রাজনীতিতে নতুন মাত্রা

রিপোর্টার
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪
  • ৯৭ দেখা হয়েছে

তিস্তা ও রেল করিডোর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় তিস্তার ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সিদ্ধান্তে আমি অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত : ড. আইনুন নিশাত রেলওয়ে কানেক্টিভিটি ব্যবহার করে ভারত ৭ রাজ্যে পণ্য-অস্ত্র-সৈন্য আনা নেয়া করবে : ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তাচুক্তি করতে চাইলে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা কোনো বাধা নয় : ড. আসিফ নজরুল

ডেস্ক রির্পোট:- দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো খুবই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। গণমাধ্যমের মতো দায়িত্বশীল না হলেও এই মাধ্যমে (ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার, হোয়াটসআপ ইত্যাদি) মানুষ বাধাহীন ভাবে মত প্রকাশ করছেন, তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরছেন। এসব মতের সঙ্গে অনেকের ভিন্নমত এবং অনেক ভুল তথ্য নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কিছু কিছু সত্যতথ্য প্রকাশ পায়। পাশাপাশি নেটিজেনদের মতামতের মাধ্যমে দেশের আমজনতার মনোভাব, চিন্তাধারা-প্রত্যাশা-হতাশার প্রকাশ ঘটে। একজন নেটিজেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি বক্তব্য তুলে ধরে মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদ বদ কাব্যের ‘এতক্ষণে-অরিন্দম কহিলা বিষাদে’ লাইনটি তুলে ধরেছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে ভারতের কাছে পুরোপুরি জিম্মি করে দিচ্ছে।’ ওই নেটিজেনের বক্তব্য, ‘বিএনপি মহাসচিব দীর্ঘদিন পর ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপির মহাসচিবের এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক বিশ্লেষষকরা বলছেন,এবার রাজনীতি নতুন মাত্রা দেখা যাবে। এতোদিন ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো ভারতের আগ্রাসী ভুমিকার প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও বিএনপি থেকেছে নীরব। দেশের বিপুল জনসমর্থিত দল বিএনপির মহাসচিবের এমন বক্তব্য ভারতের আগ্রাসী নীতির প্রতিবাদী দলগুলোকে আরো উজ্জীবিত করবে। রাজনীতির পারদ নতুন মাত্রায় উঠবে।

প্রখ্যাত রাজনীতির মরহুম আনোয়ার জাহিদ বলেছিলেন, ‘বহু বছরেও বাংলাদেশের বন্ধু ভারত এমন প্রমাণ দিতে পারেনি। বাংলাদেশের নতজানু নীতি ভারতকে বেপরোয়া করে তুলেছে’। অপ্রিয় হলেও সত্য বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ভারতের থাবার মধ্যে চলে যাচ্ছে। কোন ভাবেই এই থাবা থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না রাজনৈতিক দলগুলোর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে। দেশের বৃহৎ তিনটি দল (আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি) দলীয় স্বার্থে নতজানু নীতি গ্রহণ করে ভারতকে খুশি করে থাকে। কেউ ক্ষমতায় দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়, কেউ ক্ষমতায় যেতে চায় আবার কেউ ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট খেতে চায়। ফলে ডান-বাম, মধ্যপন্থী ও ইসলামী তথা ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হলেও তারা কিছুই করতে পারছে না। ভারতের শাসক দল এতোই হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসী নীতিতে চলে যে বাংলাদেশ ছাড়া প্রতিবেশি কোনো দেশের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক নেই। নেপালের দেশপ্রেমি নেতারা ভারতকে কার্যত ‘সাইজ’ করেছে। মালদ্বীপের মতো ছোট্ট দেশ ‘হটাও ভারতীয় সেনা’ ঘোষণা দেয়ায় গত ১০ মে ভারতীয় সেনা বাহিনী মালদ্বীপ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর দিল্লি মুখাপেক্ষী রাজনীতির করণে ভারত জেঁকে বসেছে মাথার ওপর। গত দুই বছর ধরে দেশে ভয়াবহ ডলার সংকট। দেশের ব্যংকগুলোর টিকে থাকাই অনিশ্চিত হয়ে গেছে। আমদানি-রফতানি কমে গেছে এবং বিদেশেী বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা সংকুচিত করছেন ডলার সংকটের কারণে। অথচ গত ২৫ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, ‘গত ১০ মাসে ভারতীয়রা বাংলাদেশ থেকে ৫০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে’। বৈধ-অবৈধভাবে ভারতীয়রা বাংলাদেশে চাকরি করে এই ডলার নিয়ে গেলেও রাজনৈতিক দলগুলো নীরব। এমনকি হাইকোট পর্যন্ত জানতে চেয়েছে বাংলাদেশে কতজন ভারতীয় চাকরি করছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গত ১৫ বছরে কতগুলো চুক্তি ও সমঝোতা স্বারক সই হয়েছে তার পরিসংখ্যান নেই। দুই দেশের সরকার এসব তথ্য জনগণকে জানাতে চায় না। কিন্তু এসব চুক্তি ও সমঝোতায় বাংলাদেশের প্রাপ্তি কি? বিভিন্ন সময় ভারতের বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে জানিয়েছেন, ‘রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তি করে ভারতের স্বার্থ দেখা হলেও বাংলাদেশ কিছুই পাচ্ছে না। দিল্লির উচিত ঢাকার স্বার্থ দেখা’। ভারতের সাধারণ মানুষ মোদীর আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে ‘গণতন্ত্রহীন বাংলাদেশ’ দেখার বিপক্ষে। কিন্তু বড় দলগুলো ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে নির্বিকার। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে রেলপথে ট্রানজিট, করিডোর, ফেনি নদীর পানি, সড়ক পথে ট্রানজিট, চট্টগ্রাম ও মংলা পোর্ট ব্যবহারের সুযোগসহ অসংখ্য সুবিধা ভারত নিলেও বাংলাদেশ কার্যত কিছুই পায়নি। বরং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত তাদের পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। এতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ৯০ ভাগ খরচ কম হচ্ছে। বাংলাদেশের রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্টের ক্ষতি হচ্ছে। উজানে বাঁধ দিয়ে ভারত বাংলাদেশের নদীগুলো মেরে ফেলছে। ওদের বাঁধগুলো বাংলাদেশের ৫৪ নদীর জন্য হয়েছে মরন ফাঁদ। পরীক্ষামূলক ভাবে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে ৫০ বছরেও পরীক্ষা শেষ হয়নি। নদীগুলোর উজানে বাঁধ দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ দুই ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রথমত শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশ যথেষ্ট পরিমানে পানি পাচ্ছে না। আবার বন্যার মৌসুমে ভারত অন্যায় ভাবে বাঁধ খুলে দিচ্ছে বলে আমরা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে গরু-ছাগলের মত। বাংলাদেশীদের জীবনের যেন কোন দাম নেই। বাংলাদেশের চাষীদের নিজেদের জমিতে চাষ করতে না দেওয়া, ফসল কেটে নেওয়া, ফসল নষ্ট করা, ফসলে আগুন দেওয়া, ভারতীয় খাসিয়াদের বাংলাদেশের সীমান্তে এনে বাংলাদেশের জমি চাষ করানো, ইত্যাদির মত অত্যাচার নিয়মিতই করে যাচ্ছে। ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো এসবের প্রতিবাদ করলেও বড় দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নীরব থাকছে। ২০২১ সালের আগষ্ট মাসে চট্টগ্রামে একটি পুজাম-বে সবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার ভারতকে করতে হবে। ভারতের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে হবে’। গত ৭ জানুয়ারির ডামি প্রার্থীর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ভারত পাশে ছিল বলেই নির্বাচনে বিরোধী শক্তিগুলো ঝামেলা করতে পারেনি’। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় ভারত যেভাবে আওয়ামী লীগের পাশে ছিল আগামীতেও সে ভাবে থাকবে’। আওয়ামী লীগের তিন নেতার এসব কথায় বোঝা যায় ভারতের আগ্রাসী কর্মকা-ের আওয়ামী লীগ কেন নীরব থাকে। কিন্তু মাঠের বিরোধী দল বিএনপি? দেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ জন সমর্থিত বিএনপির ভুমিকা কি? দিল্লি রুষ্ট হলে ক্ষমতায় যাওয়া অনিশ্চিত সে আশঙ্কা থেকে ‘ভাসুরের নাম মুখে নিতে নেই’ প্রবাদের মতো সীমান্ত হত্যাসহ ভারতের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে কোনো শব্দ করেনা? বিএনপির নেতৃত্বের নতজানু মানসিকতা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বিপুল জনসমর্থিত দলটিকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছে। দলটি খ-বিখন্ড করার লক্ষ্যে সরকার নানান অপকর্ম করেছে, মন্ত্রী-এমপি করা লোভ দেখিয়েছে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মামলা দিয়েছে। সরকারের জুলুম নির্যাতনের মুখে মাঠ পর্যায়ের নেতারা গ্রেফতার এড়াতে জঙ্গলে, ধানক্ষেতে, মাঝনদীতে নৌকায় ঘুমিয়েছে, বাসায় থাকতে না পেরে তরুণ ও যুবক নেতারা দেশান্তর হয়ে অন্য শহলে গিয়ে রিক্সা, সিএনজি, বাইক চালিয়ে জীবনধারণ করছেন। কিন্তু নেতৃত্বের শত্রুমিত্র চিনতে না পারার ব্যর্থতা, নতজানু মানসিকতা, বার বার ভুল সিদ্ধান্ত দলটিকে দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকতে হচ্ছে।

গত ২১ জুন বাংলাদেশও ভারতের মধ্যে ১০ দফা চুক্তি ও সমঝোতা স্বারক সই হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের মধ্যে হৈচৈ পড়ে গেছে। বিশেষ করে চীনের সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘তিস্তা প্রকল্প’ থামিয়ে দিয়ে দিল্লির তিস্তা নদী নিয়ে সমীক্ষা করবে এবং রেলওয়ে কানেক্টিভিটি’র সিদ্ধান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতকে দেয়া বাংলাদেশের রেল করিডোর ভারতের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে, তাদের যোগাযোগ সহজ করবে। এতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। চীনের তিস্তা মহাপ্রকল্প নিয়ে দিল্লির বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষন উত্তরাঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষের স্বপ্ন ধ্বংস করবে। তিস্তা নদী নিয়ে ভারতের সঙ্গে নতুন সমঝোতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। দু’দিন আগে এক ওয়েবিনারে তিনি বলেছেন, ‘তিস্তার ক্ষেত্রে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাতে আমি অত্যন্ত লজ্জিত ও দুঃখিত। সেখানে বলা হয়েছে তিস্তার বাংলাদেশের যে অংশ সে অংশের পানি ব্যবস্থাপনা ও পানি সংরক্ষণে দুই দেশের কারিগরি দল কথাবার্তা বলবে। বলা হচ্ছে আমরা ড্রেজিং করলে সমাধান হবে। কিন্তু ড্রেজিং করলেতো পানি উৎপাদন হবে না। এধরণের সিদ্ধান্ত খুবই দু:খজনক।’

ফারাক্কা চুক্তি নবায়ন ও তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করে মমতা ব্যানার্জির ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেয়া চিঠি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অনীহার কারণেই তিস্তাচুক্তি হচ্ছে না। ভারতের সংবিধান দেখলে দেখতে পাবেন যে আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পূর্ণভাবে ফেডারেল সরকারের আওতাভুক্ত। সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আপত্তি থাকলে ভারত সরকার চুক্তি করতে পারবে না এটা যারা মনে করেন তাদের ফেডারেল গভর্নমেন্ট সম্পর্কে ধারণার অভাব আছে। মূলত চুক্তিটা হচ্ছে না ভারত সরকারের কারণে, কোনো রাজ্যের সরকারের জন্য না। বাংলাদেশের সাথে ভারতের ৫৪ অভিন্ন নদী রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি নদীর ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে পূর্ণ চুক্তি রয়েছে। এর বাইরে অন্যান্য নদী নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু কোনো চুক্তি হয়নি। এমনকি তিস্তা নিয়ে ১৯৮৪ সালের আগ থেকে আলোচনা চলছে কিন্তু আজ পর্যন্ত হয়নি। ২০১১ সালে একটা চুক্তি হয়ে যাচ্ছিল কিন্তু হয়নি।

ভারতের আগ্রাসী নীতির কারণে দেশটির সঙ্গে প্রতিবেশি কোনো দেশের সুসম্পর্ক নেই। পাকিস্তানের সঙ্গে সাপে নেউলে সম্পর্ক। আফগানিস্তান শত্রুরাষ্ট্র মনে করে ভারতকে। চীনের সঙ্গে সংঘাত-সংঘর্ষ আর যুদ্ধের সম্পর্ক। ভুটানের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক নেই। নেপাল প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে বিবদমান লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখ অঞ্চলকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছে। ২০২০ সালের ৮ মে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং উত্তরাখন্ডের ধারচুলা থেকে চীন সীমান্তঘেঁষা লিপুলেখ পর্যন্ত ৮০ কিমি দীর্ঘ একটি রাস্তার উদ্বোধন করলে ওই বছরের ১৩ জুন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির নেতৃত্বাধীন পার্লামেন্টে ভারতের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে বিবদমান লিম্পিয়াধুরা, কালাপানি ও লিপুলেখ অঞ্চলকে নিজেদের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।

মালদ্বীপের নির্বাচনে ভারতপন্থী নেতাকে হারিয়ে চীনপন্থী নেতা মোহামেদ মুইজ্জু বিজয়ী হয়ে প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েই ‘ভারতীয় সৈন্য হটাও’ ঘোষণা দেন। ভারতের দেওয়া তিনটি পরিদর্শন বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারতীয় সৈন্য মালদ্বীপে অবস্থান করছিল। কিন্তু ১০ মে ভারত সৈন্য ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। নেপাল ও মালদ্বীপের মতো সাহসী নেতা বাংলাদেশে নেই। সীমান্ত হত্যাসহ ভারতের বিভিন্ন্ আগ্রাসী কর্মকা-ের প্রতিবাদে সিপিবি, জাসদ, বাসদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদসহ ছোট ছোট ডান-বাম-ইসলামী দলগুলো প্রতিবাদী হয়ে উঠেন। কিন্তু বড় দলগুলো নীরবতা পালন করেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘অনুগত’ দল হওয়ায় দিল্লির অপকা-ের প্রতিবাদ করেন না। আর বিএনপি ‘ক্ষমতায় যেতে দিল্লি বাঁধার কারণ হয়’ এই ভয়ে সমঝে চলে। প্রায় প্রতি সাপ্তাহেই সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বাংলাদেশীদের হত্যা করছে। কিন্তু গত ১০ বছরে কোনো হত্যাকা-ের কঠোর প্রতিবাদ বিএনপি করেছে এমন দেখা যায়নি। দেরিতে হলেও বিএনপি নেতাদের বোধদয় হয়েছে। ২১ জুন দিল্লিতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ১০ দফা চুক্তি ও সমঝোতা স্বারকে উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল এক সেমিনারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। যেসমস্ত চুক্তি করা হয়েছে, সমঝোতা করা হয়েছে সেগুলো বাংলাদেশের পক্ষে নয়। যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে তিনি আবার আমাদেরকে সবক দেন। সবক কি রকম? আমরা নাকি চুক্তি আর সমঝোতার মধ্যে পার্থক্য বুঝি না। আমাদেরকে উনি পড়াশুনা করবার জন্য পরামর্শ দেন। আমি শুধু একটা কথাই বলতে চাই, দেশের সঙ্গে বিদ্রোহ করবেন না, বেঈমানি করবেন না। মানুষকে বোকা বানিয়ে, তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে এমন চুক্তি করার সাহস করবেন না, এমন কোনো সমঝোতা স্মারক সই করবেন না যেটা আমার দেশের আমার জনগনের স্বার্থের বিরুদ্ধে।’ তিনি বলেন, ‘কি এনেছেন এবার ভারত সফরে গিয়ে? তিস্তার পানি বন্টনের চুক্তি করে পারেননি। কি করেছেন? তিস্তা প্রকল্পের জন্য ভারত প্রস্তাব দিয়েছে, চীনও দিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, যে আমরা দুইটার মধ্যে দেখেেবা কোনটা ভালো হয়। আবার সব শেষে একথা বলেছেন, ভারত যে প্রস্তাব দিয়েছে তাদেরকে যদি আমরা কাজটা দেই তাহলে আমাদের পানির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা সব বোকা মানুষগুলো এদেশে বাস করি। আপনি তিস্তার পানি যে সমস্যা সেটাকে আপনি বাতিল করে দিলেন, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বন্টনের সমস্যাই রয়ে গেলো। দেশকে ভারতের কাছে পুরোপুরি জিম্মি করে দিচ্ছেন। পৃথিবীর কোন বন্ধু দেশ আছে আপনারা এতো বন্ধুত্ব যে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধুত্ব আপনারা বলেন, তাহলে কোন বন্ধু দেশ আছে তার সীমান্তে বন্ধুরা গুলি করে হত্যা করে তার বন্ধুদেশের মানুষকে। এর জবাব আপনাদের দিতে হবে।’

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ১০ দফা চুক্তি ও সমঝোতা স্বারকে বাংলাদেশ কিছু পায়নি বরং সার্বভৌতত্বকে হুমকির মুখে ফেরা হয়েছে। রেলওয়ে কানেক্টিভিটি চুক্তির মধ্যদিয়ে ভারত তাদের ৭ রাজ্যে পণ্যের পাশাপাশি অস্ত্র, সৈন্য আনা নেয়া করবে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে। চায়নার তিস্তা প্রকল্পে বাগড়া দিয়েছে ভারত। তিস্তা প্রকল্প যাতে না হয় সে জন্যই ভারত কৌশল করে তিস্তা নদীর পানি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে চায়। আর বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের টার্গেট দেশের সর্বনাশ হোক আপত্তি নেই; ভারত তাদের ক্ষমতায় রাখবে সেটাই তাদের প্রাপ্তি।ইনকিলাব

পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো
© All rights reserved © 2023 Chtnews24.com
Website Design By Kidarkar It solutions