ডেস্ক রির্পোট:- দ্বাদশ সংসদের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের রেকর্ড গড়েছেন। আগামী ৮-১১ জুলাই চীন সফরের যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশন শেষে এবং চীন সফরের পর আওয়ামী লীগ সরকার মন্ত্রিসভায় রদবদল এবং সম্প্রসারণ হতে পারে। আসতে পারেন নতুন মুখ। নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এরকম পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
সুত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান মন্ত্রিসভার আকার বাড়ছে। অর্থ, পরিকল্পনা, স্থানীয় সরকার-বাণিজ্য- তথ্যসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে রদবদল হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে সরকার দলীয় নেতাদের মাঝে জোর গুঞ্জন ও আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম ব্যর্থতা এবং দলীয় নির্দেশনা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয়-স্বজনদের প্রার্থী না করার কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করায় প্রধানমন্ত্রী তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ। শুধু নয়, অনেকের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের অবজ্ঞা এবং নানারকম দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে। সরকারী দলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা রাজনৈতিক ভাবে বিরোধীদলকে মোকাবেলা, পশ্চিমা দেশগুলোকে মোকাবেলাসহ সবকিছুর জন্য মন্ত্রিসভায় রদবদল আসতে পারে। এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব হজে থাকার কারণে বক্তব্য নেয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন,মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন আমরা শুনতেছি। তবে এখনো তারিখ ঠিক হয়নি।
মন্ত্রিসভার কয়েকজন সিনিয়র সদস্য, আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতা এবং ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তারা বলেছেন, মন্ত্রিসভার আরেক দফা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে কয়েক দিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। চীন সফরের পর এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। কয়েকজন নতুন মুখ সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারেন। তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কয়েক নেতার নামও রয়েছে। এর বাইরে অর্থ, পরিকল্পনাসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে রদবদল হতে পারে। তাতে বর্তমান মন্ত্রিসভার কারও কারও পদোন্নতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় আওয়ামী লীগ।
সুত্রের দাবি, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালামকে অন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। প্রবীন এই দুই আমলা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মন্ত্রণালয় সামলাতে দক্ষতার পরিচয় দিলেও, বয়সজনিত কারণে তাদের অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়া হতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে স্থানীয়সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামকে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে সরিয়ে পূর্ণ মন্ত্রী দেয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী দেয়া হতে পারে।
গত ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এরপর ১ মার্চ সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সাতজন। এতে প্রধানমন্ত্রীসহ বর্তমান মন্ত্রিসভা দাঁড়ায় ৪৪ জনে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ২৫ মন্ত্রী ও ১৮ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে টেকনোক্রাট কোটায় মন্ত্রী আছেন দু’জন।
জানতে চাইলে দায়িত্বশীল নেতাদের প্রায় সবাই একবাক্যে বলেছেন, মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ কিংবা রদবদলের এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। জাতীয় সংসদে বাজেট অধিবেশন ও চীন সফরের মন্ত্রিসভায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীই এটি গঠন করবেন।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ সম্প্রসারিত মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারেন। বিশেষ করে দলের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষপদে থাকা ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু’জনের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে কেউ বাদ পড়ছেন না। তারপরও মন্ত্রিসভার কারও কারও মধ্যে এক ধরনের দুশ্চিন্তা কাজ করছে। আবার প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ পেতে পারেন পদোন্নতি। অন্তত একজন প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে। সূত্র আরও জানায়, ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে থেকে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত নীতিনির্ধারক নেতারা জানিয়েছেন, বর্ধিত মন্ত্রিসভায় ক্লিন ইমেজ ও অভিজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দলের ত্যাগী নেতারা প্রাধান্য পেতে পারেন। তবে প্রবীণ ও তারুণ্যের সমন্বয় রাখা হলেও এগিয়ে থাকবেন একাধিকবার নির্বাচিত এমপিরা। গত ২০০৮ সালে নবম, ২০১৪ সালে দশম সংসদের মতো ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বার সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। দ্বাদশ সংসদের মাধ্যমে চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।