ডেস্ক রির্পোট:- এনতাজ আলীর বয়স প্রায় ৬৫ বছর। গায়ের কাপড় খুলে একহাতে উঁচিয়ে ধরে বুক পানির ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। দেখে যে কেউ মনে করবে, বন্যার পানির কারণে তার এই অবস্থা। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রভাবশালীদের কারণে শুধু এনতাজ আলীই নয়, তার পরিবার সব সদস্যকে এভাবেই চলাচল করতে হচ্ছে। নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার খেলনা ইউনিয়নের উদয় শ্রী গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী এনতাজ আলীর অভিযোগ, প্রভাবশালীরা গত ৩ মাস ধরে তার পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তা না পেয়ে কখনও পুকুর দিয়ে সাঁতার কেটে, কখনওবা কলা গাছের ভেলা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাদেরকে। রাস্তা দিয়ে যাবার চেষ্টা করায় মারপিটেরও শিকার হয়েছেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে সুবিচার চেয়ে নওগাঁ কোর্টে মামলাও করেছেন এনতাজ আলী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উদয়শ্রী গ্রামের রোস্তম আলীর ছেলে এনতাজ আলী দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করেন। যাতায়াতের রাস্তাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট দ্বন্দ্বে গত রমজান মাসে প্রতিপক্ষ আব্দুল কাইয়ুম ও আব্দুল হাই গং ভুক্তভোগী এনতাজ আলীর বাড়ি থেকে বের হওয়ার দুই দিকের রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এমন পরিস্থিতিতে অবরোধ ভেঙে রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের চেষ্টা করেন তিনি। এতে তার ওপর নেমে আসে শারীরিক নির্যাতন।নিরুপায় হয়ে এনতাজ আলী তার বাড়ির সামনে থাকা সরকারি পুকুরে সাঁতার কেটে যাতায়াত শুরু করেন।
শুধু অবরুদ্ধ করেই প্রভাবশালীরা ক্ষান্ত হয়নি, তারা চলতি বছরের ২১ জুন দিনের বেলায় প্রতিপক্ষ আব্দুল কাইয়ুম ও পিয়ারা বেগমসহ অন্যান্যরা হামলা চালিয়ে এনতাজ আলীর স্ত্রী মতিজান বিবিকে বেধড়ক মারধর করে বাম হাঁটু ভেঙে দেয়। এরপর স্থানীয়রা মতিজানকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ সময় এনতাজ আলীর ভাঙচুরও করেন হামলাকারীরা। এ সময় তারা ধান বিক্রির ১ লাখ টাকাও নিয়ে যায় বলে অভিযোগ এনতাজ আলীর।
স্থানীয় সাইফুল ইসলামের স্ত্রী মোর্শেদা খাতুন বলেন, রাত ১০টা-১২টার সময় পুকুরে সাঁতার কেটে বাড়িতে যান এনতাজ আলী, যা একটি অমানবিক কাজ, আমরা গ্রামবাসীরাও এই অন্যায়ের ন্যায্য বিচার চাই।
একইভাবে বিচার চাইলেন এনতাজ আলী ও তার স্ত্রী মতিজান বিবি। তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে আমাদের চলাচলে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে তারা। আমাদের মারধর করেছে। আমরা খুব কষ্টে আছি।
এদিকে এনতাজ আলীর পরিবারকে অবরুদ্ধ করাসহ মারপিটের কথা স্বীকার করেছেন মো. আজাহার আলীর ছেলে আব্দুল কাইয়ুম। তিনি বলেন, মেম্বার-চেয়ারম্যানের নির্দেশেই রাস্তাটি বন্ধ করে দিয়েছি। অপরদিকে এনতাজ আলীর পরিবারকে অবরুদ্ধ করা ব্যক্তিদের অন্যতম আব্দুল হাইয়ের ছেলে সামিউল বলেন, নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল চলাকালে চেয়ারম্যান-মেম্বারের নির্দেশেই রাস্তাটি আমরাই ঘিরে দিয়েছি।
তবে খেলনা ইউপি চেয়ারম্যান আলহিল মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাদী ও অভিযোগকারীদের চলাচলের জন্য আমরাই পরিষদ থেকে কর্মসৃজন কর্মসূচির মাধ্যমে রাস্তা করে দিয়েছি। কিন্তু আমি বা আমরা কারও রাস্তা বন্ধ করিনি, তারা নিজেরাই একে অপরের দ্বন্দ্বে এমনটি করেছে, এতে আমাদের কোনো দায় নেই।
এ বিষয়ে ধামইরহাট ইউএনও আসমা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি শুনলাম ও নোট করে নিলাম। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।