বিএনপি রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চায়

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ২০ দেখা হয়েছে

ডেস্ক রির্পোট:- ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চায় বিএনপি। দীর্ঘ সময় ধরে দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলে আসছে, সেটির আর পুনরাবৃত্তি চান না তারা। দলটির চাওয়া, আগামীর বাংলাদেশ হবে স্থিতিশীল বাংলাদেশ, যেখানে সুষম গণতন্ত্রের চর্চা হবে, থাকবে মানুষের বাক ও মৌলিক স্বাধীনতা। এ জন্য রাজনীতিতে যে গুণগত পরিবর্তন আনা দরকার, সেটা তারা আনবে। দলটির নেতারা বলছেন, তাদের এই পরিবর্তনের ভিত্তি হবে ৩১ দফা। আগামীতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে তারা সব দল-মতের লোকদের নিয়ে সম্প্রীতির ‘রেইনবো নেশন’ গড়ে তুলবেন।

বিএনপি নেতারা বলছেন, শুধু এটাই নয়, দলের সাংগঠনিক পর্যায়েও তারা একটা গুণগত পরিবর্তন চান। বিএনপি দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল। তাই আগামীতে নেতাকর্মীদের কীভাবে আরও জবাবদিহির আওতায় আনা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন তারা। এ ছাড়া ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে সেই ক্ষমতার সঙ্গে যারা জড়িত থাকবেন, তাদেরও কীভাবে কঠিন জবাবদিহির ভেতরে রাখা যায়, সেটাও রয়েছে দলটির ভাবনায়।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি নতুন বাংলাদেশ চায়—যেখানে দুর্নীতি-লুটপাট, গুম-খুন হবে না। থাকবে না রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-নিপীড়ন। মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে। নিশ্চিত হবে মৌলিক অধিকার। ছাত্র-জনতার এই যে চাওয়া, তাদের বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটাকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে চায় দলটি।

দলটি মনে করছে, দুর্নীতি বর্তমানে আমাদের সমাজের একটি বড় সমস্যা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, দখল, লুটপাটতন্ত্র চলে আসছে। ছাত্র-জনতার কাঙ্ক্ষিত নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে এগুলোর লাগাম টেনে ধরতে হবে। এ জন্য দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। যদি বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবে সংস্কার করা যায়, সেখানে নিরপেক্ষ ও কার্যকর লোক বসানো যায়, তাহলে ন্যায়বিচার-জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। এর ফলে দুর্নীতি কমতে শুরু করবে।

দেশে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে ছয়টি কমিশন গঠনের কথা জানান। নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, জনপ্রশাসন ও সংবিধান সংস্কারে কাজ করবে এসব কমিশন। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয় বিশিষ্ট নাগরিককে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্র কাঠামোর এই সংস্কারের সঙ্গে বিএনপিও একমত। দলটির নেতারা বলছেন, বিগত আওয়ামী সরকার গণতান্ত্রিক সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করে ধ্বংস করেছে। তাই রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে অতিদ্রুত সংস্কারের কাজ শেষ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগের বিষয়ে দলীয় অবস্থান ঠিক করতে সম্প্রতি ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এসব কমিটিতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ও দলপন্থি সাবেক আমলাদের যুক্ত করা হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক এই কমিটিগুলো দলের কর্ম-কৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করবে। গঠিত ছয় কমিটি হলো—রাষ্ট্র সংস্কার, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, প্রশাসন সংস্কার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, নির্বাচন কমিশন এবং ব্যাংকিং ও বাণিজ্য। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারসহ আরও কয়েকটি কমিটি গঠনেরও চিন্তা করছে দলটি।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মূলত সরকার গঠিত কমিটির সংস্কারের বিষয়ে দলের কৌশল তৈরি এবং সে অনুসারে প্রাসঙ্গিক কাজ নির্ধারণ করতে তারা কাজ করবেন। সরকার সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করলে বিএনপি যাতে তাদের পরামর্শ তুলে ধরতে পারে, সেই প্রস্তুতিও নেবে এসব কমিটি। ইতোমধ্যে তারা কাজও শুরু করেছেন।

জানা গেছে, রাজনীতিতে বিএনপির গুণগত পরিবর্তনের ভিত্তি হবে ৩১ দফা রূপরেখা। সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে এই রূপরেখা ঘোষণা করে দলটি। বিএনপির পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনে জয়লাভের পর হাসিনা সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ‘একটি জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ গঠন করা হবে, যারা রাষ্ট্রের রূপান্তরমূলক সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

৩১ দফার মধ্যে মোটাদাগে বলা হয়েছে, সব মত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি সম্প্রীতিমূলক ‘রেইনবো নেশন’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ‘নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করা হবে। পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সমন্বয় করা হবে। সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অমানবিক নিষ্ঠুর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অবসান ঘটানো হবে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ৩১ দফা রূপরেখাকে অধিকতর যুগোপযোগী এবং নতুন করে ব্র্যান্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি রাষ্ট্র গঠনে ৩১ দফা প্রচার ও জনমত তৈরিতে কাজ করবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমরা দেখেছি, একজনের হাতে কিংবা একটা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলে রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল এবং সাধারণ মানুষ প্রত্যেকেই কোনো না কোনো দিক থেকে নির্যাতিত-নিষ্পেষিত হয়। সেজন্য আমাদের অবস্থান-প্রস্তাবনাগুলো অত্যন্ত পরিষ্কার। আমরা একটা গুণগত বা ইতিবাচক পরিবর্তন চাই। সেই পরিবর্তনের মধ্যে মোটাদাগে আমরা বলেছি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মধ্যে একটা ভারসাম্য আনতে হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট করতে হবে। পরপর দুই বারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। এ ছাড়া স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ব্যাপারসহ আরও অনেক কিছু রয়েছে, যেটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও নেতাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। এগুলো ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। সেখানে আরও অনেক গুণগত পরিবর্তনের বিষয় আছে। এর মধ্য দিয়ে আমরা এটা বোঝাতে চাচ্ছি যে, আগের বিএনপি এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের বিএনপি এক রকম হবে না। মানুষের কাছে জবাবদিহিতা আরও বেশি হবে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে মেধাভিত্তিক চর্চা বাড়বে। তরুণ-যুবকরা ৩১ দফার আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারবে। সে কথাগুলোই মাঝে মাঝে খণ্ডচিত্র আকারে আমাদের নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসছে।’কালবেলা

এদিকে বিএনপির প্রতিশ্রুত রাষ্ট্র সংস্কারের পক্ষে জনমত গঠনে মাঠে নামছে বিএনপির তিন অঙ্গসহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। ‘আমরা যদি থাকি সৎ-দেশ সংস্কার সম্ভব’ শীর্ষক স্লোগান এবং সাম্য ও মানবিক সমাজ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সারা দেশে যৌথ কর্মিসভা করবে তারা। এর মধ্য দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সারা দেশে সাংগঠনিক বিভাগভিত্তিক মহানগর ও জেলা শহরে অনুষ্ঠেয় এই যৌথ কর্মিসভা সফলে তিন সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে তিনটি টিম গঠন করা হয়েছে। এসব টিম প্রথম দিন কর্মিসভা, দ্বিতীয় দিন ওই জেলায় দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘ধানের শীর্ষ’ সংবলিত লিফলেট বিতরণ করবে। আজ শনিবার থেকে এই কর্মিসভা শুরু হচ্ছে। প্রথম দিন চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলা, সিলেট মহানগর ও জেলা এবং ঝালকাঠি জেলায় কর্মিসভা অনুষ্ঠিত হবে।

এক নম্বর টিম বরিশাল, খুলনা ও ফরিদপুর বিভাগে কাজ করবে। এই টিমে রয়েছেন যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান। সিলেট, কুমিল্লা ও রাজশাহী বিভাগে কাজ করবে দুই নম্বর টিম। এই টিমে আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করিম পল। তিন নম্বর টিম কাজ করবে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে। এই টিমে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া রয়েছেন।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.net
Website Design By Kidarkar It solutions