসক বন্য একটি হাতিকে গুলি করলে লাল বাহাদুর ভয় পেয়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। এতে পিঠ থেকে ছিটকে পড়ে লাল বাহাদুরের পায়ে তলায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান নিবলেট। মনিবের এ মৃত্যু কোনোভাবে মেনে নিতে পারেনি লাল বাহাদুর। বন্ধ করে দেয় খাওয়া-দাওয়া। অনেক চেষ্টায়ও ওর মুখে কোনো খাবার তুলে দেওয়া যায়নি। পুরোপুরি উপোস করে পাঁচ দিনের মাথায় মারা যায় লাল বাহাদুরও। এর মধ্য দিয়ে মনিবপ্রেমের অসাধারণ এ উদাহরণ রেখে গেল সে। নিবলেটের মৃত্যুর শোকে লাল বাহাদুরের প্রাণ উৎসর্গের বিষয়টি লিপিবদ্ধ আছে ডিসির বাংলোতে।
কাপ্তাই হ্রদ লাগোয়া অনিন্দ্যসুন্দর পরিবেশে রাঙ্গামাটির ডিসি বাংলো। মাটি, টিন, বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মিত এ বাংলোয় যে কারও চোখ জুড়িয়ে যাবে। চারপাশে পাখির কিচিরমিচির। রাতে পাখি ও পোকামাকড়ের ডাক এক ভিন্ন আবহ সৃষ্টি করে। বাংলোর সামনে নিবলেটের স্মৃতিস্তম্ভ। হ্রদের স্বচ্ছ পানির ঢেউ বাংলোতে আছড়ে পড়ে।
জেলা প্রশাসক মোশারফ হোসেন খান বলেন, নিবলেটের সমাধিস্থল রাঙ্গামাটিতে রয়েছে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত দুই দফায় তিনি এখানকার ডিসি ছিলেন। ১৯৫৭ সালে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। নিবলেট ছাড়াও অনেক ব্রিটিশ নাগরিক রাঙ্গামাটির ডিসি ছিলেন। ১৯৫০ সালে লে. কর্নেল হিউম নামে একজন ছিলেন। তাঁর ছেলে সম্প্রতি রাঙ্গামাটিতে এসেছেন। বাবার স্মৃতিবিজড়িত স্থান দেখে গেছেন।