বান্দরবান:- বান্দরবানে পর্যটন শিল্পের বিকাশে কোটি টাকা ব্যয়ে টানেল নির্মাণ করা হলেও বছর না যেতেই টানেলের দেয়াল ফেটে চুয়ে চুয়ে পানি পড়ছে। বেশ কয়েকটি স্থানে দেয়াল ফেটে পানি চুয়ে পড়ার ফলে সড়কে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব তৈরি হওয়ার পাশাপাশি টানেলটি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এছাড়া পাহাড়ের মাঝে নির্মিত টানেলটিতে পাহাড় থেকে মাটি ধস ও পানি পড়ার কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গাফিলতির কারণ বলে অভিযোগ করেন তাদের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, টানেলটি তৈরি করার পর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। উদ্বোধনে পর টানেলটির সুন্দরভাবে দেখা গেলেও পরবর্তীতে সেই চিত্র পাল্টে যায়। দীর্ঘদিন ধরে টানেলের ভিতরে রাখা হচ্ছে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। এই টানেলের সড়ক দিয়ে হাজারো মানুষ চলাচল করে থাকে। টানেলের ভিতর বাস রাখার কারণে সড়ক সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পথচারীরা। আর সেই সাথে দেয়াল ফেটে পানি চুয়ে পড়ার কারণে টানেল ধসে পড়ার আতঙ্কে রয়েছে তারা। কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকার কারণে এমন দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত ৫০০ ফুট লম্বা টানেল সড়ক নির্মাণের কার্যাদেশ পেয়েছিলেন রাজু কন্সট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার রাজু বড়ুয়া। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কাজটি শুরু হলেও দুই দফায় অর্থ বরাদ্দের পর ২০২০ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তৃতীয় দফায় অর্থ বরাদ্দের পর নির্মাণকাজ শেষ হয় গতবছর। এরপর ২৭ অক্টোবর টানেল সড়কের ফলক উন্মোচন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমানে স্থায়ী কমিটির সভাপতি বীর বাহাদুর ঊ শৈ সিং ,এমপি। কিন্তু উদ্বোধনের এক বছর পার না হতেই টানেলের দেয়াল ফেটে বিভিন্ন স্থান থেকে পানি চুয়ে পড়ার এমন দুর্দশার চিত্র দেখা মিলেছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টানেলের ভিতরে রাখা হয়েছে বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন। টানেলের দু’পাশে দেয়াল ফেটে বিভিন্ন স্থান থেকে পানি চুয়ে পড়ছে। পানি পড়ার কারণে সড়কে জমা হয়েছে কাদামাটি এবং কার্পেটিং সড়কও গর্তে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, টানেল উপর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় ধসে পড়ছে মাটি মিশ্রিত পানি। এতে করে সৌন্দর্য হারানোর পাশাপাশি টানেলটি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বাস চালক আব্দুর শুক্কুর বলেন, ‘বাস টার্মিনালের কাজ শেষ না হওয়ায় যানবাহনগুলো টানেলের ভিতরে রাখতে হচ্ছে। এছাড়া কোথাও গাড়ি রাখার স্থান নেই। আর দেয়াল থেকে পানি চুয়ে পড়ার কারণে সড়কে কাদা ও স্যাঁতস্যাঁতে ভাব তৈরি হয়েছে। কখন যে দেয়াল ধসে পড়ে সেই চিন্তায় আছি।’
এ সড়কের পথচারী আবু সালেহ ও তোফায়েল বলেন, ‘টানেলের চারিদিকে গর্ত হওয়ার কারণে দেয়াল ফেটে পানি চুয়ে পড়তে থাকে। যার ফলে সড়কে কাদামাটিতে পরিণত হয়ে ভিজে থাকে। ফলে পথচারীরা চলাচলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে রাজু কন্সট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার রাজু বড়ুয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটি শেষ করে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আর টানেল নির্মাণের সময় এর উপর দিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য কোন ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ ছিল না। তবে দেয়াল ফেটে পানি চুয়ে পড়ার বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী ভালো করে বলতে পারবে।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উপ-প্রকৌশলী এরশাদ বলেন, টানেলের ভেতর যেখানে জয়েন্ট করা হয়েছে সেখান থেকে পানি চুয়ে পড়ছে। আর পানি জমাট হওয়ার কারণে সড়কে গর্ত হয়েছে। আর এতে কোন সমস্যা হবে না বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বীন ইয়াছির আরাফাতের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।