শিরোনাম
পাহাড়ে কুড়িয়ে পাওয়া ডিম ফুটিয়ে গড়েছে বনমোরগের খামার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন,প্রথম খসড়া তালিকায় নিহত ৮৫৮ জন, আহত সাড়ে ১১ হাজার আনুপাতিক হারে জাতীয় নির্বাচনের চিন্তা, বিএনপি কোন পথে সিভিল সার্ভিসে বিশৃঙ্খলার শঙ্কা, কলমবিরতি-মানববন্ধন-সমাবেশের ঘোষণা সংসদ নির্বাচন ইভিএমে হবে না, যন্ত্রগুলো কী করবে ইসি মঞ্চ প্রস্তুত আরেকটি এক-এগারোর? আসছে হাসিনা আমলের চেয়ে বড় বাজেট,আকার হতে পারে ৮ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা ফের আন্দোলনে নামছে বিএনপি,দ্রুত সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি, চলছে নির্বাচনি প্রস্তুতি প্রশাসনিক সংস্কারে ডিসিদের আপত্তি! বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছেন বেবী নাজনীন, জয়া আহসান ও ফাহিম আহমেদ

গ্রাহককে শোষণ করে হরিলুট

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৬৬ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের পর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এই ১৫ বছরে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে ১৮৮ শতাংশ। এর আগে দেশে ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে চারবার। এ সময় গ্রাহক পর্যায়ে (সর্বনিম্ন ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ ইউনিট ব্যবহার) বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকারের গত দেড় দশকে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ১৪ বার। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের উৎপাদন খাতের সব পণ্যের দাম বেড়েছে, যা সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনমানের ওপর প্রভাব ফেলেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গ্রাহকের কাছ থেকে বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল আদায়ের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। অযৌক্তিকভাবে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গ্রাহক শোষণ করে হরিলুট করা হয়েছে। তারা ঘন ঘন বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেন। এগুলো হচ্ছে- দেশের স্বার্থ রক্ষা না করেই ভারতীয় শিল্পগোষ্ঠী আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের অসম বিদ্যুৎ চুক্তি এবং বিভিন্ন বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ আইন) আওতায় কয়েক গুণ বেশি দামে বিদ্যুতের ক্রয়চুক্তি বাস্তবায়ন করা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, গত দেড় দশকে বিদ্যুৎ খাতের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অভাবনীয় হারে। এর কারণ হিসেবে তারা মনে করছেন, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতাহীন বাজার এবং খাতটির অনিয়ম-দুর্নীতি দায়ী। বিদ্যুৎ খাতে ঋণ ও দায়-দেনা মেটানোর নামে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে তা চাপানো হয়েছে ভোক্তার ওপর। এতে ভোক্তা থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সব প্রতিষ্ঠানই ভুক্তভোগী হয়েছে।
আদানির বিদ্যুতের দাম বেশি : দেশের কয়লাচালিত অন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর তুলনায় আদানি প্রকল্পের জন্য বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)-কে বাড়তি অর্থ দিতে হয়। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের করা বিদ্যুৎ চুক্তিটি বৈষম্য ও প্রতারণামূলক। তারা বলছেন, আদানি গ্রুপ এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এই চুক্তিতে তারা কারচুপির আশ্রয় নিয়েছে।

বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাড়তি কয়লা, ক্যাপাসিটি চার্জসহ বিভিন্ন কৌশলে বিদ্যুতের অতিরিক্ত দাম ধরেছে ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠী। এজন্য ভারতের ঝাড়খন্ডের ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চুক্তি বাতিলের দাবিও জানিয়েছে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। গত বছর থেকে আওয়ামী লীগ বাড়তি দাম দিয়ে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি নিয়ে ওঠা সমালোচনা উপেক্ষা করেই বিদ্যুৎ আমদানি করে আসছিল। চলতি বছর জুনে আদানি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে কয়লার দাম ধরেছে ৮ টাকা ২২ পয়সা। এ সময় পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার খরচ ৬ টাকা ২২ পয়সা। আদানি গত অর্থবছর প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ক্যাপাসিটি চার্জ ও পরিচালন ব্যয় ধরেছে ৭ টাকার বেশি। জ্বালানি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাড়তি খরচ দেখিয়ে ২৫ বছরে অতিরিক্ত ১ লাখ কোটি টাকা আদায়ের সুযোগ রয়েছে আদানির।

আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ, কম দামে কয়লা ব্যবহার করে বেশি দাম আদায়, শুল্কসুবিধা পেয়েও তা প্রদর্শন না করা। এ ছাড়া তিন মাস আগে বিদ্যুতের নির্দিষ্ট চাহিদা জানানো, উৎপাদন সক্ষমতার কমপক্ষে ৩৪ শতাংশ বিদ্যুৎ কেনা, ১ শতাংশের বেশি কয়লার অপচয়সহ ক্রয় চুক্তির বিভিন্ন দুর্বলতা আছে।

অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎ-জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইন স্থগিত করছে। এই আইনের অধীনে আদানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা চুক্তির কারিগরি ও আর্থিক দিক খতিয়ে দেখছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। আদানি কেন্দ্রের শুল্ক-করের অনিয়ম খতিয়ে দেখছে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় সম্প্রতি নিজ দেশে বিদ্যুৎ বিক্রির সুযোগ উন্মুক্ত করেছে ভারত। আশঙ্কা করা হচ্ছে, আদানির সঙ্গে বাংলাদেশের এই চুক্তি বাতিলও হতে পারে। কারণ, এই চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। এতে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ পেয়েছে আদানি গ্রুপ। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ভারতে বিদ্যুৎ বিক্রির উদ্যোগ নিচ্ছে আদানি। এতে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছে। চুক্তি পর্যালোচনা করে তা বাতিল করা হতে পারে।

গত অর্থবছর আদানির কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে প্রায় ৮১৬ কোটি ৬৬ লাখ ৭৭ হাজার ইউনিট। এ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ক্যাপাসিটি চার্জ পড়েছে ৬ টাকা ৬০ পয়সা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন খরচ ১ টাকা। জ্বালানি (কয়লা) খরচ প্রতি ইউনিটের জন্য ৭ টাকা ৫৪ পয়সা। অর্থাৎ আদানির বিদ্যুৎ কেনায় গড়ে ব্যয় হয়েছে ১৫ টাকা ১৪ পয়সা। চুক্তিতে অসম সুবিধার জন্য আদানির পরিচালন ব্যয় অন্য কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের চেয়ে বেশি দিতে হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, আদানি ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে এই চুক্তি করেছে। এই চুক্তির ক্ষেত্রে আদানি গ্রুপ হচ্ছে ঠিকাদার। এজন্য আইনের দৃষ্টিতে আদানিকে অযোগ্য ঠিকাদার হিসেবে আমরা ঘোষণা করতে পারি। এর মাধ্যমে তাদের চুক্তি বাতিল করে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেব না। যে অর্থ দিয়ে আদানির কাছ থেকে আমরা বিদ্যুৎ নেব তার অর্ধেক পয়সায় আমরা নিজেরাই কয়লা কিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। জনস্বার্থে এই চুক্তি বাতিল করে আদানি থেকে বিদ্যুৎ না কিনে দেশের অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করব।

সৌরবিদ্যুতের দাম ভারত-পাকিস্তান থেকে বেশি : ভারতে সম্প্রতি সোলার এনার্জি করপোরেশন অব ইন্ডিয়ার দরপত্রে অংশ নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় ৬টি কোম্পানি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম অনুমোদন হয় ৩ সেন্টে যা ভারতীয় মুদ্রায় ২ রুপি ৬০ পয়সা। ডলারের বিনিময় হার ১১৯ টাকা ৪৮ পয়সা হিসাবে ওই বিদ্যুতের ট্যারিফ বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়ায় ৩ টাকা ৫৮ পয়সা। দেশটিতে সাম্প্রতিককালে অনুমোদন দেওয়া অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ট্যারিফ নির্ধারণ হয়েছে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা ৩ থেকে সাড়ে ৪ সেন্টের মধ্যে। বেসরকারি খাতে সৌরবিদ্যুতের ট্যারিফ কমিয়ে আনতে চলতি বছরেই প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান। এজন্য বেঞ্চমার্ক হিসেবে সৌরবিদ্যুতে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা প্রস্তাব করা হয় ৫ সেন্ট। মূলত আমদানিনির্ভর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর চাপ কমাতে সৌরবিদ্যুতের ট্যারিফসংক্রান্ত এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। পাকিস্তানে সম্প্রতি অনুমোদিত বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ট্যারিফ বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫০০ থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি হয়েছে সর্বোচ্চ ৭ সেন্ট থেকে সর্বনিম্ন সাড়ে ৩ সেন্টের কিছু বেশিতে। ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার হিসাবে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের সর্বনিম্ন দাম পড়েছে ৩ টাকা ৮২ পয়সা। অথচ এক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ে চুক্তি হচ্ছে ৯ থেকে ১০ সেন্টে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর সর্বনিম্ন দাম পড়ছে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। তবে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি ভিন্ন হওয়ায় দামে কিছুটা তারতম্য দেখা যায়। যা কিলোওয়াট প্রতি সর্বনিম্ন ১০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১৩ টাকাও পড়ছে।

চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বেসরকারি খাতে ৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। যা নেত্রকোনা জেলার চল্লিশা ইউনিয়নের বিল সুলঙ্গীতে নির্মাণ করা হবে। প্যারাগন বাংলাদেশ, রাইজেন এনার্জি ইউকে ও সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি যৌথভাবে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে। ২০ বছর মেয়াদে কেন্দ্রটি থেকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ কিনতে ব্যয় হবে ৯ সেন্ট যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০ টাকা ৭৫ পয়সা।

সৌরবিদ্যুতে গত বছর অনুমোদিত কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ কিনতে বিপিডিবির গড়ে সর্বনিম্ন ১১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৪ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়বে। জ্বালানি খরচ না থাকা সত্ত্বেও এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দাম নির্ধারণ হয়েছে মূলত বেসরকারি কোম্পানি ও বিপিডিবির দরকষাকষির ভিত্তিতে। বিদ্যুৎ, জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ আইন) আওতায় নির্মিত এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খরচ বেশি পড়ার অভিযোগ করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রতিবেশী দেশগুলো যেখানে সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমিয়ে এনেছে সেখানে বাংলাদেশ এখনো কয়েক গুণ বেশি দামে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে বিদ্যুতের ক্রয়চুক্তি করছে। এ খরচ কমিয়ে আনা উচিত। এক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে প্রতিযোগিতামূলক বাজার, সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণ ও জমি সংস্থানে সহায়তা দিতে হবে। এটি করা গেলে সৌরবিদ্যুতের দাম বর্তমানের চেয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা যাবে।বাংলাদেশ প্রতিদিন

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions