কক্সবাজারে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে তিন লাখ মানুষ

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪
  • ১২১ দেখা হয়েছে

কক্সবাজারে এক যুগে পাহাড় ধসে নিহত ৩২৪ জন বেদখল ১৮ হাজার হেক্টর সরকারি বনভূমি

ডেস্ক রির্পোট:- কক্সবাজারে পাহাড়ে বসবাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা এই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস। গত এক যুগে পাহাড় ধসে নিহত হয়েছেন ৩২৪ জন মানুষ। এখনো ঝুঁকিতে পাহাড়ে বসবাস করছেন তিন লাখ মানুষ। এছাড়াও বেদখল হয়ে গেছে ১৮ হাজার হেক্টর সরকারি বনভূমি। অভিযোগ উঠেছে সরকারি বিভিন্ন দফতরগুলোর সমন্বয় হীনতায় থামানো যাচ্ছেনা পাহাড়ে এই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেদখল হওয়া বনভূমি কক্সবাজারের মোট বনভূমির এক তৃতীয়াংশের বেশী। এর বাইরে রোহিঙ্গারা দখল করেছে ৪ হাজার ৮৫৮ হেক্টর পাহাড়। সেখানে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস করছেন প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা। চলতি বর্ষার আগে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে সমতলভূমিতে আনা হয়নি। রোহিঙ্গাদের বাদ দিলে এ অঞ্চলে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, চিহ্নিত অপরাধী, এমনকি আরো প্রায় ৫০ হাজার পুরাতন ও নতুন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে পাহাড় দখল করে বসতি গড়ছে। শুধু তাই নয়, তারা বিক্রি করছে সরকারি পাহাড়ের দখলস্বত্বও। বসতি স্থাপনের জন্য কক্সবাজার অঞ্চলে কাটা হয় নির্বিচারে পাহাড়। বিশেষ করে বর্ষা এলেই শুরু হয় পাহাড়কাটার ধুম, লক্ষ্য ভূমি সমতল করে বসতি গড়া। এতে ঘটে পাহাড় ধসের ঘটনা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পরিসংখ্যান মতে, বিগত এক যুগে পাহাড় ধসে ৩২৪ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধস হয় ২০১০ সালের ১৫ জুন। এদিন রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকার ১৭ ইসিবি সেনা ক্যাম্পের ৬ সেনাসদস্যসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে প্রায় ৬২ জন প্রাণ হারায়। ২০০৮ সালের ৪ ও ৬ জুলাই টেকনাফে ফকিরামুরা ও টুইন্যার পাহাড় ধসে একই পরিবারের চারজনসহ ১৩ জন, ২০১২ সালে ২৬ ও ২৭ জুন পাহাড় ধসের ঘটনায় ২৯ জন। ২০০৯ সালে চকরিয়া, উখিয়া ও রামুতে ৫ জন, ২০১১-১৩ সালে পাহাড় ধসে মারা যায় ১৯ জন। ২০১৫ সালে কক্সবাজার শহরের রাডারের পাহাড় ধসে ৫ জন। ২০১৬ সালে ১৭ জন ও ২০১৭ সালে ২৬ জন। ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়ার বাঁচামিয়ার ঘোনা এলাকায় ২৮ জন, ২০১৯ সালে ২২ জন, ২০২০ সালে ১৫ জন, ২৭, ২৮ জুলাই ২ দিনে মারা যায় ১৪ জন। ২০২২ সালে ২৫ জন। সর্বশেষ চলতি বছর বর্ষার আগেই রামু টেকনাফে পাহাড় ধসে মারা যায় ৫ জন। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মারা যায় ২৮ জন। এবার বর্ষার শুরুতে গত ১৯ জুন ভোরে ৯, ১০, ৮ ও ১৪ নম্বর ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত হয় ১১ জন। গত এক যুগে প্রাণ হারিয়েছেন ৩২৪ জন মানুষ।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনছারুল করিম বলেন, প্রতি বছর কক্সবাজার জেলায় পাহাড় ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়না। শুধুমাত্র বর্ষা এলে কিছুটা চোখে পড়ে। বর্ষা চলে গেলে থেমে যায় সবকিছু। এর ফলে অনেকটা বাধাহীনভাবে চলছে কক্সবাজারের পাহাড় নিধন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব পাহাড় এবং পাহাড়ের পাদদেশের ভূমি জেলা প্রশাসনের ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ও বন বিভাগের মালিকানাধীন হলেও এসব জমির দখল-বেচাকেনা চলে সারা বছর। সরকারি জমি বেচাকেনা আইনত অপরাধ তবুও নোটারি পাবলিক কার্যালয় থেকে এসব খাস জমির দখল ও বেচাকেনা হয়। কতটা পাহাড়ি এলাকা অবৈধ দখলে আছে তা জানা গেলেও কি পরিমাণ খাস জমি অবৈধ দখলে রয়েছে তার সঠিক এবং সর্বশেষ পরিসংখ্যান নেই কোথাও।

কক্সবাজার বন বিভাগ সূত্র জানায়, জেলায় মোট বনভূমির পরিমাণ ৭৩ হাজার ৩৫৮ হেক্টর। এর মধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে ৯ হাজার ৬৫৭ হেক্টর। এসব জমি দখল করে বসবাস করছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। পাহাড়ি জমিতে বসবাস করছে ১৯ হাজার ৮২৬টি পরিবারের ৩ লাখ মানুষ। এরমধ্যে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। জেলার মোট জনসংখ্যা ২৭ লাখ।

কক্সবাজার জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা বলেন, জেলায় ১৫২ স্পটে এক হাজার ২৯৮ পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এবারের বৃষ্টিতে ঝুঁকিতে বসবাস করা লোকজনদের জোর করে আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হবে। পাশাপাশি কক্সবাজারের মহেশখালী, টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে যারা ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাস করছেন তাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। কক্সবাজারের বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ সভাপতি দীপক শর্মা দিপু বলেন, কক্সবাজার পৌরসভার অভ্যন্তরে ৬টি ওয়ার্ডে সবচেয়ে বেশি মানুষ ঝুঁকিতে বসবাস করছে। তাদের সরিয়ে আনাটা একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দরকার।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান জানান, পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করছে। কক্সবাজার পরিবেশ আন্দোলন (বাপার) সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, কক্সবাজারের পাহাড় সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করলে প্রতি বছর এতো প্রাণহাণির ঘটনা ঘটতো না। সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের চিহ্নিত করে বর্ষার আগেই তাদের পাহাড় থেকে নামিয়ে আনা উচিত। এ জন্য বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদফতর, জেলা প্রশাসন, পৌরসভা, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন একসাথে কাজ করলে বিষয়টি সহজে সমাধান করা যেত।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions