ভারত ভূষণ:- বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার ১৯ জুলাই থেকে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে। কিন্তু ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দমন করার জন্য এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নাও হতে পারে। ইতিমধ্যেই শতাধিক বিক্ষোভকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এবং ২৫,০০০ বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতির পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারফিউ জারি করেন। সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে, গাজীপুরের মেয়রকে আক্রমণ করা হয়েছে এবং তার দেহরক্ষীকে হত্যা করা হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা মধ্য বাংলাদেশের নরসিংদীতে একটি কারাগারে হামলা চালায় এবং পাঁচ শতাধিক বন্দী সেখান থেকে পালিয়ে যায়। প্রায় ৪০০০ বিক্ষোভকারী রংপুরে একটি পুলিশ ঘাঁটিতে আক্রমণ করে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে কোটা বিরোধী বিক্ষোভের নেতৃত্বদানকারী কিছু ছাত্রনেতা এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মধ্যে আলোচনা সত্ত্বেও, শিক্ষার্থীরা জানিয়ে দিয়েছেন যে, বিক্ষোভ অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে যে ছাত্র আন্দোলন অনেক সময়েই দেশকে বদলে দিয়েছে – ১৯৫২সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে ১৯৯১ সালে জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলন- যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
বর্তমান কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হয়নি। ছাত্ররা এখন এই আন্দোলন নিয়ে একরোখা অবস্থান নিয়েছে । আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিণতি কী হতে পারে তা নিয়ে অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন। ছাত্ররা দেশের ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০% কোটা প্রত্যাহার চায়। কোটা মোট জনসংখ্যার প্রেক্ষিতে “মুক্তিযোদ্ধাদের” ০.১৩% ভাগের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করে ছাত্ররা। সরকারি চাকরিতে মোট সংরক্ষণ ছিল ৫৬%। গত বছর, প্রায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী সরকারি চাকরিতে মাত্র ৩৩০০টি পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
বিক্ষোভকারীরা অবশ্য প্রতিবন্ধী, নারী ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য কোটার বিরুদ্ধে নয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বেকারত্বের অবস্থা ভয়াবহ। বেসরকারি খাতে চাকরি কমেছে এবং সরকারি চাকরিতে রয়েছে নিরাপত্তার অভাব। ২০২৩ সালের অফিসিয়াল পরিসংখ্যান দেখায় যে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী প্রতি পাঁচজন বাংলাদেশি যুবকের মধ্যে একজন ক্লাসরুমে বা চাকরিতে নেই। প্রায় ৬৫, ০০০ নতুন স্নাতক দুই মিলিয়নেরও বেশি তরুণদের সাথে প্রতি বছর চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় নামে, সেইসঙ্গে কম শিক্ষিতদের তুলনায় প্রবলভাবে বেকারত্বের সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মন্দা দৃশ্যমান। দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার কমছে, বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সঙ্কুচিত হচ্ছে। এর মানে চাকরির সংস্থান কমবে এবং আয় কম হবে। ক্রমবর্ধমান চাকরির বাজারে তাই কোটা ব্যবস্থা সমালোচিত হতে বাধ্য। আর তাই ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট, রাজশাহী ও কুমিল্লার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে ছড়িয়ে পড়ে । ২০১৮ সালের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় শেখ হাসিনা সমস্ত কোটা বাতিল করেছিলেন। তবে আইনি চ্যালেঞ্জের পর ৫ জুন হাইকোর্ট কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল রাখে । এরপর সংসদে বিল এনে চাকরিতে কোটা বাতিলের জন্য সরকারকে জুনের শেষ পর্যন্ত সময় দেয় শিক্ষার্থীরা। হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল দায়ের করে যার চূড়ান্ত শুনানির জন্য ৭ আগস্ট তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এরপর জরুরি ভিত্তিতে সরকার শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন করে আদালতের কাছে । সরকারকে তাদের দেয়া চূড়ান্ত সময়সীমা শেষ হলে গত ১ জুলাই ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়। সূত্র : thequint