ডেস্ক রির্পোট:- কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারা দেশে হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত এবং তালিকা তৈরির কাজ করছে পুলিশ ও র্যাব। তালিকা ধরে সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন এই দুই বাহিনীর কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, চিহ্নিত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যারা ঢাকাসহ সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে এবং এতে যারা নির্দেশ দিয়েছে, ইন্ধন জুগিয়েছে, উসকানি দিয়েছে ও অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে, তাদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ, ভিডিও, স্থিরচিত্র দেখে এবং ‘সোর্সের’ (তথ্যদাতা) নিয়োগ করে জড়িতদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ইন্টারনেট–সংযোগ বন্ধ হওয়ার আগে যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনের পক্ষে উসকানিমূলক বক্তব্য (পোস্ট) দিয়েছে, তাদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অপারেশনস) মো. আনোয়ার হোসেন গতকাল বুধবার বলেন, পুলিশ সদর দপ্তর এখন হামলাকারী, নির্দেশদাতা, ইন্ধনদাতা, উসকানিদাতা ও অর্থদাতাদের তালিকা তৈরি করছে। তালিকা তৈরি করার পর তা পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিট ও জেলায় পাঠানো হবে। এরপর তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে যেসব ব্যক্তির নাম পাওয়া গেছে, তারা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, এখন সারা দেশে যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর পুলিশও (ডিএমপি) রাজধানীর ঘটনাগুলোতে জড়িতদের চিহ্নিত করে তালিকা তৈরির কাজ করছে। ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) লিটন কুমার সাহা বলেন, তালিকা ডিএমপির সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিভাগ পাঠানো হবে। সেটা ধরে অভিযান চালানো হবে।
ইতিমধ্যে থানা–পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে রাজধানীজুড়ে অভিযান চালাচ্ছে। গতকাল পর্যন্ত কেবল ডিএমপিতেই ১ হাজার ৭৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, তদন্তে হামলাকারী, নির্দেশদাতা, ইন্ধনদাতা, উসকানিদাতা ও অর্থদাতার নাম বেরিয়ে আসছে। তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষ চলাকালে বিএনপির নেতাদের অনেকের ফোনে কথোপকথনের রেকর্ড পেয়েছে পুলিশ। তাদের ধরতে দিন-রাত অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া অনেককে উসকানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করছে পুলিশ।
বিএনপি ও গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের অনেকের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তুলে নেওয়ার পর অনেককে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নেওয়ার নিয়ম থাকলেও কাউকে কাউকে অনেক পরে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও তালিকা তৈরি করেছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস বলেন, র্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন হামলায় অংশ নেওয়া ব্যক্তি, তাদের নির্দেশদাতা, অর্থদাতা ও উসকানিদাতাদের শনাক্ত করে তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকা ধরে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনার ছবি-ভিডিও ফুটেজ দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য গতকাল গণমাধ্যমকর্মীদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে অনুরোধ করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।
গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সহিংসতায় জড়িতদের সরকার সর্বশক্তি দিয়ে চিহ্নিত করবে। তাদের আইনের মুখোমুখি করা হবে।প্রথম আলো