আন্তর্জাতিক ডেস্ক:- গত দুই দশকে নিজ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া অনেক রাজনীতিক, প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিন্ডেন্টের শেষ গন্তব্য ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। এদের কেউ শাস্তি এড়াতে কেউ আবার সামরিকবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে দুবাইকেই নিরাপদ মনে করেছেন।
নিচে তাদের কয়েকজনের ‘দুবাই যাত্রা’ নিয়ে আলোচনা করা হলো।
আশরাফ গনি আহমেদজাই
আফগানিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি আশরাফ গনি আহমেদজাই। ২০১৪ তিনি আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২১ সালে তালেবানরা কাবুল বিজয় করলে তিনি চারটি গাড়ি ও হেলিকপ্টার ভরে নগদ অর্থ নিয়ে ওমান হয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান এবং সেখানে মানবিক আশ্রয় গ্রহণ করেন।
পারভেজ মুশাররফ
পারভেজ মুশাররফ পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং সাবেক সেনাপ্রধান। ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজ শরীফকে ক্ষমতাচ্যুত করে মোশাররফ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেন। এরপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। ২০০৭ সালে সংবিধান স্থগিত করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে নিজের শাসনামল প্রলম্বিত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ইমপিচমেন্ট এড়াতে ২০০৮ সালে পদত্যাগ করে দুবাই চলে যান। পরে সেখানেই অ্যামিলয়ডোসিস নামে এক জটিল রোগে ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সংযুক্ত আমেরিকান হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বেনজির ভুট্টো
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজির ভুট্টো। প্রথমে ১৯৮৬ এবং পরে ১৯৯৩ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। সুইজারল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ১৯৯৯ সালে বেনজির ও তার স্বামী আসিফ আলী জারদারিকে জেল জরিমানা করা হলে দেশ ছেড়ে দুবাই পাড়ি দেন তিনি। পরে উচ্চ আদালত সাজা রায় বাতিল হলে আট বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসন কাটিয়ে ২০০৭ এর অক্টোবরে দেশে ফেরেন বেনজির। সে বছর ডিসেম্বরে রাওয়ালপিন্ডির এক নির্বাচনী সমাবেশে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন তিনি।
ইংলাক সিনাওয়াত্রা
ইংলাক সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। ২০১১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পিউ থাই পার্টি থেকে বিজয়ী হয়ে ২৮তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার মাত্র কয়েক দিন আগে আদালতের এক বিতর্কিত আদেশে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। চালে ভর্তুকি কর্মসূচিতে অবহেলার মামলার রায় এড়াতে ইংলাক দেশ থেকে পালিয়ে দুবাই চলে যান।
থাকসিন সিনাওয়াত্রা
থাকসিন সিনাওয়াত্রা ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। এরপর ‘দুর্নীতির’ দায়ে দায়েরকৃত মামলায় কারাগারে যাওয়া এড়াতে থাকসিন থাইল্যান্ড ছেড়ে যান। তার নির্বাসনের বড় সময় তিনি দুবাইতে কাটিয়েছেন। বিদেশে ১৫ বছর স্বেচ্ছা-নির্বাসনে থাকার পর ২০২৩ সালের আগস্টে দেশে ফেরেন থাকসিন।
জুয়ান কার্লোস
জুয়ান কার্লোস হলেন স্পেনের সাবেক রাজা। দেশের আর্থিক দুর্দশার সময়ে আফ্রিকা সফরে গিয়ে হাতি শিকার এবং অন্যান্য দুর্নীতির অভিযোগে জনরোষ তৈরি হলে ২০১৪ সালে ছেলের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেন তিনি। ২০২০ সালে তিনি স্পেন ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি জমান।
মোহাম্মদ দাহলান
ফিলিস্তিনের নির্বাসিত রাজনীতিবিদ মোহাম্মদ দাহলান। ফাতাহ হকস ও ফাতাহ যুব আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন তিনি। গাজা উপত্যকায় ফাতাহ-এর সাবেক এই প্রধান এতটাই ক্ষমতাশালী ছিলেন যে গাজার ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল ‘দাহলানিস্তান’। এক সময় ইয়াসির আরাফাতের সমালোচক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ২০১১ সালে ফাতাহ তাকে বিষ প্রয়োগ করে ইয়াসির আরাফাতকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করলে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান।